এস এম রাফি ১৭ আগস্ট ২০২৩ , ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
তিস্তা ও ধরলা বেষ্টিত লালমনিরহাট জেলায় শতাধিক চর রয়েছে। এসব চরে বাস করে হাজারো মানুষ। বন্যা আর খরায় মূলধারায় যোগাযোগের তেমন মাধ্যম না থাকায় এসব চরবাসীর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে মোষের গাড়ি। লালমনিরহাটে মহিষের গাড়ি যোগাযোগবিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরের জাহাজ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিভিন্ন চরে মোষের গাড়ির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে কর্মসংস্থানে নতুন দিগন্তের সূচনাও হয়েছে।
সরেজমিনে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন তিস্তা নদী বেষ্টিত সাতটি চরাঞ্চলের গ্রাম চর বৈরাতী, চর ভোটমারী, শৌলমারী চর, কাশীরাম, চরনোহালী, কাকিনা, ঘুরে দেখা গেছে এসব এলাকার যোগাযোগব্যবস্থায় একমাত্র বাহন হিসেবে স্থান করে নিয়েছে পরিবেশবান্ধব মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ি। এসব গাড়ি ব্যবহার করে অনেকে ভাগ্যের চাকাও ঘুরিয়েছেন। বালু আর মরা তিস্তার শাখা নদীর রাস্তাসহ কাদা রাস্তায় যেখানে ভ্যান, রিকশা, ট্রলি, ট্রাক যেতে পারে না সেসব রাস্তায় জনপ্রিয় বাহন হিসেবে মোষের গাড়ির কদর বেড়েছে।
জেলার সিংহভাগ রবিশস্য, ধান, পাট, আলু, বাদাম, ভুট্টা, পিঁয়াজ, মরিচ, ডাল এসব অর্থকরী ফসল চরাঞ্চলেই বেশি উৎপাদন হয়। কৃষকের উৎপাদিত ফসল হাটে নিয়ে যেতে না পারায় কম দামে ফড়িয়া-দালালদের কাছে বাধ্য হয়ে চরেই বিক্রি করতে হতো। বর্তমানে মোষের গাড়ি চালু হওয়ায় কৃষক এখন উৎপাদিত ফসল হাটে নিয়ে গিয়ে ন্যায্য দামে বিক্রি করছে। এসব চরাঞ্চলে শতাধিক মোষ ও ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে।
কাকিনা ইউনিয়নের বিনবিনিয়া আউলিয়ারহাট চর গ্রামের মহিষের গাড়ি চালক আবদুল হামিদ জানান, একসময় তার সংসার চলত না, খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটিয়েছেন পরিবার নিয়ে। মহিষের গাড়ি চালানোর শুরুর পর থেকে তার সংসারে এখন তেমন অভাব নেই। ভোটমারী গ্রামের মোষের গাড়ি চালক লতিফ মিয়া জানান, প্রায় পাঁচ বছর হলো তিনি মোষের গাড়ি চালান। তার দৈনিক আয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। আলুর মৌসুমে আয় আরও বেশি হয়।
একই কথা জানালেন মিনার বাজার এলাকার গাড়িচালক ফয়জার হোসেন। মহিষের পেছনে তাদের এক থেকে দেড়’শ টাকা খাদ্য বাবদ ব্যয় হয়। মোষের গাড়ির চাকা তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে আছেন। চরের বাসিন্দারা জানান, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থায় যেখানে কোনো যান্ত্রিক যান আসতে পারে না, সেখানে মোষের গাড়ি অনায়াসে আসছে। তারা সেই গাড়িতে চরে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে পারছেন। মোষ আর ঘোড়ার গাড়ি থাকায় আমাদের চলাচলে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।
ভোটমারী ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মাস্টার জানান, তাঁর ইউনিয়নে শতাধিক মহিষের গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি আছে। এ এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে চলাচলের একমাত্র মাধ্যে এটি। এই গাড়ি পরিবহন করে অনেক পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
কালীগঞ্জের তুষভান্ডার ইউপি চেয়ারম্যান নুর ইসলাম জানান, তাঁর ইউনিয়নে ৬০-৭০টি মোষের গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি আছে। আজ থেকে পাঁচ-ছয় বছর আগেও এ উপজেলায় মহিষের গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি দেখা যেত না, এখন প্রায় গ্রামেই ঘোড়ার গাড়ি ও মোষের গাড়ি হয়েছে। এগুলো যোগাযোগের জন্য চরাঞ্চলে বেশ পরিচিতি পেয়েছে এবং কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হয়েছে।