এস এম রাফি ২৮ আগস্ট ২০২৩ , ৫:১১ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বন্যায় ভেঙে যাওয়া একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থানান্তর করে অন্য উপজেলায় নেয়ার চক্রান্ত চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শুধু একটি বিদ্যালয় নয়, সেটি ভোট কেন্দ্র হওয়া একটি মহল রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য স্কুলটি সরিয়ে অন্য উপজেলায় নিতে তোড়জোড় চালাচ্ছে। এতে ওই এলাকার প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর পড়ালেখা অনিশ্চিত হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, যে এলাকার স্কুল সেই এলাকায় স্থাপন করতে হবে। এদিকে জেলা কর্মকর্তা বলছেন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট ভাঙনে উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের উত্তর খাউরিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। শিক্ষা অফিসারের মৌখিক নির্দেশে স্কুলের টিনশেডের ভবন ও মালামাল ওই চরের পশ্চিম পাশের অংশে স্থানান্তর করেন প্রতিষ্ঠান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুলেখা ইয়াসমিন।
তবে ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক তার এলাকা রৌমারী উপজেলার চর শৌলমারী ইউনিয়নের চর খেদাইমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে স্কুল ভবণের মালামাল ও সরঞ্জামাদি জোড়পূর্বক ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সরিয়ে নিয়ে যান। পরে চর খেদাইমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই টিনসেট ঘর তৈরি করে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছেন ওই সহকারী শিক্ষক।
এদিকে নয়ারহাটের উত্তর খাউরিয়ার একটি বাড়ির ঘরে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও এক সহকারী শিক্ষক। তবে আলাদা ভাবে বিদ্যালয়ের বাকি সহকারী শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক, লায়লা খাতুন ও মোবারক হোসেন রৌমারী উপজেলায় ওই একই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে। ফলে দেখা গেছে একটি বিদ্যালয়ের দুই উপজেলায় দুটি ঘরের আলাদা ভাবে পাঠদান কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। এতে ভোগান্তির স্বীকার হতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। শুধু তাই নয় ওই বিদ্যালয় অন্যত্র চলে যাওয়ায় প্রায় সহস্রাধিকের ওপর ভোটাররাও বিপাকে পড়েছেন।
উত্তর খাউরিয়ার চরের শিশু শিক্ষার্থী বিজয় শেখ, ছাব্বির, শিরিনা বলেন, আমরা আমাদের গ্রামেই স্কুল চাই। খেদাইমারি গ্রামে স্কুল হলে আমাদের ব্রহ্মপুত্র নদের দুটি শাখা নদী পার হয়ে যেতে হবে। এতে করে আমাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে।
একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিদ্যালয়টি আমাদের চরে ছিল। এখানেই পুননির্মাণ করতে হবে। এটা আমাদের ভোটকেন্দ্র। আমাদের শিশু সন্তানরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্য উপজেলায় গিয়ে কেন পড়াশোনা করবে?
তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের তিন সহকারী শিক্ষক তাদের সুবিধার্থে এখানকার বিদ্যালয় অন্যত্র নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। এছাড়া বিদ্যালয়টি ভোটকেন্দ্র হওয়ায় নিজেদের দখলে রাখতে নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান এবং ইউপি সদস্য মইনুল ইসলাম চিলমারী উপজেলার বিদ্যালয়টি রৌমারী এলাকায় নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুলেখা ইয়াসমিন বলেন, স্কুলটি ভেঙে যাওয়ার পর খাউরিয়া চরের বাসিন্দা মোন্নাফ মিয়ার বাড়িতে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছি। এছাড়া বিদ্যালয়ের তিন সহকারী শিক্ষক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে রৌমারী উপজেলার খেদাইমারি গ্রামে টিনসহ অন্য আসবাবপত্র নিয়ে গেছে। বিষয়টি উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহফুজা আক্তার বলেন, বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের বিষয়ে তিন সহকারী শিক্ষক আমাকে কিছু না জানিয়েই টিনসহ আসবাবপত্র রৌমারীতে নিয়ে গেছেন। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। আমাদের এলাকার স্কুল আমাদের এখানেই পুননির্মাণ করার দাবি জানাচ্ছি।
নয়ারহাট ইউনিয়ন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইনসাব আলী বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বললে, তিনি আমার সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করেছেন। শুধুমাত্র ব্যক্তি ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য স্কুলটি অন্য উপজেলায় নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।
সহকারী শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়টি রৌমারী উপজেলার সীমানায় প্রায় ৩৩ বছর থেকে ছিল। বর্তমান নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করেছেন।
নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, বিদ্যালয়টি ভেঙে যাওয়ার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। পরে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেনের অনুরোধে সাময়িকভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সুবিধাজনক স্থানে একটি ঘর তোলা হয়েছে। পানি কমে গেলে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে বিদ্যালয়টি পুননির্মাণ করা হবে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু সালেহ সরকার বলেন, সাময়িকভাবে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য অন্য উপজেলায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পানি কমে গেলে উত্তর খাউরিয়া এলাকাতেই বিদ্যালয়ের নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, এক উপজেলার বিদ্যালয় অন্য উপজেলায় নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।