আতাউর রহমান বিপ্লব, কুড়িগ্রাম ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৫:৪৪ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামে দিন দিন চীনের বেইজিং বা পেকিন জাতের হাঁস পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মাংস উৎপাদনের পাশাপাশি গ্রামীণ বেকার অনেকের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে এই পেকিন হাঁস। সৃষ্টি হয়েছে নারী-পুরুষ নতুন নতুন কর্মসংস্থান।
জেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলায় প্রায় ৬হাজার হাঁসের খামার রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৬শতাধিক খামারী পেকিন জাতের হাঁস পালন করছেন।
সরেজমিনে দেখাযায়,কুড়িগ্রাম রাজারহাট উপজেলার টগরাইহাট মাধাই গ্রামের মীর মোশাররফ হোসেন পেশায় একজন খামারী আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে উঁচু মাচায় গড়ে তুলেছেন চীনের পেকিন জাতের হাঁসের খামার। এই জাতের হাঁস মূলত মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। পেকিন হাঁস দেখতে আকর্ষণীয় এবং অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল। সঠিক পরিচর্যা এবং সুষম খাবারের মাধ্যমে মাত্র ৩০থেকে ৪৫দিনের মধ্যেই প্রতিটি হাঁস গড়ে তিন থেকে চার কেজি ওজনের হয়। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে এক হাজার পেকিন হাঁস। দেশ জুড়ে এই হাঁসের চাহিদা থাকায় বাজারজাত করছেন অনলাইনের মাধ্যমে ঢাকা,কুমিল্লা,বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন প্রান্তে। দ্রুত বর্ধনশীল হাঁস পালন করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় এই হাঁস পালনে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। নিজের ভাগ্যের পরিবর্তনের সাথে এলাকার অর্ধশতাধিক গরিব নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। অথচ তিনি একসময় এই খামারের ব্যবসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ছিলেন।
খামারী মীর মোশাররফ হোসেন বলেন,ব্যাংক লোন নিয়ে ২০২২সালে ১০হাজার ব্রয়লার মুরগীর পালন শুরু করেন। এরমধ্যে বার্ড ফ্লু রোগে আক্রান্ত হয়ে তার সব মুরগি মারা যায়। খামারের ব্যবসায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ক্ষোভে খামারটি বন্ধ ফেলেন। পরে বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশের পেকিন হাঁসের একটি সাইনবোর্ড দেখে আবারও উদ্বুদ্ধ হন। এরপর ওই সংস্থার সহায়তায় পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ১শ হাঁস দিয়ে শুরু করেন খামারের ব্যবসা। নতুনভাবে আবারও শুরু হয় খামার ব্যবসার পথচলা। পেকিন হাঁসের ব্যবসা করে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হবার পাশাপাশি তিনি এলাকার মানুষেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন।
নারী শ্রমিক রহিমা বেগম বলেন,সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে গ্রামের ২৫/৩০জন মহিলা খামারে কাজ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে ২/৩দিন করে কাজ করা যায়। খামারে দিন মুজুরি হিসেবে ৩শ টাকা এবং চুক্তি ভিত্তিক হাঁস প্রতি ২৫/২৭টাকা পাওয়া যায়। পেকিন হাঁস পালন শুরু হওয়ায় গরিব সংসারে অনেক অভাবও দূর হয়েছে।
আরডিআরএস বাংলাদেশ কৃষি ইউনিট টিম লিডার বিদ্যুৎ কুমার সাহা বলেন,সমন্বিত কৃষি ইউনিট বিভাগ হতে কুড়িগ্রাম সদর-রাজারহাট উপজেলায় ৭৫জন খামারীকে আর্থিক স্বাবলম্বীকরনে খামারি সেবা প্রদান করা হয়। এতে করে জেলায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবার পাশাপাশি প্রাণীখাতে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। আগামীতে জেলায় খামারীর সংখ্যা আরও সম্প্রসারণ করা হবে।
রাজারহাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.রহমত আলী বলেন,দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় বে-সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাও ভূমিকা রেখে চলেছে। খামারীদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করতে কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।