রাজনীতি

কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া হবে না: প্রধানমন্ত্রী

  অনলাইন ডেস্ক ৭ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১:১৬ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

নির্দিষ্ট কিছু আসনে জয়ের নিশ্চয়তা নিয়ে ভোটে যেতে চায় জাতীয় পার্টি। নৌকার প্রার্থী থাকলে জয় নিয়ে সন্দিহান নেতারা। ফলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির এখন দরকষাকষি চলছে।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী থাকবে না, এমন নিশ্চয়তাও চেয়েছে দলটি। জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতারা মনে করছেন, নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে ভোট করে জিতে আসা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। প্রশাসনও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে না। ফলে নৌকার সঙ্গে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান না।

বগুড়া-২ আসনে জাতীয় পার্টি সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমার আসনে জাতীয় পার্টি আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আবার আওয়ামী লীগও প্রার্থী দিয়েছে। ফলে এখানে নিরপেক্ষ ভোট হওয়া নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।

এই অবস্থা শুধু আমার আসনে না, সবগুলো আসনেই। এখন পর্যন্ত প্রশাসনকে আমরা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে দেখছি না। তবে সমঝোতার ভিত্তিতে যদি নৌকার প্রার্থী না থাকেন তাহলে পাস করা কঠিন হবে না। আমি মনে করি, সমঝোতা হলে নির্দিষ্ট আসনগুলোতে নৌকার প্রার্থী থাকবে না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার করে বলেছেন, সবাইকে ভোট করে জিতে আসতে হবে। কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া হবে না। ফলে অধিকাংশ আসনে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে।

জাতীয় পার্টির তৃণমূলের একাধিক নেতা এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী না থাকলেও যদি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকে, তাহলেও অধিকাংশ আসনে জাতীয় পার্টির পক্ষে নির্বাচন করা কঠিন হয়ে যাবে।

শুধু জাতীয় পার্টি না, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটে থাকা শরিকদের পক্ষেও জেতা কঠিন হবে। আবার অনেক আসনে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যাবেন।

সবাই জানে নির্বাচনের পর কে ক্ষমতায় আসছে। ফলে আওয়ামী লীগের লোকেরা সব জায়গাতেই পেশি শক্তি দেখাবে। ফলে শুধু জাতীয় পার্টি না, সমঝোতা না হলে ১৪ দলীয় জোটের অন্য প্রার্থীদেরও পাস করা কঠিন হবে।

মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। সেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সিরাজুস সায়েফিন সাঈফ। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী থাকলে প্রশাসনের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা কঠিন।

ফলে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন করছি। ফলাফল কী হবে আমরা জানি।’

অন্যদিকে নড়াইল-২ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি সাবেক ক্রিকেটার মাশরাফি। এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাড. খন্দকার ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘মানুষ আসলে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। কিন্তু ভোটটা তো সুষ্ঠু হতে হবে।

সেই নিশ্চয়তা তো আমরা পাচ্ছি না। ফলে রেজাল্ট যা হওয়ার তাই হবে। দল বলেছে তাই ভোট করছি।’

জয়ের নিশ্চয়তার অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করতে চান। তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বুধবার সকালে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, ‘জোট-মহাজোট নয়, লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করবে জাতীয় পার্টি। আর সমঝোতার মতো কিছু হলে তা মনে মনে হতে পারে।’

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বর্তমান সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা লাঙ্গল প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করব। নৌকা নিয়ে ভোট করার বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি। এগুলো ফালতু আলোচনা।

তবে হ্যাঁ, সমঝোতা হলে কিছু আসনে আমরাও তাদের ছাড় দেবো, তারাও আমাদের কিছু আসনে ছাড় দেবে। এগুলো আলোচনার ভিত্তিতেই সমাধান হবে। কিন্তু নৌকা নিয়ে আমরা ভোট করব না।’

গত দু’টি (২০১৪ ও ২০১৮ সাল) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলটি ২২টি আসনে, তার আগে ২০১৪ সালে ২৯টি আসনে জয়ী হয়।

এবারও সমঝোতার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কিছু আসন চায় দলটি। এবার তাদের দাবি ৪০টি আসন। যদিও আওয়ামী লীগের তরফ থেকে বর্তমান সংসদে থাকা ২২টি আসনের নিশ্চয়তা এখনও পায়নি দলটি।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বৈঠক হয়েছে বলে আলোচনা হচ্ছে। সেখানে আসন ভাগাভাগি ও নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

যদিও বুধবার সকালের ব্রিফিংয়ে মুজিবুল হক চুন্নু এই বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বুধবার রাতে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো ধরনের বৈঠক হয়নি।

সরকারি দল এবং বিরোধী দল আসন ভাগাভাগি করলে সেটা কেমন নির্বাচন হবে? এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাই বা কতটুকু হবে? জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এটা তো একটা প্রহসনের নির্বাচন হচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আমাদের পার্থক্য কী? এখানে সরকারি দল আবারও ক্ষমতায় আসবে এটা নিশ্চিত, তাহলে ভোটের অর্থ কী থাকল। নির্বাচনটা হলো মানুষের প্রার্থী বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকা।

কিন্তু এখন যে নির্বাচনটা হচ্ছে সেখানে আপনাকে বলা হচ্ছে, আপনি মিনারেল ওয়াটার খাবেন, না ফুটানো পানি খাবেন? এর যে কোনো একটা আপনি বেছে নিতে পারেন কোনো সমস্যা নেই। দুটোই প্রায় এক।

কিন্তু নির্বাচনটা হওয়ার কথা আপনি মিনারেল ওয়াটার খাবেন, নাকি ওয়াসার সরবরাহ করা ট্যাপের পানি খাবেন? তাহলে মানুষের পছন্দের বিষয় থাকতো। ফলে এখন যেটা হচ্ছে তার পুরোটাই প্রহসনের।’

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এবার যেটা হচ্ছে, সেটা কিন্তু পরিষ্কার। কোনো রাখঢাক নেই। প্রধানমন্ত্রী তো পরিষ্কার বলেছেন, আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী থাকবে। জাতীয় পার্টিও তো তাদের জোটসঙ্গী। ফলে তারা প্রকাশ্যেই আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করছে।

ফলে নির্বাচনটা কী হতে যাচ্ছে সেটা আমরা সবাই দেখছি। এখানে তো গোপন কিছু নেই। আমি আগেও বলেছি, বাংলাদেশে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একটিও যদি না আসে সেটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। ফলে এখানে যেটা হচ্ছে সেটা কী আমরা সবাই দেখছি।’

[জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা সংস্করণ অবলম্বনে এই প্রতিবেদনটি। এই প্রতিবেদনের সব ধরনের দায়ভার ডয়চে ভেলের]