চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ১৯ আগস্ট ২০২৪ , ৩:৫২ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
শূন্য পদ দেখিয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের নামে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে এক নারীর নিকট হতে ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে। এদিকে ওই প্রতিষ্ঠানে যোগদানের ৯ বছর পর ভুক্তভোগী ওই নারী জানতে পারেন নিয়োগ দেয়া পদটি শূন্য নেই।
সোমবার সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউএনও মিনহাজুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম শামীমা আক্তার সরদার। তিনি উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের শামসপাড়া এলাকার বাসিন্দা। চিলমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) পদে নিয়োগ নিয়েছিলেন শামীমা আক্তার সরদার।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম মো. সাজ্জাদুর রহমান। তিনি চিলমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শামীমা আক্তার সরদার ২০১৬ সালের ২জানুয়ারী তারিখে চিলমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক(সমাজ বিজ্ঞান) পদে যোগদান করেন। নিয়োগ নেয়ার সময়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.সাজ্জাদুর রহমান পর্যায়ক্রমে তার নিকট হতে দশ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। সে সময়ে ৩ মাসের মধ্যে নিজ দায়িত্বে এমপিও ভূক্ত করে দিবেন মর্মে আশ্বস্ত করেছিলেন প্রধান শিক্ষক। টাকা নেয়া শেষ হলে এমপিও’র জন্য আবেদনের বিষয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কাল ক্ষেপণ করতে থাকেন তিনি । বেশী চাপ দিলে প্রধান শিক্ষক ওই নারীর সরলতার সুযোগ নিয়ে তার সাথে খারাপ আচরণ করেন এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলতে থাকেন। কখনো কখনো পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে পুনরায় নিয়োগ নেয়ার জন্যও প্রস্তাব করেছিলেন ওই প্রধান শিক্ষক।
ভুক্তভোগী শামীমা আক্তার সরদার জানান, জীবিকা নির্বাহের তাগিদে শুন্য পদে ২০১৬ সালের ২জানুয়ারী তারিখে সহকারী শিক্ষক(সমাজ বিজ্ঞান)পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক চিলমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়েছিলাম।
নিয়োগের সময় প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুর রহমান আমার নিকট থেকে মিষ্টি কথা বলে দশ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে আমার আড়াই ভরি স্বর্নলংকার মাত্র ২২হাজার টাকায় বিক্রি করেও তাকে দিয়েছিলাম।
নিয়োগের পর থেকে এমপিও ভূক্তির জন্য বলা হলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ৯বছর অতিক্রম করান তিনি। গত জুলাই মাসে তিনি আবারও আমার নিকট থেকে ২লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন।
জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ধার দেনা করে এবং নিজের ও পরিবারের সদস্যদের স্বর্নালংকার বিক্রি করে ১০লক্ষ টাকা প্রদান করে স্কুলে নিয়োগ নিয়ে বিল না হওয়ায় দীর্ঘ ৯বছর ধরে সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করার কথা জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ৯বছর প্রতারিত হয়ে এমপিও ভূক্তির আবেদনের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের স্বরনাপন্ন হলে তিনি ফাইলে স্বাক্ষর করতে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন।অতি কষ্টে ৫হাজার টাকা জোগার করে ফাইলে স্বাক্ষর করিয়ে চলতি বছরের জুন মাসে অনলাইনে বিল প্রাপ্তির জন্য আবেদন করি।
আবেদনটি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালকের দপ্তর থেকে পরিত্যাক্ত হয়।পরে জানতে পারি আমার পদে (সহকারী শিক্ষক-সমাজ বিজ্ঞান)এমপিও ভূক্ত শিক্ষক থাকায় আমি ওই পদের জন্য অতিরিক্ত শিক্ষক। ফলে আমার বেতন বিল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে।
নিয়োগের বিষয়ে চিলমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সাজ্জাদুর রহমানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,ফোনে এসব বিষয়ে আলোচনা হবে না,স্কুলে আসেন বিস্তারিত বলবো।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. তাহের আলী জানান,স্কুলটি নিম্ন মাধ্যমিক ছিল এখন মাধ্যমিক হয়েছে। ওই শিক্ষিকার বিল হওয়ার কথা, তাই এমপিও ভূক্তির জন্য আবেদন করা হয়েছিল।
ইউএনও মো. মিনহাজুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।