ধর্ম ও নৈতিকতা

জেনে নিন, শেষ রাতের দোয়া কতটা উপকারী

  এস এম রাফি ২৯ আগস্ট ২০২৩ , ১১:২০ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

শেষরাতের দোয়া অনেক কার্যকরী আমল। আল্লাহ তাআলা শেষরাতের দোয়া অপেক্ষাকৃত বেশি কবুল করেন। আল্লাহ তাআলা জান্নাতবাসীদের পরিচয় দিয়ে পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তারা শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থনা করে।’ (সুরা জারিয়াত: ১৮)

হাদিসে এসেছে, ওবাদাহ ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে জেগে ওঠে (এই) দোয়া পড়ে—‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদির, ওয়া সুবহা নাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা ক্যুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ’, (অর্থ: ‘এক আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজ্য তাঁরই। যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই। তিনিই সব কিছুর ওপর শক্তিমান। যাবতীয় হামদ আল্লাহরই জন্য, আল্লাহ তাআলা পবিত্র, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই। আল্লাহ মহান, গুনাহ থেকে বাঁচার এবং নেক কাজ করার কোনো শক্তি নেই আল্লাহর তাওফিক ছাড়া।’) অতঃপর বলে, হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন বা (অন্য কোনো) দোয়া করে, তাঁর দোয়া কবুল হয়। অতঃপর অজু করে (নামাজ আদায় করলে) তার নামাজ কবুল হয়। (সহিহ বুখারি: ১১৫৪)

অন্য হাদিসে এসেছে, মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, যে মুসলিম ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ও মহান আল্লাহকে স্মরণ করে রাত কাটায় (ঘুমায়) এবং রাতে জেগে আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভের দোয়া করে, আল্লাহ তাকে তা দান করেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৫০৪২)

তাই শেষ রাতের দোয়া খুবই ফজিলতপূর্ণ আমল। তবে আল্লাহর রহমতলাভের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ অনন্য এক ইবাদত। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে তাহাজ্জুদ নামাজ অন্যতম মাধ্যম। পূর্ববর্তী নেককার ও উত্তম বান্দারা তাহাজ্জুদের ব্যাপারে সচেতন থাকতেন। নবীজি (স.) বলেন, ‘তোমরা তাহাজ্জুদের নামাজে অভ্যাসী হও। কারণ, তা তোমাদের পূর্বতন নেক বান্দাদের অভ্যাস; তা তোমাদের প্রভুর নৈকট্যদানকারী ও পাপক্ষালনকারী এবং গুনাহ হতে বিরতকারী আমল।’ (তিরমিজি, ইবনে খুজাইমাহ, হাকেম, সহিহ তারগিব: ৬১৮)

রাতের শেষ ভাগে ঘুম থেকে উঠে যে নামাজ আদায় করা হয়, মূলত সেটাকে তাহাজ্জুদের নামাজ বলা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর শ্রেষ্ঠ নামাজ তাহাজ্জুদ। মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।’ (মুসলিম: ১১৬৩) আল্লাহ তাআলা নবীজিকে বলেন, ‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বে। এটা তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব। অচিরেই তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৭৯)

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ ওই বান্দার ওপর রহম করুন, যে রাত্রিকালে উঠে নামাজ আদায় করে এবং তার স্ত্রীকেও জাগায় এবং সেও নামাজ আদায় করে। যদি সে (স্ত্রী) নিদ্রার চাপে উঠতে না চায়, তবে সে (ভালোবেসে) তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ তাআলা ওই মহিলার ওপরও রহম করুন, যে রাত্রিতে উঠে নামাজ আদায় করে এবং তার স্বামীকে ঘুম থেকে জাগায় এবং সেও নামাজ পড়ে। যদি সে ঘুম থেকে উঠতে না চায়, তবে সে (ভালোবেসে) তার মুখে পানি ছিটিয়ে জাগিয়ে তোলে। (আবু দাউদ: ১৪৫০)

তাহাজ্জুদের এতই ফজিলত যে ঘুমের কারণে যেন কেউ পুরোপুরি বঞ্চিত না হয়, সেজন্য ঘুমানোর আগে অন্তত দু’রাকাত নামাজ পড়তে উৎসাহিত করতেন নবীজি (স.)। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘রাত্রি জাগরণ কষ্টকর ও ভারী জিনিস, তাই তোমরা যখন (শোয়ার আগে) বিতর পড়বে তখন দুই রাকাত (নফল) নামাজ পড়ে নেবে। পরে শেষ রাতে উঠতে পারলে ভালো, অন্যথায় এই দুই রাকাতই ‘কিয়ামুল লাইল’-এর ফজিলত লাভের উপায় হবে।’ (সুনানে দারেমি: ১৬৩৫; সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১১০৬; তাহাবি: ২০১১)

মোটকথা, নফল নামাজ যেমন ইবাদত, দোয়াও একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। নফল নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ শ্রেষ্ঠ আর শেষরাতের দোয়া কার্যকরী আমল। দুটিই মূল্যবান আমল। শেষরাতে নামাজ ও দোয়া সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে। তাই আমরা চেষ্টা করব- শেষরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ, দোয়া-দরুদ ও জিকির-আজকার করার। প্রত্যেকটি আমলই মর্যাদাপূর্ণ। কোনো একটি বাদ পড়লে অন্য ইবাদত গুরুত্বহীন হয়ে যায় না।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা প্রত্যহ রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে নিচের আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, ‘কে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার নিকট কিছু চাইবে? আমি তাকে দান করব। এবং কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (বুখারি, মুসলিম, মেশকাত: ১২২৩)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শেষ রাতে যত বেশি সম্ভব ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।