সদরুল আইন, স্টাফ রিপোর্টার ৭ জানুয়ারি ২০২৪ , ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানে দেশের প্রতিটি এলাকায় সক্রিয় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে আকাশে হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং দুর্গম এলাকায় ব্যবহার করা হচ্ছে স্যাটেলাইট। গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে যেন নাশকতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি কেউ বা কোনো গোষ্ঠী সৃষ্টি করতে না পারে, সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত সাইবার প্যাট্রলিং করছেন।
ভোটার, ব্যালট ও ভোটের সরঞ্জামাদির নিরাপত্তায় ভোটকেন্দ্রের ভেতরে থাকবে দুই লাখের বেশি অস্ত্রধারী পুলিশ-আনসারসহ প্রায় সাড়ে ৬ লাখ নিরাপত্তাকর্মী। পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রের আশপাশে এবং ভোটার আসা-যাওয়ার সড়কে দায়িত্ব পালন করবেন লক্ষাধিক সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্য।
যারা ভোটের মাঠে সহিংসতাকারীদের পাশাপাশি ভোটারদের ভোটদানে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন্স) আনোয়ার হোসেন বলেন, সারাদেশে ১ লাখ ৭৫ হাজার পুলিশ সদস্য নির্বাচনী নিরাপত্তায় কাজ করছেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের ভেতর থাকবে পুলিশ ও আনসারের একটি দল। কেন্দ্রের বাইরে থাকবে টহল দল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স।
তারা কেন্দ্রের আশপাশে অবস্থান করবে এবং কেউ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত করার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া তৈরি থাকবে রিজার্ভ ফোর্স। কোনো ধরনের গোলযোগ দেখা দিলে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে।
পরিসংখ্যান বলছে, সারাদেশে ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন ভোটার প্রায় ৪২ হাজার কেন্দ্রে ভোট দেবে। ভোটকেন্দ্র ও ভোটারদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবে প্রায় সাড়ে সাত লাখ নিরাপত্তাকর্মী।
সেই হিসাবে প্রতি ১৬০ জন ভোটারের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন একজন করে নিরাপত্তাকর্মী। সারাদেশের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৫-১৭ নিরাপত্তা সদস্যের একটি দল মোতায়েন করা হবে। ১০ হাজার ৩০০ ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সশস্ত্র তিন পুলিশসহ ১৬-১৭ জনের একটি দল থাকবে।
এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে।
র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, নির্বাচনে র্যাবের প্রায় ৭০০টি টহল দল ছাড়াও সাদা পোশাকের সদস্যরা থাকবেন।
ভোটদানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে। ভোটকেন্দ্র ও কেন্দ্রসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং ভোট দিয়ে মানুষ যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা করবে র্যাব। টহল দল ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের গুজব প্রতিরোধে সাইবার পেট্রোলিংয়ের কাজ চলছে।
থাকবে ডগ স্কোয়াড, বোম্ব স্কোয়াড। বিশেষ প্রয়োজন হলে আমাদের হেলিকপ্টার স্ট্যান্ডবাই থাকবে।
সূত্র জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ভোট বর্জনের ডাক দেওয়ায় ভোটকেন্দ্রগামী ভোটারদের নিরাপত্তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ ছাড়া শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকাতেও সংঘর্ষ-সহিংসতার শঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ফরিদপুর-৩ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ. কে. আজাদের নির্বাচনী এজেন্ট ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল হক ভোলা মাস্টারকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভোটের সময় সহিংসতার শঙ্কায় ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার পাশাপাশি ভোটারদের বাসস্থান থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিকল্পনা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ১৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ট্রেনসহ ৮টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগুন দেওয়া হয়েছে ১০টি স্থাপনায়। এর মধ্যে রয়েছে ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি উচ্চ বিদ্যালয়।
বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা সাদা পোশাকে তথ্য সংগ্রহ করছেন, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নাশকতা প্রতিরোধে বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে।
নির্বাচন ঘিরে সন্দ্বীপে প্রথমবারের মতো বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সশস্ত্র সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও নাশকতাকারীদের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যেকোনো সহায়তায় জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ প্রস্তুত থাকবে।
সশস্ত্র বাহিনীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে (এএফডি) কাজ করছে সমন্বিত সেল। সেখান থেকেও সারাদেশের ভোটের মাঠের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় আরও একটি সেল কাজ করবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মাধ্যমে ভেরি স্মল অ্যাপারচার টার্মিনাল (ভিস্যাট) পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম ৩৫টি বিওপিতে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করবে বিজিবি। দুর্গম এলাকায় কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ভিস্যাটের মাধ্যমে তথ্য পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক বলেন, নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সারাদেশে ৫ লাখ ১৭ হাজার ১৪৩ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে মোট ১২ জন করে আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে গতকাল থেকেই ‘অনসাইড আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ওআইভিএস)’ নামে বিশেষ ডিভাইস নিয়ে মাঠে নেমেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন । চেকপোস্টে সন্দেহভাজনদের ডেকে আঙুলের ছাপ নিয়ে অপরাধী চিহ্নিত করা হচ্ছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ওআইভিএস ডিভাইসের মাধ্যমে আঙুলের ছাপেই বেরিয়ে আসবে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের নাম-ঠিকানা। ধরা পড়বে ছদ্মবেশে আত্মগোপনে থাকা অপরাধীদেরও। ভোটকেন্দ্রের সামনে সন্দেহভাজনরা ঘোরাঘুরি করলেই তাদের আঙুলের ছাপ নেবে র্যাব।