এস এম রাফি ১০ মার্চ ২০২৩ , ৩:১৬ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
দেশজুড়ে তীব্র প্রতিবাদের মুখে অবশেষে ‘বিদেশি এজেন্ট’ বিল প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে জর্জিয়ার ক্ষমতাসীন দল জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (০৯ মার্চ) সকালে শাসক দলের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, ঘোষণা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন।
জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা যে বিলটিকে সমর্থন দিয়েছি তা নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে, কোনো রিজার্ভেশন ছাড়াই। বিলটি সম্পর্কে বিরোধীরা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছে। ফলে সমাজে সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে। আমরা কোনোভাবেই সংঘাত চাই না।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে একটি টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছেন জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট সালোমে জুরাবিশভিলি। তিনি বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, প্রাথমিক বিজয় অর্জনের জন্য আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই।
এদিকে বিরোধী দলগুলো একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতি আমাদের ভরসা নেই। বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে। যেসব বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানাই।
তবে জর্জিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সরকারের ‘বিদেশি এজেন্ট’ বিল প্রত্যাহারের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে জর্জিয়ায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদল। তারা বলেছে, এ ঘোষণার ফলে জর্জিয়ার রাজনৈতিক নেতারা ইইউপন্থী সংস্কার পুনরায় শুরু করতে উৎসাহী হবেন।
তিবিলিসির মার্কিন দূতাবাস এই খবরকে স্বাগত জানিয়েছে। দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, জর্জিয়ার জনগণ একটি সমৃদ্ধ ও নিরাপদ ইউরোপ চায়। তাদের চাওয়া তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে। বিবৃতিতে দূতাবাস আরও বলেছে, আমরা ক্ষমতাসীন দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলটি প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানাই। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের আইন অনুসরণ করা না হয়, সেই অনুরোধও জানাই। আমরা আশা করি ইউরোপীয় মূল্যবোধ ও স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন করবে না জর্জিয়া।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার জর্জিয়ার সংসদে ৭৬-১৩ ভোটে ‘বিদেশি এজেন্ট’ বিলটি পাস হয়। বিলের বিপক্ষে ভোট পড়েছিল ১৩টি। পাস হওয়া বিলটি পরে সংসদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। বিলের প্রথম অংশে বলা হয়, জর্জিয়ায় কাজ করা এনজিওগুলো তাদের তহবিলের ২০ ভাগের বেশি ‘বিদেশি তহবিল’ পেলে তারা ‘বিদেশি এজেন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত হবে। যারা আইন ভঙ্গ করবে, তাদের ২৫ হাজার জর্জিয়ান লারি (৯ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার) জরিমানা গুনতে হবে। বিলের দ্বিতীয় অংশে বলা হয়, জরিমানার পাশাপাশি পাঁচ বছরের কারাদণ্ডও দেওয়া হতে পারে।
খসড়া আইনের প্রথম অংশ পাস হওয়ার পরে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। মঙ্গলবার রাতেই জর্জিয়ার রাজধানী তিবিলিসিতে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেন। সে সময় তারা কেবল জর্জিয়ার পতাকাই নয়, একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পতাকাও উড়িয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান ও কাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।
তিন দিনের অব্যাহত বিক্ষোভর পর জর্জিয়া সরকার বিলটি প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিল।