অনলাইন ডেস্ক : ২৫ অক্টোবর ২০২৪ , ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে চিলমারী নদীবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের ভাগ্য। শুরু থেকেই প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ছিল ধীর। এখন ১০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এজন্য ‘চিলমারী এলাকায় (রমনা, জোড়গাছ, রাজিবপুর, রৌমারী, নয়ারহাট) নদীবন্দর নির্মাণ’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। কিন্তু একনেকে অনুমোদন সুপারিশ না দিয়ে সম্প্রতি প্রস্তাবটি নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ে ফেরত দেওয়া হয়েছে। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে এটি আদৌ অনুমোদন পাবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. সোলেমান খান সোমবার যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারছি না। কাগজ দেখে বলতে হবে চিলমারী বন্দর প্রকল্প নিয়ে কী ঘটেছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২৩৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। কিন্তু গত মার্চ মাস পর্যন্ত খরচ হয়েছে সাত কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৮ শতাংশ। এছাড়া অনুমোদনের সময় প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর আগে একবার ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রংপুর বিভাগের অপেক্ষাকৃত সুবিধাবঞ্চিত কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর এবং গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকায় নৌপরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত হতো। পাশাপাশি নৌবাণিজ্য ও অতিক্রমণ প্রটোকলের আওতায় ভারতের আসাম, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ উন্নয়নে অন্যতম কেন্দ হতে পারত। আরও বলা হয়েছে চিলমারী বন্দরটি কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে অবস্থিত। যেটি জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে। এছাড়া চিলমারীর রমনা রেলস্টেশন থেকে ৫০০ মিটার পূর্বে অবস্থিত এ বন্দর একসময় কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয়, যাত্রী ও মালামালের অন্যতম প্রধান স্থানীয় বন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল। এই বন্দরের প্রধান সুবিধা ছিল প্রায় ১৫টি নদীর সংযোগ স্থলে এটি অবস্থিত। এগুলোর অন্যতম হলো ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমর, ফুলকুমর ও জিনজিরাম নদী। একসময় অবিভক্ত ভারতের আসামের ধুবরী, গৌহাটি এবং পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকেও এখানে জলযান নোঙর করত। এখানে ছিল কাস্টম স্টেশনও। কিন্তু পরবর্তীতে দেশ ভাগ ও যমুনা নদীর ভাঙনে দিনে দিনে এই বন্দরের গুরুত্ব কমে যায়। তবে এখনো প্রতিদিন প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ যাত্রী এ এলাকা দিয়ে যতায়াত করেন। বিভিন্ন উৎসবের সময় সর্বোচ্চ এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ যাত্রী হয়ে যায়। এখন শুধুমাত্র চিলমারী ও রৌমারীর মধ্যেই প্রতিদিন ৮-৯টি বৃহৎ জলযান চলাচল করছে। চিলমারী ও রাজিবপুরের মধ্যেও এরকম জলযান চলাচল করছে। এছাড়া ৭০-৮০ টন মালামাল প্রতিদিন এই বন্দরে ওঠানামা করে। বর্ষাকালে বন্দরের ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে যায়। ধান, চাল, গম ইত্যাদি পণ্য দেশের দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে পরিবহণ করা হয়। পাশাপাশি পাট, পাটশলা, দেশলাইয়ের কাঁচামাল তুলা কাঠ এই বন্দর দিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিবহণ করা হচ্ছে। বুড়িমারী ও সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে পাথর চিলমারীর রমনা ও ফকিরহাট হয়ে বাহাদুরাবাদ ঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে পরিবাহিত হয়। এ প্রেক্ষাপটে বন্দর উন্নয়নে প্রকল্পটি হাতে নেয় নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু কিছু নতুন অঙ্গের অন্তর্ভুক্তি, রেট শিডিউল পরিবর্তন, বিভিন্ন কাজের পরিমাণ ও ব্যয় বাড়া ও কমার কারণে প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, প্রকল্পটি সংশোধনীর প্রস্তাব পাওয়ার পর পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা করে পরিকল্পনা কমিশন। সেখানে বিভিন্ন বিভিন্ন সুপারিশ দেওয়া হয়। সেগুলো প্রতিপালন করে সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। সেসব যাচাই বাছাই করে অনুমোদনের জন্য একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের অনুমতি চাওয়া হয় পরিকল্পনা উপদেষ্টার কাছে। প্রায় এক মাস সেখানে পড়ে থাকার পর উপদেষ্টার দপ্তর থেকে সেটি ফেরত পাঠানো হয় কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে। সম্প্রতি প্রকল্পের যৌক্তিকতা আছে কিনা সেটি অধিক যাচাই বাছাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টার দপ্তর সূত্র জানায়, এ প্রকল্পে যেহেতু কোনো বৈদেশিক ঋণের অর্থ নেই। সম্পূর্ণ সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাস্তবায়নের গতিও অত্যন্ত ধীর। তাই শেষ পর্যন্ত এটি অনুমোদন নাও পেতে পারে। কেননা এখনো বৈদেশিক ঋণ আছে এমন প্রকল্প অগ্রাধিকার পাচ্ছে। প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব কাজ করার কথা সেগুলো হলো, জমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, আরসিসি জেটি ও এক্সেস ব্রিজ নির্মাণ, আরসিসি পেভমেন্ট, তীর রক্ষা এবং ড্রেজিংয়ের কাজ।
সূত্র:দৈনিক যুগান্তর