এস এম রাফি ৫ মে ২০২৩ , ৭:৪৭ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
জহির রায়হান কাউনিয়া(রংপুর)প্রতিনিধিঃ-
চাঁই দেশীয় পদ্ধতিতে বাঁশের তৈরি মাছ ধরার যন্ত্র।বরর্ষা মৌসুমের এর কদর ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। শ্রমিক, কৃষক, মৎস্যজীবী থেকে শুরু করে সৌখিন মাছ শিকারীরাও চাঁই কিনে বর্ষার পানিতে মাছ ধরেন। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও চাঁইয়ের চাহিদা বেড়েছে রংপুরের কাউনিয়ায়। চাঁই তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা। কেনাবেচাতেও লেগেছে ধুম। কাউনিয়া উপজেলার তফিকল, টেপামধুপুর,খানসামা, বাংলা বাজার, চর একতাসহ বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে। হাট বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা- বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাউনিয়া উপজেলার মাঝে দিয়ে ২টি নদী ও বহু খাল-বিল, ডোবা-নালা, দোলা থাকায় বর্ষা মৌসুমে দেশী মাছ ধরার জন্য বাঁশের তৈরী প্রচীন চাঁই ব্যবহার করা হয়। ফলে বর্ষা মৌসুমে এ শিল্পের সাথে জড়িতদের আয়ও অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ।
কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের ভূতছাড়া গ্রামের মৎস্যজীবী দেলোয়ার হোসেন জানান, চাঁই দিয়ে মাছ ধরলে খরচ কম। অল্প দামে চাই কিনে সারা বছরই মাছ আহরণ করা যায়। নাজিম উদ্দিন জানান, গত বছরে ২২০ টাকা দিয়ে একটি চাঁই কিনেছিলাম। এখনো সে চাঁইটি রয়েছে। বর্তমানে আরো দুই থেকে তিনটি চাঁই আমার প্রয়োজন। প্রতি বছরে আমরা চাঁই দিয়েই মাছ ধরি। কাউনিয়া উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি ভোলা মেম্বার জানান, গ্রাম অঞ্চলে সাধারণত চাঁইয়ের ব্যবহার খুব বেশি। গ্রামের লোকজন চাঁই দিয়ে মাছ ধরতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। চাঁইয়ের মাছ আরতে আসলেই খুব সহজেই তা বিক্রি করা যায়। কুর্শা ইউনিয়নের পূর্ব চানঘাট গ্রামের চাই তৈরির কারিগর স্বাধীন মিয়া জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমকে কেন্দ্র করে প্রায় এক লক্ষ টাকার ব্যবসা করেন তারা বর্ষা মৌসুম মিলেই তার আগে থেকেই তাই তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পরেন। কাউনিয়া উপজেলায় চাঁই তৈরির যে কয়েকজন কারিগর রয়েছে এই সময়টাতে ব্যস্ত সময় পার করেন। সরকারিভাবে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য সহজ শর্তে ঋণেরও আশা করছেন তারা। টেপামধুপুর হাটে কথা হলে নজরুল ইসলাম নামের এক কৃষক জানান, বর্ষার নতুন পানিতে ও নদীতে মাছ ধরার জন্য চাঁই বেশ উপযোগি। এচাইয়ের দাম একটু বেশি তবু ছাড়াও বর্ষায় খাল বিলে দেশী কারেন্ট জাল ব্যবহার না করে মাছের প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যায়। গ্রামের মৎস্য শিকারীরা দেশীয় সুস্বাদু মাছ ধরার জন্য পানিতে পাতে নানা রকমের ফাঁদ। আর মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে বাঁশের তৈরী চাঁইয়ের জুড়ি নেই। তাই বর্ষা এলে চাঁইয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। মানুষ চাঁই দিয়ে মনের আনন্দে স্বাচ্ছন্দ্যে মাছ শিকার করতে পারে।
কথা হলে চাঁই তৈরীর কারিগর রফিকুল ইসলাম জানায়, সারাবছরে তেমন চাহিদা থাকে না, বর্ষা মৌসুমে এর খুব চাহিদা বাড়ে। বিশেষ করে যে বছর বন্যা হয়, সে বছর প্রচুর চাহিদা থাকে। চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশী চাঁই তৈরী করেছে বলেও জানান তিনি। উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুব উল আলম জানান, মাছ ধরার জন্য সাধারণত যেসব জিনিস ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে অতি প্রাচীনতম জিনিস হচ্ছে এই চাই। গ্রামগঞ্জের নদী-নালা ও খাল বিলে মাছ ধরতে চাইয়ের ব্যবহার ব্যাপক। চাই দিয়ে যে মাছগুলো ধরা হয় তা সহজে নষ্ট হয় না বলে গ্রামগঞ্জে এর প্রচলন বেশি।