রাবি প্রতিনিধি ২৬ নভেম্বর ২০২৩ , ৮:৩৮ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলে ‘মধ্যরাতে উচ্চশব্দে গান বাজনা’ করতে নিষেধ করায় এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের ৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। রবিবার (২৬ নভেম্বর) রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলে এঘটনা ঘটে। এসময় ওই শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে হওয়া বাকবিতণ্ডা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় এক সাংবাদিককেও মারধর করা হয়। এঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শাহাদত হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী এবং শহীদ হবিবুর রহমান হলের ৩১৫ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন- শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন আকাশ, চারুকলা অনুষদের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান এবং ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সম্রাটসহ আরও কয়েকজন। এরমধ্যে আল-আমিন আকাশ শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং বাকিরা ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত।
প্রক্টর বরাবর দেওয়া লিখিত অভিযোগে শাহাদত হোসেন বলেন, শনিবার রাত দেড়টার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলের ২১৬ নম্বর কক্ষে বিকট আওয়াজে গানবাজনা, লাফালাফি ও হইচই হচ্ছিল। এতে পুরো ব্লক কাঁপছিল। কক্ষে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তারা এ কর্মকাণ্ড করছিল। এমনকি প্রায়শই তারা মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত কক্ষে এমন কর্মকাণ্ড করে থাকে। ফলে আমার ঘুমের প্রচন্ড সমস্যা হচ্ছিল। ব্লকের অনেকের একই অবস্থা। তখন আওয়াজ সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মঞ্জুরুল ইসলামসহ আমি নিচ তলায় যাই। তারপর শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আল আমিন আকাশকে দেখতে পাই এবং জিজ্ঞেস করি কোথায় আওয়াজ হচ্ছে।
জিজ্ঞেস করায় আকাশ ক্ষিপ্ত হন এবং মঞ্জুরুলকে ধমক দিতে থাকেন। ইতোমধ্যে ২১৬ নম্বর কক্ষ থেকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সম্রাট ও ইমরান বের হন। আকাশ পূর্ব পরিচিত হওয়ায় আমি তাকে বলি, অতিরিক্ত শব্দে ঘুমাতে পারছি না। সেজন্য জানতে আসলাম। তখনই আল আমিন আমাকে তুইতোকারি করতে থাকে এবং বলেন, ‘এটা আমাদের ফ্লোর, আমরা কি করব না করব, সেটা আমাদের ব্যাপার। সে জুনিয়র হয়ে জিজ্ঞেস করার কে?’ মঞ্জুরুলকে উদ্দেশ্য করে আকাশ আরো বলেন, ‘এই গানবাজনা তো আজ নতুন করি না। সমস্যা কোথায়?’
মারধরের বিষয়ে অভিযোগে শাহাদত বলেছেন, এনিয়ে আমাদের মধ্যে তর্ক হয়। এমতাবস্থায় হঠাৎই উত্তেজিত হয়ে নেশাগ্রস্ত ইমরান সজোরে আমাকে একাধিক থাপ্পড় মারে এবং আকাশ ও সম্রাট আমাকে ধরে টানাহেচড়া করতে থাকে। তখন পাশ থেকে রায়হান (সাংবাদিক) আসে। তিনি ২১৭ নম্বর কক্ষে থাকেন। তারও একই সমস্যা হচ্ছিল। রায়হান তাদের জিজ্ঞেস করে আমাকে মারা হচ্ছে কেন? এবং চেষ্টা করে তাদের শান্ত করতে। কিন্তু রায়হানের সঙ্গেও তারা তর্কে জড়ায় এবং ইমরান ও সম্রাট তাকে ধাক্কাধাক্কি করে। ইতোমধ্যে আকাশের ডাকে অন্য সহযোগিরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং আমার ও রায়হানের ওপর অতর্কিতভাবে মারধর শুরু করে। এ ঘটনায় আমি নিজের নিরাপত্তা এবং অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানাই।
তবে মারধর না বরং ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল জানিয়ে অভিযুক্ত আল-আমিন আকাশ বলেন, আমি ২১১ নাম্বার রুমে থাকি। গতরাতে ২১৬ নাম্বার রুমে গান-বাজনা হচ্ছিল। এসময় উপর তলা থেকে শাহাদাত নামে এক বড়ভাই এসে জানতে চাই যে, কোন রুমে গান-বাজনা হচ্ছে। ওইসময় আমি ওনাকে তুমি বলে কথা বলেছিলাম। উনি আমার এক ব্যাচ সিনিয়র। একসময় ছাত্রলীগ করতেন। সে হিসাবে ওনার সাথে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক। তুমি করে বলায় উনি আমাকে গালি দেন। একারণে ওইসময় একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল। আর রায়হান ২১৭ নাম্বার রুমে থাকে এবং শাহাদাত ভাইয়ের বিভাগের ছোটো ভাই হওয়ায়, এসময় সেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিল। তার সাথে আমাদের কারোরই কিছু হয়নাই। সে সাইডে ছিল। তাকে মারধরের বিষয়টা একদমই ভুল কথা।
এবিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি। ঘটনার সত্যতা প্রমানিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো।
হবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, শাহদাত আমার কাছে কোনো অভিযোগ জানায়নি। তবে, রায়হান একটা অভিযোগ জানিয়েছে। ওইটার মধ্যেই শাহাদতের বিষয়টা উল্লেখ আছে। সেক্ষেত্রে আগামীকাল আমরা তাকেও ডাকবো। আর রায়হানের অভিযোগের প্রেক্ষীতে হলের হাউজ টিউটর অধ্যাপক গৌতম দত্তকে আহ্বায়ক এবং অন্য হাউজ টিউটরদের সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামীকাল কমিটি দুই পক্ষের সাথে বসে তদন্ত সাপেক্ষে শীঘ্রই তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। এরপর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিবো।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হকের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
উত্তরেরআলো/মারুফ/এসএম