সারাদেশ

কুড়িগ্রাম-৪: এগিয়ে ‘নৌকা’, ঘাটি উদ্ধারে তৎপর ‘লাঙ্গল’, ছাড়দিতে নারাজ ‘ঈগল’

  নিজস্ব প্রতিবেদক ৫ জানুয়ারি ২০২৪ , ৬:৫৬ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

কুড়িগ্রাম-৪ (চিলমারী,রৌমারী,রাজিবপুর) আসনে নির্বাচনে এগিয়ে নৌকা প্রতিক, ঘাটি উদ্ধারে তৎপর রয়েছে ‘লাঙ্গল’, তবে আসন ছাড় দিতে রাজি নয় ‘ঈগল’ প্রতিক প্রার্থী।

এই আসনে আসনে ভোটের লড়াইয়ে ১১জন প্রার্থী রয়েছেন। এই আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব হাসান পলাশকে আ.লীগ নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দিয়েছে। প্রার্থী হিসেবে তিনি অন্যদের তুলনায় কম বয়সের হওয়ায় তরুণ যুবক ভোটারদের কাছে তিনি বেশ জনপ্রিয়। ইতিমধ্যে তিনি নির্বাচনী মাঠে মিছিল, মিটিং করে কিছুটা ভোটের আমেজ নিয়ে এসেছেন। 

তবে ওই আসনে আওয়ামীলীগের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে তাঁকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শ‌হিদুল ইসলাম শালু ট্রাক প্রতীকে, রৌমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও যাদুরচর ইউনিয়নের আওয়ামী লী‌গের সাবেক সভাপ‌তি মো. ম‌জিবর রহমান বঙ্গবাসী ঈগল প্রতীকে, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফারুকুল ইসলাম ফারুক ঢেঁকি প্রতীক নিয়ে ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

কুড়িগ্রাম-৪ আসনের রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলা সরেজমিনে ঘুরে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থী ও কর্মীসমর্থকদের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে, বাড়িতে উঠান বৈঠক এবং হাট বাজারে জনসংযোগ করতে দেখা যায়। এসময় প্রার্থীদের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন তুলে ধরার পাশাপাশি নির্বাচিত হলে ব্রম্মপুত্র নদের বামতীর সংরক্ষন, দেওয়ানগঞ্জ থেকে রৌমারী রেল লাইন স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, রাস্তাঘাট উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা গেছে।

এসব এলাকার ভোটার ও নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪০৩ জন। ব্রহ্মপুত্র নদের এপাড়ে চিলমারী উপজেলায় ১ লাখ ৭ হাজার ৮৬৬, রৌমারী উপজেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫২৯ এবং রাজীবপুর উপজেলায় ৬৪ হাজার ৮ জন ভোটার রয়েছে। এই আসনে মোট ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে চিলমারী উপজেলার দুইজন, রাজীবপুর উপজেলা থেকে দুইজন এবং রৌমারী উপজেলা থেকে ৭ জন প্রার্থী রয়েছে।

 কুড়িগ্রামের এই আসনে ব্রহ্মপুত্র নদের এপাড় ও ওপাড়ে সংসদ সদস্য গঠন বিষয়ে ভোটারদের মধ্যে একধরণের রেওয়াজ রয়েছে। রৌমারী উপজেলায় একজন দলীয় প্রার্থী থাকার পরেও আওয়ামীলীগ স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীসহ মোট ৭জন প্রার্থী হওয়ায় তাঁদের ভোট কিছুটা ভাগাভাগী হবে বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন।

অন্যদিকে চিলমারী উপজেলা ও রাজীবপুর উপজেলায় প্রার্থী সংখ্যা কম থাকায় তাঁরা আঞ্চলিক জোট গঠন করে নিজ উপজেলায় সংসদ সদস্য বানাতে পারবে বলে কয়েকজন প্রার্থী জানায়। সবধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা: ফারুক। তিনি আঞ্চলিকতা এবং তাঁর ব্যক্তিগত ইমেজকে কাজে লাগাচ্ছেন।

যাদুরচর ইউনিনয়ন আওয়ামী লী‌গের সাবেক সভাপ‌তি মো. ম‌জিবর রহমান বঙ্গবাসীকেও ওই আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভোটাররা হিসেব করছেন। তিনি যাদুরচর ইউনিয়নের সাবেক সফল চেয়ারম্যান এবং রৌমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। 

ফলে রৌমারী উপজেলার ছয় ইউনিয়নের মধ্যে শৌলমারী ,দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন,রাজীবপুর উপজেলার তিন ইউনিয়নের মধ্যে কোদালকাঠি ইউনিয়নে তাঁর ভোটব্যাংক রয়েছে বলে জানা যায়। রৌমারী সরদ ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সালু অন্যদের চেয়ে একটু এগিয়ে থাকবেন।

এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ কে এম সাইফুর রহমান ভোটারদের কাছে ততোটা পরিচিত মুখ না হলেও প্রচার প্রচারণায় বেশ সরব আছেন। জাতীয় পার্টির ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক কর্মী তাঁর নাম শুনলেও চোখে দেখেনি বলে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়।

অন্যদিকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বিপ্লব হাসান পলাশের চিলমারী উপজেলায় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী ও সমর্থক ছাড়াও সাধারণ ভোটার সমর্থক থাকার কারণে ভোটের মাঠে তিনি এখন অনেকটাই এগিয়ে আছেন।

রৌমারী উপজেলায় চর শৌলমারী ইউনিয়ন, বন্দবেড় ইউনিয়নে ও রাজীবপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নে দল মত নির্বিশেষে তাঁর একক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিশেষ করে রাজীবপুর সদর ইউনিয়নের বিএনপি সমর্থিত লোকজনও তাঁকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন বলে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়।

আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বিপ্লব হাসান পলাশ  জানান, নির্বাচনের মাঠে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ছোট করে দেখতে নেই। যারা ভোটে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই যোগ্য ব্যক্তি। শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত যারা নির্বাচনের মাঠে সংগঠিতভাবে কাজ করতে পারবে তারাই জয়ী হবে।সেদিক বিবেচনায় আওয়ামীলীগ একটি সংগঠিত দল এবং এই দলের বিভিন্ন উইং একসাথে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছে তাই জয় আমাদেরই হবে। এ আসনে জনগণ আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে আছে।

সাধারণ মানুষ বলছে ২৮ কুড়িগ্রাম -৪ আসনে নৌকার সঙ্গে লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর।