uadmin ৩ নভেম্বর ২০২৩ , ৫:৪৬ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
মোঃ মাসুদ রানা, স্টাফ রিপোর্টার: নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত চিলাহাটি রেলস্টেশন। উত্তরাঞ্চলের শেষ রেলস্টেশন চিলাহাটি-ভারতের হলদিবাড়ি রেলপথে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস চলাচল করছে। তবে চিলাহাটি স্টেশনে যাত্রী ওঠা-নামার ব্যবস্থা না থাকায় এ ট্রেনের কোনো সুবিধা পাচ্ছিল না উত্তরাঞ্চলের মানুষ।
দেশের অভ্যন্তরে ইমিগ্রেশন না থাকায় শুধু ঢাকায় ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কার্যক্রম সম্পন্ন করে যাতায়াত করতে হয় চিলাহাটি হয়ে শিলিগুড়ির এই মিতালী এক্সপ্রেসকে। বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগ স্থাপনকারী এ ট্রেনে যাতায়াতের জন্য উত্তরবঙ্গে ইমিগ্রেশন চালুর দাবি শুরু থেকেই। সেটা মাথায় রেখেই প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চিলাহাটিতে আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। খুব শিগগিরই এই স্টেশন থেকে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠা-নামার সুযোগ মিলবে এই খবরে উচ্ছ্বসিত স্থানীয় জনগণ ও যাত্রীরা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে স্টেশনটির। আগামীকাল শনিবার (৪ নভেম্বর) স্টেশনের উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তবে স্টেশনটি পুরোপুরি ব্যবহারের জন্য আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রথমে অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে স্টেশনটি। পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন চালু করা হবে।২০১৯ সালের জুনে শুরু হয় পুরো স্টেশনের আধুনিকায়নের কাজ। পরে করোনা মহামারি ও নকশা জটিলতার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকে নির্মাণকাজ। নকশা সংশোধন করে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক স্টেশনের আদলে চিলাহাটি রেলস্টেশনের আইকনিক ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। আধুনিক যাত্রী সুবিধার জন্য টিকিট কাউন্টার, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগার তো থাকছেই, এর পাশাপাশি থাকছে রেলওয়ের কার্যক্রম চালানোর জন্য বিভিন্ন বিভাগের অফিস। ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় থাকছে ব্যাংক ও রেস্তোরাঁ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইমিগ্রেশন পয়েন্ট। চিলাহাটি হয়ে ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাত্রীরা চলাচল করতে পারবে এই স্টেশন থেকেই। এতদিন মিতালী এক্সপ্রেসে যাতায়াতের জন্য ঢাকা থেকে ইমিগ্রেশন হলেও সেই সুবিধা চিলাহাটি থেকেই পাবেন উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা। ফলে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন ভারতের শিলিগুড়িতে।স্থানীয় বাসিন্দা আপেল বসুনীয়া বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি খুব শিগগিরই পূরণ হতে যাচ্ছে। এই স্টেশন চালুর ফলে এখানে ইমিগ্রেশন ও ঝুলে থাকা স্থলবন্দর চালু হতে যাচ্ছে। মিতালী এক্সপ্রেসের যাত্রীরা এখান থেকে যাতায়াত করতে পারবে। এতে করে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে। এখানকার মানুষ চিকিৎসাসহ অন্যান্য কাজে সহজেই ভারতে যেতে পারবে।
আনিছুর রহমান নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, আমাদের চিলাহাটি আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। স্থলবন্দর চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হবে। চলাচলের জন্য ভালো হবে, ইনকাম হবে, ভারত যাওয়া-আসা সুবিধা হবে। এখান দিয়ে ভারতের ট্রেন চলে ঠিকই কিন্তু আমরা উঠতে পারি না। এটাই দুঃখ আমাদের। চিলাহাটিতে এটা যদি চালু করে দেয় তাহলে আমরা অনেক সুখে থাকব।
স্থানীয় বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, এটা আমাদের অবহেলিত এলাকা, এই অবলেহিত এলাকায় একটি বড় স্টেশন হলো, এখানে আমাদের স্থলবন্দর হবে। আমরা চাই এখান থেকে পাসপোর্টের মাধ্যমে মানুষ ভারতে যাক। অনেক ধন্যবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। কারণ উনি আমাদের এলাকায় এত সুন্দর একটি কাজ করে দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ নেত্রী সরকার ফারহানা আক্তার সুমি , আগামী ৪ তারিখ একটি মহোৎসব হতে যাচ্ছে আমাদের উত্তরবঙ্গের জন্য। এই দিনে আমাদের আইকনিক ভবন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এটি উত্তরবঙ্গের তথা রংপুর বিভাগের জন্য দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ। আমরা জানি দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রেলসংযোগ চালু হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে দেখেছি যে বিএনপির শাসনামলে রেললাইনগুলো তুলে নিয়ে গিয়েছিল তারা। সেখানে নতুন করে মিতালী এক্সপ্রেস চালু করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এজন্য প্রধানমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রী মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই। মিতালী এক্সপ্রেস আমাদের বুকের ওপর দিয়ে যাচ্ছে অথচ আমরা উঠতে পারছি না। আইকনিক ভবন চালুর পর আমাদের সাধারণ জনগণ চিলাহাটি থেকে ট্রেনে উঠতে পারবে এবং ভারতে যেতে পারবে। এতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও ভালো হবে।চিলাহাটি রেলস্টেশন মাস্টার রুহুল আমিন বলেন, স্টেশন ভবনটি খুব শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে। এর ফলে এখানে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস চালু হবে। এতে করে এ অঞ্চলের যাত্রীরা এই স্টেশন থেকেই খুব সহজেই ভারতে যাতায়াত করতে পারবে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদারি কোম্পানি যেভাবে কাজ করছে আশা করি খুব দ্রুত তারা শতভাগ কাজ সম্পন্ন করতে পারবে।
রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওয়ালী-উল হক বলেন, আইকনিক স্টেশন ভবনের মধ্যে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সুবিধা থাকবে। পাশাপাশি রেস্তোরাঁ ও ব্যাংকের সুবিধা থাকবে। এ ছাড়া ট্রেন পরিচালনার জন্য সকল বিষয় সেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
রেলওয়ের পশ্চিম জোনের প্রকল্প পরিচালক ও বিভাগীয় প্রকৌশলী (পাকশী-২) আবদুর রহিম বলেন, আমাদের কিছু ফিনিশিংয়ের কাজ বাকি আছে। মাত্র বৃষ্টি শেষ হলো। আমাদের রঙের কাজ ও অন্যান্য ফিনিশিংয়ের কিছু কাজ ধাপে ধাপে হওয়ার কারণে একটু সময় লাগবে। যে কারণে এটা আমরা শতভাগ করতে পারছি না। কিছুদিনের মধ্যেই এটা সম্পন্ন করতে পারব।