সারাদেশ

তারাগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে থাই গেম-জুয়া ও ভিসা চক্রের দৌঁড়াত্ম

  রংপুর ব্যুরো ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৯:৩৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

রংপুরের তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ উপজেলা ও নীলফামারীর সৈয়দপুর এবং কিশোরগঞ্জ উপজেলায় দিনদিন বেড়েই চলছে থাই গেম-জুয়া ও ভিসা চক্রের দৌঁড়াত্ম। এই চক্রের সদস্যরা প্রবাসীদের টাকায় ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। ফেসবুকে ভিডিও বুস্ট করে ইমো নম্বর দিয়ে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের গাড়ি-বাড়ি ও চলন-বলনে স্থানীয়দের চোখ কপালে উঠেছে। প্রশাসনের নজর পড়ায় অনেকে গা ঢাকা দিয়েছে। এঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসী বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও দিয়েছেন।
এদিকে গত ৫ ফেব্রুরারি কিশোরগঞ্জ উপজেলার সলিমের বাজার এলাকা তাজুল ইসলাম নামের একজন গ্রেফতার করেছে। এসময় সলিমের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামকে আটক করলেও সে হাতকড়াসহ পালিয়ে যায়। এর আগে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় এ চক্রের মোট সাত সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এঘটনায় অজ্ঞাত ১১৮জনের নামে মামলা দায়ের করেছে ডিবি পুলিশ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতারক চক্র ডলার দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ইমো নম্বর কিনে মোবাইলে সেটআপ দেয়। ফেসবুক ভিডিওতে কোটি টাকার থাই গেমের উইন নম্বর ও ইউরোপের ভিসা দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। প্রবাসীরা সেই ইমোতে যুক্ত হলে প্রতারকরা কৌশলে তাদের টাকা হাতিয়ে নেয়।
প্রথমে কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নে এ প্রতারক চক্র গড়ে উঠে। স্বল্প শিক্ষিত ও নি¤œ আয়ের যুবকেরা এ চক্রের সদস্য। তাদের রয়েছে দামি মোটরবাইক ও নির্মাণ করেছে বহুতল বাড়ি। গত দুই বছরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এরা ডানা মেলেছে। মদদদাতা থাকায় তাদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। সম্প্রতি পাশ্ববর্তী রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের জয়বাংলা এলাকার আনারুল কন্ট্রাটরের ছেলে রাব্বানী মিয়া, তার জামাই বাবু মিয়া, একই এলাকার সোহান হাসান, মেহেদী মিয়া ও হাজারিহাট এলাকার মতিয়ার রহমানসহ কতিপয় প্রতারক চক্ররা তারাগঞ্জ সদর, কুর্শা, আলমপুর, চিকলীসহ পুরো তারাগঞ্জ উপজেলা ও বদরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নসহ সৈয়দপুর শহর ও বিভিন্ন গ্রাম এলাকায় এই চক্রটির সম্প্রতি দৌঁড়াত্ম বেড়েছে। অদৃশ্য মদদদাতা থাকায়থাই গেম-জুয়া ও ভিসা চক্রের সদস্যরা সহজ সরল মানুষজন, যুবক ও প্রবাসীদের টাকায় ফুলে-ফেঁপে উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতারক চক্রের সদস্যরা বলেন, প্রবাসীরা ভিডিও দেখে থাই গেমের গোপন নম্বর ও আকামার জন্য ইমোতে যুক্ত হয়। থাই সরকারের লটারি কার্যালয়ে ও ভিসার ক্ষেত্রে ইউরোপে চাকরি করার কথা জানানো হয়। টাকার বিনিময়ে থাই গেমের রেম্বল, ডাউন নম্বর অথবা ভিসার ক্ষেত্রে আবেদন ফরম নেয়। পরে তাদের ছবি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও কাগজপত্র নিয়ে গেম উইন অথবা ভিসা পাওয়ার কথা জানাই। বড় স্যার ও ভ্যাটের খরচ, ডলারে কনভার্ট, ভিসার ক্ষেত্রে বিমান ভাড়াসহ বিভিন্ন অজুহাতে একাধিকবার টাকা নেওয়া হয়। গেম ড্র হওয়া ও ভিসার তারিখের আগে তাদের ইমোতে ব্লক করে দেয়া হয়।
কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, তাদের ফেসবুক ভিডিওতে কোটি টাকার থাই গেমের উইন নম্বর ও ইউরোপের ভিসা দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। পরে সেই ইমোতে যুক্ত হলে প্রতারকরা কৌশলে তাদের টাকা হাতিয়ে নেয়। এতে প্রবাসীসহ তাদের পরিবারও প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
এবিষয়ে কিশোরগঞ্জ থানার ওসি পলাশ চন্দ্র মন্ডল বলেন, থাই গেম ও ভিসা প্রতারণার ঘটনায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। গত এক সপ্তাহে ৭ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ডিবি পুলিশ অজ্ঞাত ১১৮জনের নামে মামলা দায়ের করেছে। বর্তমানে এ চক্রের সদস্যরা অনেকে গা ঢাকা দিয়েছে। তবে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।