uadmin ৯ আগস্ট ২০২৩ , ৮:২৬ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় দেশে প্রথম বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পেল সমাজের অবহেলিত হরিজন সম্প্রদায়। উপজেলা জুড়ে অস্থায়ীভাবে ভাসমান হরিজনদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে হরিজন পল্লী। এতে করে উপজেলার প্রায় দেড় শতাধিক হরিজনের স্থায়ী আবাসস্থল ঠিকানার করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখাযায়,উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের সবুজপাড়া এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে হরিজন পল্লী আবাস। আবাসনের ঘিরে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। সারিবদ্ধ ভাবে লাল চাল বিশিষ্ট হলুদ রংয়ের সেমি পাকা ভবন দাঁড়িয়ে আছে। সাজানো গোছানো এই পল্লীতে আশ্রয় হয়েছে ৩০টি ঘরে প্রায় দেড় শতাধিক হরিজন তাদের পরিবার নিয়ে উঠতে শুরু করেছে। সমাজের অবহেলিত এসব হরিজনদের দুঃখ-কষ্ট ঘুচে স্থায়ী ঠিকানা পাওয়ায় আনন্দ বিরাজ করছে।
কথা হয় হরিজন পল্লীতে বসবাসরত সুবিধাভোগী সুমি রাণী বলেন,সমাজে আমাদের একটু ভিন্ন চোখে দেখে আর ঘৃণাও করে। ছোট ছোট সন্তান নিয়ে বিভিন্ন অফিসের বারান্দা কিংবা বাজারের দোকানের বারান্দার নিচে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিন রাত পার করতে হয়েছে। কেউ কোনদিন আমাদের জন্য ভাবেনি,খোঁজ রাখেনি। কি অসহনীয় কষ্টে আমাদের সুইপারদের জীবন কাটে তা বলে বোঝানো যাবে না। সরকার যে আমাদের মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করে স্থায়ী ঘরের ব্যবস্থা করেছে আমরা ভিষণ খুশি। এক বেলা কম খেলেও নিশ্চিতে রাতে পরিবার নিয়ে ঘুমাতে পারবো।
সুবিধাভোগী পারুল বলেন,বাপ-দাদা পূর্ব পুরুষ সকলেই রাস্তা,পরিত্যক্ত স্থানে তাদের জীবন কেটেছে। কিন্তু আমি স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারিনি যে আমাদের জন্য স্থায়ী ঘর হবে। বিনা পয়সায় জমিসহ পাকা ঘর পাবো এটা ভাবতেই চোখে পানি চলে আসে। সরকার যে এভাবে আমাদের মূল্যায়ন করবে যেন স্বপ্ন দেখার মতোই মনে হচ্ছে।
সুবিধাভোগী নেমু লাল বলেন,লজ্জা শরম খেয়ে আগে বাপ-ভাই,বোন,স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাঙ্গা ঘরে কোন রকমে দিন কেটেছে। খাবারের কষ্ট,থাকার কষ্ট নিয়ে যেখানে রাত সেখান কাত অবস্থায় দিন কেটেছে আমাদের। প্রশাসনের মাধ্যমে এই ঘর পেয়ে আমরা ভিষণ খুশি। এক বেলা কম খেলেও পরিবার নিয়ে নিশ্চিতে রাতে ঘুমাতে পারা শান্তি জুটেছে আমাদের ভাগ্যে।
সুবিধাভোগী মনি লাল বলেন, টিনশেড আধা পাকা ঘরের মধ্যে রয়েছে বারান্দাসহ ২টি কক্ষ,রান্না ঘর,লেট্রিন,নিরাপদ পানিসহ বিদ্যুতের ব্যবস্থা,ঘরের সামনে উঠান,শিশুদের জন্য খেলার মাঠ,শশ্মান,মন্দির। এমন হরিজন পল্লী পেয়ে এখান আর আমাদের যাযাবরের মতো জীবন কাটাতে হবে না। এখানে নিজেদের মতো করে আমরা বাঁচতে পারবো। চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানাযায়,প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ৪র্থ পর্যায়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় হরিজন পল্লী গড়ে তোলা হয়েছে।আজ ঘর সহ জমির কাগজ হস্তান্তর করা হলো। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিঞা চিলমারী সফরে আসেন। এসময় স্থানীয় প্রশাসন হরিজন সম্প্রদায়ের আবাসন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে হরিজন সম্প্রদায়ের ৩০টি পরিবারকে আবাসন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে প্রতিটি পরিবারের দুই লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে প্রতিটি ঘরে সাড়ে ১৯ফুট দৈর্ঘ্য,প্রস্থ ৫ফুট বারান্দাসহ দুটি কক্ষ,রান্না ঘর,বাথরুম এবং পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হয়েছে। হরিজন পল্লীতে প্রবেশের জন্য ১০ ফুট প্রশস্তের একটি রাস্তা রয়েছে। থাকবে চারপাশে। এছাড়াও শিশুদের খেলাধুলার মাঠ,শিশু ও বড়দের জন্য পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা,কমিউনিটি সেন্টার,শ্মশান এবং মন্দির নির্মাণ চলমান রয়েছে।
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ বলেন,হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য হরিজন পল্লী দেশে একটি ইউনিক মডেল হিসেবে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রীর অনন্য উদ্যোগের কারণে চিলমারীতে এক একর জমিতে ৩০টি পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। এই পল্লীতে নাগরিক সুবিধার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও এখান বসবাসরত হরিজন সম্প্রদায়কে উন্নয়নের মূল ধারায় আনতে তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। বাঁচ্চাদের পড়াশোনা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশে প্রথম হরিজন পল্লী সেই প্রেক্ষিতে দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পে হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।