এস এম রাফি ৮ নভেম্বর ২০২৩ , ৪:২২ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
আতাউর রহমান বিপ্লব, কুড়িগ্রাম: কে শুনবে গাছের বোবা কান্না? বিজ্ঞাপন আর রাজনৈতিক প্রচারণায় ছেয়ে গেছে কুড়িগ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর মহাসড়কে পাশে থাকা বৃক্ষের মধ্যে পেরেকে সয়লাব। আর এসব পোষ্টার,ফেস্টুন ছেয়ে যাচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। প্রকৃতি আর মানুষের বন্ধু গাছের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কিছু মানুষের বিকৃত মানসিকতার পরিচয় বলে দাবী সচেতন মহলের।
জেলা জুড়ে বিভিন্ন সড়ক গুলোতে গাছের মধ্যে লাগানো বিজ্ঞাপন বোর্ডে সয়লাব। শুধু গাছ নয় বিজ্ঞাপনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রচীরও। এতে করে পরিবেশের সৌন্দর্য্য নষ্ট হবার পাশাপাশি পরিবেশ ভারসাম্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কথায় আছে গাছ মানুষের পরম বন্ধু। গাছ মানুষকে অক্সিজেন দেয়। সেই অক্সিজেন নিয়ে মানুষ ও প্রাণী বেঁচে থাকে। জীবন বাঁচানো সেই গাছেরই ক্ষতি করছে কিছু বিকৃত মানসিকতার মানুষ। গাছ শুধু আমাদের জীবনই বাঁচায় না বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকেও বাড়ী-ঘরকে রক্ষা করে। কিন্তু এখন উল্টো চিত্র দেখা যায় মানুষের নির্যাতনের স্বীকার হয়ে সেই গাছেই দূর্যোগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা সড়কে লাগানো ছোট বড় গাছের গায়ে লোহার পেরেক দিয়ে আটকানো হয়েছে অসংখ্য সাইন বোর্ড,ব্যানার,ফেস্টুন,বিলবোর্ড।বিভিন্ন গাছে ঝুলছে ব্যবসায়িক, চিকিৎসক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচার-প্রচারণার অসংখ্য ছোট-বড় সাইন বোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিজ্ঞাপন। পিছিয়ে নেই বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলোও। এসব ব্যানার, ফেস্টুন, বিজ্ঞাপন ঝোলানো হয়েছে পেরেক ঠুকে। এক একটি গাছ যেন এক একটি বিজ্ঞাপন বোর্ডের খুটি। কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই যে যেখানে পারছে পেরেক ঠুকে গাছকে বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করছে। এতে বর্ষা মৌসুমে ছোট-বড় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় পথচারী ও যানবাহন গুলোকে।
সরজমিনে দেখা যায়,কুড়িগ্রাম বিজিবি-২২ ব্যাটলিয়ন ক্যাম্প এবং আনসার ভিডিপি কার্যালয়ের সামনে চিলমারী-কুড়িগ্রাম সড়কের দু’পাশে সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো রয়েছে বড় বড় গাছ।আম,মেহগনি,
অর্জুনসহ বিভিন্ন বৃক্ষের মধ্যে অসংখ্য পোস্টার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। সারিবদ্ধ এসব গাছের মধ্যে একটি মৃত আম গাছের মধ্যে লাগানো হয়েছে বিজ্ঞাপনের পোস্টার।
নাগেশ্বরী উপজেলা পরিষদ চত্বরে নারকেল গাছ সহ বিভিন্ন গাছে স্থানীয় সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ফেস্টুন পেরেক দিয়ে লাগানো হয়েছে।
রাজারহাট উপজেলার নাজিমখা সড়কে রাজারহাট পাইলট,বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং মীর ইসমাঈল ডিগ্রি কলেজে ভিতরে ও রাস্তার দু’ধারে ছোট-বড় এবং মোটা-চিকন বিভিন্ন মূল্যবান গাছে শত-শত পোষ্টার, ফেস্টুন এবং রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ভরে গেছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা মাহাবুব আলম বলেন,পুরো উপজেলার বিভিন্ন অফিস এবং গাছে শুধু নেতাদের ছবি দিয়ে পোষ্টারে সাটানো। এতে করে সরকারি অফিসের সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে গেছে। শুধুমাত্র প্রতিবছরের জুন মাস আসলেই নামমাত্র রং চং করলেও কিছু দিন পর আবার একই চিত্র।
রাজারহাট উপজেলার বাসিন্দা কলেজ ছাত্র সাব্বির বলেন,নাজিমখা সড়কে প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে আনুমানিক পাঁচশতাধিকেরও বেশি গাছে পেরেক দিয়ে পোষ্টার,ফেস্টুন লাগানো। অবৈধভাবে গাছে পেরেক দিয়ে পোষ্টার ফেস্টুন লাগিয়ে মারাতœক ভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে।
আইন থাকলেও শুধু কাগজ কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে। কোন দিন দেখলাম না কোন অভিযান পরিচালনা করে জেল,জরিমানা করা হয়েছে।
পরিবেশবিদ কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন,পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয়। তা দিয়ে পানি ও তার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব প্রবেশ করে। এতে গাছে দ্রুত পচন ধরে। ফলে তার খাদ্য ও পানি শোষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এতে করে গাছটি মারাও যেতে পারে। তাই কোনো গাছে পেরেক ঠোকা মানে ওই গাছের চরম ক্ষতি করা। গাছের পরিচর্যা করার বদলে উল্টো বিজ্ঞাপনের নামে গাছের চরম ক্ষতি করা হচ্ছে। গাছের প্রতি এই নিষ্ঠুর আচরণ দেশের বন আইনে দন্ডনীয় অপরাধ হওয়ায় কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কার্যকরি পদক্ষেপ নেবার দাবী জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি ও
আইনজীবি অ্যাড.আহসান হাবীব নীলু বলেন,শহরের সৌন্দর্য রক্ষা ও পরিচ্ছন্নতা বিধানে সরকার ২০১২ সালে দেয়াল লিখন ও পোষ্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রন) আইন-২০১২পাশ করেন। সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কেউ পোষ্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড লাগানে অর্থদন্ডসহ বিনাশ্রম কারাদন্ড দেবার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ না থাকায় দিন দিন বিজ্ঞাপনের নামে সৌন্দর্য নষ্ট করার যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা নিয়মিত রাখার দাবী করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ জানান, জেলার মাসিক সম্বনয় মিটিং এ অবৈভাবে গাছে পোষ্টার, ফেস্টুন ইত্যাদি লাগানোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এগুলো অপসারণে দ্রুত কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়া হবে।