এস এম রাফি, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৪:৪৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদের পুলিশের নৌকার এক থেকে দেড়শ গজ সামনে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এতে দুটি নৌকার যাত্রী ও ৬ থেকে ৭ জন গরুব্যবসায়ীর কয়েক লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়েছেন ডাকাতরা। এসময় মোসলেম নামে একজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের কড়াইবরিশাল ঘাটে দুটি নৌকায় এঘটনা ঘটেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চিলমারী মডেল থানার ওসি মুশাহেদ খান। তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। বিস্তারিত জেনে তারপর বলতে পারবো।
ডাকাতির শিকার নৌকার মাঝি ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রবিবার দুপুর ১২ টার দিকে কড়াইবরিশাল খেয়া ঘাটের কাছে দুটি যাত্রীবাহী নৌকায় ডাকাতরা হামলা করে। নৌকা দুটি রাজিবপুরের কোদালকাটি ও পাখিউড়া থেকে চিলমারীর উদ্দেশে আসছিল। মাঝপথে যাত্রী নেওয়ার জন্য কড়াইবরিশাল খেয়া ঘাটের ভিড়লে সেখানেই আক্রমণ করে শসস্ত্র ডাকাতদল। তারা গুলি ছুঁড়ে নৌকায় থাকা যাত্রী ও গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ডাকাতি করে চলে যায়। যাত্রীদের চিৎকারে স্থানীয়রা ডাকাতদের ধাওয়া করে। খেয়া ঘাটে একটি নৌকায় থাকা চিলমারী থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্য থাকলেও তাদের সামন দিয়ে ডাকাতদল পালিয়ে যায়। এসময় পুলিশ সদস্যরা নির্বিকার ছিলেন বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী যাত্রী ও স্থানীয়রা।
নৌকার মাঝি মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘খেয়া ঘাটে গরু ব্যবসায়ীদের নৌকা ছিল। ওদের নৌকায় ডাকাতি করতে আইসা আমার নৌকাতেও ডাকাতি করে। ১০ থেকে ১৫ জন ছিল। দুই নৌকা থাইকা টাকা লুট কইরা ডাকাতরা চইলা যায়। আমরা কিছু করতে পারি নাই।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মাঝি মোসলেম আরও বলেন, ‘‘ডাকাতরা একটা গুলি করছে। ওদের হাতে বেকিও ছিল। আমার কাছে তিন যাত্রীর ৫৭ হাজার টাকা আছিল। আমাক বারি (আঘাত) দিয়া সেটা কাইরা নিছে। কয়েকজন যাত্রীর কাছেও টাকা নিছে। গরুর ব্যাপারিগো কাছেও টাকা কাইরা নিছে। ওগো অনেকে পানিত লাফ দিছে। পাশে পোশাক পড়া তিনজন পুলিশ আছিল। কিন্তু তারা আগায় আহে নাই।’
কড়াইবরিশাল এলাকার ইসহাক নামে এক নৌকা যাত্রী বলেন, ‘দুইটি নৌকায় যাত্রী ও গরু ব্যবসায়ীদের থেকে ৪/৫ লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। পরে কাছে গিয়ে দেখি অনেকে পানিতে লাফ দিছে। সাথে থাকা টাকা পানিতে ভিজে গেছে।’
কড়াইবরিশাল এলাকার বাসিন্দা আজম মিয়া জানান, গুলির শব্দ ও যাত্রীদের চিৎকারে ঘাটের কাছে থাকা স্থানীয় লোকজন এগিয়ে যান। তারা নৌকা নিয়ে ডাকাতদের ধাওয়া করেন। কিন্তু ততক্ষণে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। এসময় ঘাটে পুলিশের একটি নৌকা থাকলেও তারা যাত্রীদের সহায়তায় এগিয়ে যাননি।
এসময় নৌকার মাঝিসহ এক যাত্রী আঘাত প্রাপ্ত হয়ে গুরুত্বর অসুস্থ্য হলে যাত্রি আমিনুল ইসলামকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত যাত্রী রৌমারী উপজেলার কোমরভাঙ্গি এলাকার বাসিন্দা ও নৌকার মাঝি পাখিউড়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
ডাকাতির ঘটনায় চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সেলিম সরকারকে ফোন দিলেও তিনি কথা বলেননি।
এর আগে, গত ২৯ জানুয়ারি কড়াইবরিশাল এলাকায়মর পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদে যাত্রীবাহী নৌকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তারও আগে গত বছর ২১ ডিসেম্বর চিলমারীর অষ্টমীরচর ইউনিয়নের দুইশ’ বিঘার চরের কাছে নৌ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ১৬-১৭ জনের ডাকাত দল ‘পিস্তল’ ও দেশি অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে যাত্রীদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে চলে যায়। একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় যাত্রীদের কাছে এই নৌপথযাত্রা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।