রুয়েট প্রতিনিধি ১৯ এপ্রিল ২০২৫ , ৮:৩১ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আজ শনিবার (১৯ এপ্রিল ২০২৫) রুয়েট প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দেশের প্রকৌশল খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সাংবিধানিক ও পেশাগত বৈষম্যের প্রতিবাদে এবং ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক নৈরাজ্যের বিরুদ্ধেই প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের দেশব্যাপী পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সমূহে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পুরকৌশল বিভাগের ১৯ সিরিজের শিক্ষার্থী শিহাব। সেখানে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা আন্দোলনের নামে রেল ও সড়কপথ অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ওপর ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের নির্মম হামলারও তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
বক্তারা আরও জানান, বর্তমানে প্রকৌশল খাতে যেভাবে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের জন্য বিভিন্ন পদে কোটা সংরক্ষিত রয়েছে, তা সংবিধান ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থার পরিপন্থী। বিশেষত, সরকারি চাকরির নবম ও দশম গ্রেডে বিএসসি প্রকৌশলীদের অবহেলার বিষয়টি তারা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে তুলে ধরেন।
তারা আরও বলেন, “বাংলাদেশের প্রকৌশল খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কিছু কাঠামোগত বৈষম্য বিএসসি ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীদের সাংবিধানিক অধিকার, মেধাও পেশাগত মর্যাদার পরিপন্থী। এই বৈষম্যের ফলে দেশের প্রকৌশল ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার সংকট ও ন্যায্যতার অভাব তৈরি হচ্ছে। আমরা তিনটি যুক্তিসম্মত ও অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য দাবি উপস্থাপন করা হলো:
১. ইঞ্জিনিয়ারিং ৯ম গ্রেড / Assistant Engineer / সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবার জন্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং অবশ্যই বিএসসি ডিগ্রি থাকতে হবে। কোনো কোটা বা সমমান পদ তৈরি করে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া যাবে না। কারণ, ৯ম গ্রেড একটি প্রথম শ্রেণির পদ, যেখানে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হওয়া উচিত বিএসসি। বিসিএস কিংবা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে যারা Assistant Engineer/সমমান পদে আসছেন, তাদের পাশ কাটিয়ে কোটাভিত্তিক পদোন্নতি মেধার চরম অবমূল্যায়ন। এটি সংবিধানের ২০(১) ও ২৯(১) অনুচ্ছেদেরও লঙ্ঘন।
২. টেকনিক্যাল ১০ম গ্রেড / Sub Assistant Engineer/ সমমান পদ সবার জন্ য উন্মুক্ত রাখতে হবে, যাতে ডিপ্লোমা ও বিএসসি ডিগ্রিধারী উভয়েই চাকুরীর পরীক্ষায় সুযোগ পান। বর্তমানে এই পদে প্রায় ১০০% কোটা শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের জন্য সংরক্ষিত, যা সাংবিধানিক ১৯(১), ২৭ ও সরকারি চাকুরী আইন ৭(১) লঙ্ঘন করছে। ৪ বছরের পূর্ণাঙ্গ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীদের জন্ য এই পদে আবেদনের কোনো সুযোগ না থাকা চরম বৈষম্য এবং মেধার চরম অবমূল্যায়ন।
৩. বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ “ইঞ্জিনিয়ার” পদবি ব্যবহার করতে পারবে না-এ জন্য আইন পাস করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। ডাক্তার, আইনজীবী, শিক্ষকের মতোই “ইঞ্জিনিয়ার” পদের জন্ য নির্ধারিত যোগ্যতা থাকা উচিত। IEB Act অনুযায়ী কেবলমাত্র বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররাই প্রকৃত “ইঞ্জিনিয়ার” হিসেবে স্বীকৃত। এই শব্দের অপব্যবহার বন্ধ করা জনস্বার্থে জরুরি।”
আন্দোলনকারীদের পক্ষে রুয়েট পুরকৌশল বিভাগের ১৯ সিরিজের শিক্ষার্থী শিহাব বলেন, “আমাদের সুস্পষ্ট কথা, দশম গ্রেডে যদি কোন টেকনিশিয়ান পরীক্ষা দিয়ে জয়েন করতে পারে আমাদের তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার বলে কিছু নেই — ইঞ্জিনিয়ার বলতে আমরা বুঝি বিএসসি ডিগ্রিধারী। যদি কেউ ফ্যাসিবাদী আচরণ করে আমাদের ন্যায্য দাবিতে বাধা দিতে চায়, তবে আমরা আরেকটি ‘জুলাই’ আনতে দ্বিধা করব না।”
রুয়েট যন্ত্রকৌশল বিভাগের ২২ সিরিজের শিক্ষার্থী মারুফ বিল্লাহ রিফাত বলেন, “আজকের এই তপ্ত রোদের ভিতর রাজপথে দাঁড়ানো আমাদের জন্য গর্বের নয়, বরং লজ্জার। আমরা চাই মেধার ভিত্তিতে সবাই পরীক্ষা দিক। কিন্তু শুধুমাত্র কোটাভিত্তিক নিয়োগ আমরা মানি না।”
যন্ত্রকৌশল ২০ সিরিজের শিক্ষার্থী তানজিমুল ইসলাম বলেন “আমরা কোনো ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে নই। আমরা চাই, প্রত্যেকেই তার যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাক। তবে নবম গ্রেডে বিএসসি ছাড়া কাউকে আমরা গ্রহণ করব না।”
একই বিভাগের শিক্ষার্থী মেহরান আল বান্না ইউশা বলেন, “ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এবং বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার বলে কিছু নাই,শুধুমাত্র বিএসসি ডিগ্রিধারীরাই ইঞ্জিনিয়ার।৯ম গ্রেডে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ব্যতীত অন্য কাউকে সুযোগ প্রদান করা যাবে না।”
উল্লেখ্য, আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ফ্যাকাল্টির ডীন সহ ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে ৩ দফা দাবির পক্ষে স্মারকলিপিও প্রদান করেন রুয়েটের শিক্ষার্থীরা।