খুরশিদ বিন নজির আহমেদ ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ , ১২:২৩ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
২০০৩ সালের কথা তখন খুব ছোট্ট ছিলাম। কিন্তু অনেক কিছু না বুঝলেও কিছু কিছু বুঝতাম।
কালের আবর্তে প্রতিটি ক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে পরিবর্তন। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক,অগ্রগতির সাথে সাথে ঘর, বাড়ি কৃষি,বিদ্যুৎ যাতায়াত, রেডিও, টেলিভিশন, সিনেমা সহ সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া!
ফলশ্রুতিতে ক্রমান্বয়ে আমরা হারিয়ে ফেলেছি সেই সোনালী অতীত! নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানে না আমাদের সমৃদ্ধ অতীত সম্পর্কে।
এই না জানার কারণে হাল চাষ করা, গরুর গাড়ি মারা, রেডিও, সাদাকালো টেলিভিশনের কথা তাদের কাছে রূপকথার গল্প মনে হয়। তাঁরা মানতেই চায় না যে,সেই দিন গুলো ছিলো অনেক মধুর।
ছিলো শ্রদ্ধা, ভালবাসা, বন্ধুত্বের।
কেমন ছিলো সেই সোনালী অতীত গুলো!
বড়ো ভাইয়া শহরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।
১০ টা গ্রাম খোঁজ নিয়েও মোবাইল নামক বস্তু কি জিনিস খুঁজে পাওয়া যেত না। যদিও এখন এসমস্ত কথা চিন্তা করাটা মানুষ পাগল বলবে। বলবে না কেন?? এখন তো সবার হাতে একটা না বরং ২/৩ টা করে মোবাইল পাওয়া যায়।
কিন্তু সেই সময়ে কথা বলার জন্য মা আমাকে কোলে করে নিয়ে যেতেন। ভাইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে।
আমাদের প্রায় ৫টি গ্রাম মিলে শুধু একজনের কাছে মোবাইল ছিলো। তারপরও গ্রামের মহিলারা ৪/৫ জন মিলে একসঙ্গে কথা বলার জন্য যেতেন।
একদিন মা আমাকে এবং আমাদের গ্রামের আরও কয়েকজন কে নিয়ে কথা বলার জন্য সেই মোবাইল দোকানদারের কাছে যান। কিন্তু বেচারা দোকানে সেদিন ছিলো না। বাড়িতে ছিলো।
পরে মা সহ সবাই তার বাড়িতে গিয়ে দোকানে ডেকে নিয়ে আসেন। পরে সিরিয়াল করে কথা বলেন সর্বোচ্চ ৪/৫ মিনিট হবে।
আবার শুধু নিজের কথা বলতেন অপর পাশের কথা শুনতেন না। অপর জন শুধু হ্যা, হ্যা, ঠিক আছে, ঠিক আছে, সব নিয়ে আসবো, এগুলো বলতেন।
মিনিট প্রতি মনে হচ্ছে ৫/৬ টাকা করে দেওয়া লাগতো। এইজন্য অনেকে মাসে একবারের চেয়ে বেশি কথা বলতেন না।
তখনকার মোবাইল ছিলো “সিটিসেল” সিমও ছিল “সিটিসেল”।
আবার অনেক গুলো ছিল দেখতে কেমন জানি পেটমোটা।
আহারে তখন কি দিন ছিলো! নিজের কোন মোবাইল নেই অপরের মোবাইল দিয়ে কথা। তাও আবার যতটুকু না হলে নয়। ততটুকু কথা বলেই ক্ষ্যান্ত হয়ে যেতো।
আর এখন যেদিকে তাকিয়ে দেখি শুধু শুধু মোবাইল আর মোবাইল!কত রঙের!কত ডিজাইনের! অনেকে মোবাইল চালায় ঠিক। কিন্তু কোন মোবাইল? কোন ব্রান্ডের! বলতে পারেন না!
আমাদের থেকে হারিয়ে গেছে ডাক যোগাযোগের পিওনো। যিনি চিঠি নিয়ে ভরদুপুরে বাড়ির আঙ্গিনায় উপস্থিত হয়ে যেতেন। আমি ও তখন চিঠি লিখেছিলাম। সেই গল্প অন্য দিন শোনাবো।
সব কাজ মানুষ অফলাইনে করতেন অনলাইন কি জিনিস একেবারে বুঝতেন না।
সব লেনদেন হাতের মাধ্যমে নগদ হয়ে যেতো। তখনকার সব চোর, বাটপার, ধোঁকাবাজ, ডাকাতরাও হাতাহাতি টাকা চুরি করতো। এরকম বহু গল্প আমরা শুনেছি।
লেনদেন হতো হাতে হাতে আর টাকা থাকতো পকেটে। কিন্তু এখন সব আপডেট ভার্সন!
লেনদেন আপডেট হয়েছে চোর,,বাটপার, ডাকাতদেরও আপডেট হয়েছে। ধোঁকাবাজির পন্থা ও আপডেট হয়েছে।
আমার ক্লাসমেট একেবারে সহজসরল একজন মানুষ। তার সাথে পরিচয় ফেসবুক ফ্রেন্ড । তাকে মেসেজ দিয়ে ধোঁকাবাজ বলতেছে। আমি তো প্রবাসে থাকি। আপনি একটু “বিকাশের”দোকানে যান। দোকানদার কে বলবেন। আমি তাকে “নগদে” টাকা পাঠাবো। সেই টাকা দোকানদার আমাকে “বিকাশে” পাঠিয়ে দিবেন। এরপর ধোঁকাবাজ দোকানদারের সঙ্গে খুব চটকদার কথা বলেন। এবং তার ছবিও চেয়ে নেন। অতঃপর ধোঁকাবাজ একবার বিশ হাজার আরেকবার পাঁচ হাজার টাকার মেসেজ “নগদে” পাঠিয়ে দেন।
দোকানদার সে ব্যস্ততার কারণে একাউন্ট চেক না করেই ধোকাবাজের বিকাশ নাম্বারে পঁচিশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন।
পরবর্তীতে যখন দোকানদার তার “নগদ” একাউন্ট চেক করেন। তখন দেখে ধোঁকাবাজ তার একাউন্টে শুধু মেসেজ দিয়েছে টাকা পাঠায় নি।
ধোঁকাবাজ চোখের পলকে পঁচিশ হাজার টাকা ইনকাম করে ফেললো। সে এই টাকা তাঁর পরিবারের মা,বাবা, স্ত্রী, তার সন্তানদেরকে জন্য খরচ করবে। গরুর গোস্ত ভুনা করে খাওয়াইবে।
আহ!চুরির টাকার কি অতুলনীয় স্বাদ, মজাই আলাদা।
কিন্তু দোকানদার আমার ক্লাসমেট থেকে এক টাকাও কম নেননি। যদি ও এখানে তার-ও ভুল ছিলো।
যেহেতু বড়ো একটা লেনদেন হচ্ছে তার উচিৎ ছিল একাউন্ট চেক করা।কিন্তু সে করেন নি উল্টো আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন।
আহ মানুষের কি মানবতা !!!
একটুও চিন্তা করে না। আমি কার সঙ্গে কথা বলছি।
কে সে উনি?? তার কি কোন সম্মান নেই।
টাকা পেয়ে বেজায় খুশি, আনন্দ, হৈহল্লা করেন।
সমস্যা নেই আপনি খুশি আমারও খুশি আলহামদুলিল্লাহ।
তবে সবাই কে খুব সচেতন হতে হবে। যে কেহ মেসেজ দিলেই তার কোন কথা শোনা যাবে না। টাকা চাইলেই পাঠানো যাবে না। পরিচিত ব্যতীত অপরিচিত কোন লোকের মেসেজের রিপ্লাই দিবেন না।
অন্যথায় টাকা খুইয়ে আফসোস করবেন!
একেবারে নিশ্চিত হয়ে পরে টাকা পাঠিয়ে দিবেন।
আল্লাহ এরকম ধোঁকাবাজ দের থেকে হেফাজত করুন। আমীন।