এস এম রাফি ১৭ অক্টোবর ২০২৩ , ৮:৪৭ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)-এর অনিয়ম-দুর্নীতির ফলে ছাতক পিআইও অফিস ঘুষ-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে এখন। স্থানীয় পর্যায়ের ক্ষমতাসীন দলের জন প্রতিনিধিদের যোগসাজশে পিআইও প্রকল্প চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারি অনেকে এসব অনিয়ম করছেন। কেউ কেউ প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে অগ্রিম টাকাও ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সচিত্র প্রমাণসহ অভিযোগ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরে সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ছাতকবাসীর সচেতন মহল। গ্রাম পাড়া মহল্লা ও তৃণমূলে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকা পালনকারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) বিরুদ্ধে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ফলে টিআর, কাবিখা ও কাবিটা মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রকল্পগুলো নামে আছে, মাঠে নেই।একই নামে একাধিকবাব প্রকল্প অনুমোদন করছেন প্রকল্প কর্মকতা । কিন্তু প্রভাবশালীদের সঙ্গে তাদের বিশেষ সখ্য থাকায় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও ধামাচাপা পড়ে দুনীতির কর্মকান্ড। এ ছাড়া অনেকের ফাইলই চাপা পড়ে থাকে জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের সিন্ডিকেটের সহযোগিতা। তদন্তের নামে নানা করে তদবিরের মাধ্যমে অভিযোগগুলো ধামাচাপা পড়ে যায়।এসব প্রকল্পের আত্মসাতের ফিরত দেয়ার নিয়ম থাকলে এসব আইন কেউ মানছেন না। এরপরও তারা অপ্রতিরোধ্য।দীর্ঘদিন প্রকল্প কর্মকর্তার কে এম মাহবুর রহমান ঘুষবাণিজ্য চালালেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কে এম মাহবুর রহমানের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি প্রকল্পে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বিশেষ করে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি বরাদ্দের টাকা নয় ছয় করা হচ্ছে।
এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নভুক্ত গ্রামাঞ্চলের স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ, কবরস্থান, গ্রামীণ রান্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট স্থাপন, মেরামত ও সংস্কারের জন্য সরকারি ও বিভিন্ন সংস্থার বরাদ্দ অর্থের সিংহভাগ তছরুপ হচ্ছে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে। এসব প্রকল্প বান্তবায়নের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের একাংশ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। টি আর, কাবিখা ৩০টি ও কাবিটা ৫৬ টিসহ মোট ৮৫টি প্রকল্প কাগজ কলমে থাকলেও এসব প্রকল্প বাস্তবে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব উপজেলা প্রকল্প কর্মকতার কে এম মাহবুর রহমানের বিরুদ্ধে কাজ না করে ভুয়া ভাউচার দিয়ে এসব প্রকল্পের চাল -নগদ টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব িিপ্রকল্পের মধ্যে ১২টি প্রকল্প প্রায় ২৬ লাখ টাকার প্রকল্প লুটপাটের ঘটনায় নিয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপজেলা প্রশাসন। এ তদন্ত কমিটিতে লুটপাটকারী কে এম মাহবুর রহমান (পিআ্ইও) নাম রাখা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
জানা যায় ২০২১-২২ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-চাল) ১ম পযাষে কর্মসুচির আওতায় উপজেলা পরিষদ ওয়ারি ১৩টি ইউপির সাড়ে ৯৬ মেঃটন চাল উত্তোলন করেন ১৬ টি প্রকল্প, ২য় পযাষে ১৪টি প্রকল্পের নামে সাড়ে ২২ মেঃ টন সহ ১শ’১৯ মেঃ টন কাজ না করে এসব চাল উত্তোলন করেন পিআইও সিন্ডিকেটরা। একই অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন (কাবিটা) ১ম পযাষে ২২টি প্রকল্পের নামে বরাদ্ধ প্রায় ২২লাখ ৯৯ হাজার ৭শ’৬৭ টাকা, ২য় পযাষে ৩০টি প্রকল্পের নামে বরাদ্ধ প্রায় ৪৫ লাখ ৯৯ হাজার ৫শ’৩৯ টাকা, ২য় পযাষে ১৪টি প্রকল্পের ১৭ লাখ ৬হাজার,৭শ’৪৬ টাকা ও তৃতীয় পযাষে ১৬টি প্রকল্পে ১২লাখ ৪০হাজার,৮শ’৮২ টাকাসহ প্রায় এক কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন পিআইও নিজেই। প্রকল্প কাগজ কলমে থাকলে ও এগুলো বাস্তবে মাঠে হদিস খোজে পাচ্ছে না। এসব প্রকল্পের নামের তালিকা কাজ গুলো উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার চেয়ারম্যান ও উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ভুয়া বিল জমা দিয়ে কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা গুলো ভাগ বাটোয়ারা করে নেন। এসব প্রকল্পের কাগজ কলমে থাকলে ও মাঠে নেই। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কর্মকর্তা একে মাহবুর রহমান একক কর্তৃত্ব স্থাপন করে বিভিন্ন ছলচাতুরির মাধ্যমে এসব প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এর সাথে জড়িতরা নিজেদের গাঁেয় সরকারি দলের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্রকল্প কমিটি কাজ না করেই ভূঁয়া বিল-ভাউচারে মালামাল উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন পিআইও মাধ্যমে। সিকিভাগ কাজ করলেও বরাদ্ধেও এসব টাকা হাতিয়ে নেন পিআইও সিন্ডিকেট চত্রæরা। প্রকল্প কর্মকতা বিভিন্ন প্রকল্পের সভাপতি ও সেত্রেæটারি নাম স্বাক্ষর নিয়ে পরে টাকা দেয়া হবে। তার হাতে প্রকল্পের ফাইল নিয়ে নিজেই চেক নিয়ে সোনালী ব্যাংক থেকে নগদ টাকা গুলো উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে দক্ষিন খুরমা ইউপির ৯টি প্রক্লপের ২৬ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রকল্প কর্মকতা কে এম মাহবুর রহমান কোমড় বেধে মাঠে নেমেছেন। ভূইগাঁও ছেগাপাড়া গ্রামের মাফিজ আলী ও আছকন্দর আলী এবং কুম্বায়ন গ্রামের আবদুল মানিক, আফজল হোসেন, কামরানসহ জানান, ইউনিয়নের সরকারি মাটি ভরাটসহ বিভিন্ন প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম লুটপাট করা হয়। মাটি ভরাট না করে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে বলে স্বপ্না মেম্বারনির দায়ের করা অভিযোগ থেকে তারা জানেন। ছেগাপাড়া গ্রামের মবশ্বির আলী বলেন, কয়েক টুকরি মাটি কুম্বায়ন পঞ্চায়েতি কবরস্থানে ফেলা হয়। জয়নাল হাজারী জানান, মাদরাসার মাঠে এক মুষ্টিও মাটি ফেলা হয়নি অভিযোগ নিস্পত্তির বিষয়ে ইউপি সদস্যা স্বপ্না বেগম জানান, ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানের অনুরোধে তার দায়েরকৃত লিখিত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগটি নিস্পত্তি করা জন্য উপজেলার নিবার্হী কর্মকতার বরাবরে অভিযোগ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের সাথে জড়িত রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক শ্রেনীর জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, পাতি নেতা ও তাদের দোসররা। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ন্যায় নিষ্টা ও সততার ভিত্তিতে কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর জনপ্রতিনিধিদের প্রকৃত চেহারা উন্মোচন হয়ে পড়ে। অমুকের চরিত্র ফুলের মতো আর পবিত্র থাকেনা। এলাকার উন্নয়নের জন্যে আসা সরকারি প্রকল্পের টাকা দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে নিজেদের ভূঁরিভোজসহ বসবাসের জন্যে অট্টালিকা গড়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এলজিএসপি, ১০টাকা কেজির চাল, ঢেউটিন, বিভিন্ন ভাতা টাকাসহ হতদরিদ্রদের মালামাল লুঠে-পুটে খাচ্ছে পিআইও সিন্ডিকেট চত্রæরা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দূর্নীতি হচ্ছে, ইউনিয়নের এক শ্রেনীর মেম্বার-চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় সরকার বিভাগে। এক্ষেত্রে সমুদয় টাকার ব্যয় খাতের ভূঁয়া মাষ্টাররোল অফিসে দাখিল করেছে বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির কারনে বিভিন্ন ইউনিয়নে আত্মসাতকৃত প্রকল্পে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। ফলে ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে এদের অব্যাহত দূর্নীতি-অকর্ম। এতে সরকার ও জনসাধারণ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এব্যাপারে প্রকল্প কর্মকতা কে এম মাহবুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি আংশিক সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন অনেক প্রকল্প মাঠের ছবি দেখে বিলের চেকের মাধ্যমে টাকা দেয়া হয়।