বিবিধ

নরসিংদীতে আঃ বাতেনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের দাবী জানিয়েছেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা

  বিশেষ প্রতিনিধি: ৪ জুলাই ২০২৪ , ৩:০৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

Oplus_131072

নরসিংদী জেলা মনোহরদী উপজেলার বীরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আঃ বাতেনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সনদ অর্জন এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাগণ।

আঃ বাতেন বীরগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে। অভিযোগ উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৩৫ বছর পর আঃ বাতেন টাকার বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধ সনদ নিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি বরং তিনি এবং তার পরিবার মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)’র সভাপতি বরাবর অমুক্তিযোদ্ধা আঃ বাতেনের সনদ বাতিল এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা স্থগিতের আবেদন জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ তোফাজ্জল হোসেন। আবেদনপত্রে আঃ বাতেনকে ভারত থেকে ট্রেনিং না নেয়া, যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা, যুদ্ধকালীন সময়ে কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন বা সহযোদ্ধাদের নাম, পরিচয় বলতে না পারার কথাও বলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গঠিত উপজেলা কমিটি কোনোরকম যাচাই বাছাই না করেই আঃ বাতেনের নাম লিপিবদ্ধ করেছেন বলেও দাবী করা হয়েছে। আবেদনপত্রের স্বপক্ষে স্বাক্ষর করেছেন বীরগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দীন, পীরপুর গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন, কৃষ্ণপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা উসমান গণি, আলহাজ্ব মাস্টার মোহাম্মদ মফিজ উদ্দিন, চরমান্দালিয়া ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি সওদাগর মাঝি, কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামিলীগ সভাপতি নূর হোসেন পণ্ডি, সাধারণ সম্পাদক জামালসহ আরও অনেকে। যদিও অভিযোগটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। অভিযোগে উল্লেখিত স্বাক্ষীদের মধ্যে সওদাগর মাঝি এবং আলহাজ্ব মাস্টার মোহাম্মদ নফিজ উদ্দিন ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন।

চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ২১ জানুয়ারি পুনরায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আ: লতিফ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) চেয়ারম্যান বরাবর, ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা মো: আঃ বাতেনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের দাবীতে আবেদন করেন। আবেদনপত্রের স্বপক্ষে স্বাক্ষর করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা উসমান গণি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২৬ জুন ২০২৪ তারিখে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে জামুকাতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। যদিও শারীরিক অসুস্থতার অযুহাতে শুনানীতে অনুপস্থিত ছিলেন অভিযুক্ত মো: আঃ বাতেন।

এলাকাবাসীর দাবি আঃ বাতেনের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্তির পর থেকেই বেড়ে যায় পারিবারিক প্রতাপ। বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদকে কাজে লাগিয়ে ৩ ছেলেমেয়ের প্রত্যেকেই সরকারি চাকুরীতে যোগদান করেছেন। বড় মেয়ে নার্গিস আক্তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, ছোট ছেলে কাওসার হোসেন স্বপন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)’র উপ-সচিব (আইন), বড় ছেলে নাদিম মাহমুদ নয়ন চরমান্দালিয়া ইউনিয়ন ছাত্র শিবিরের একসময়ের প্রভাবশালী সভাপতি ছিলেন। ছাত্রদলের সহযোগিতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোন দর্শন বিভাগে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক নরসিংদীতে সুপারভাইজার পদে তৃতীয় শ্রেণির চাকুরীতে যোগদান করেন। ধীরে ধীরে নিজের খোলস পালটে সিবিএ নেতা হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক নরসিংদী জেলা সিবিএ সভাপতি পদ ছাড়াও নরসিংদী জেলা কৃষকলীগের যুগ্ন আহবায়ক পদে দায়িত্ব পালন করেন একসময়ে ইসলামি ছাত্রশিবির নেতা নাদিম মাহমুদ। ২০১৯ সালে অফিসার পদে পদোন্নতি পেয়েছেন তিনি। ১৯৮৮৪ টাকা বেতনে চাকুরী করেও নরসিংদী জেলা সদরে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছেন দশতলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট বিলাশবহুল বাড়ি।

এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাদিম মাহমুদকে প্রধান অতিথি হিসেবে দেখা যায়। দান, দক্ষিণাতেও এগিয়ে। আসলে তার এই অর্থের উৎস কি? জানে না কেউ! সবার ধারণা শুরুটা মুক্তিযোদ্ধা সনদ। বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার পর থেকেই আঃ বাতেনের পরিবার যেনো হাতে পেয়েছে আলাদিনের চেরাগ। আঃ বাতেনের মতো অমুক্তিযোদ্ধা এবং তার পরিবারের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা শুধু মুক্তিযোদ্ধা নয়, এলাকাবাসীর জন্য লজ্জাজনক। এই লজ্জার তিলক মুছে ফেলতে আঃ বাতেনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকার সর্বস্তরের জনগণ।