রাজনীতি

নির্বাচনে যাচ্ছে জামায়াত,১০০ আসনে প্রার্থি চুড়ান্ত

  এস এম রাফি ৫ অক্টোবর ২০২৩ , ৯:২৮ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

বাইরে আন্দোলন, যুদ্ধাংদেহী ভাব থাকলেও আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুদ্ধাপরাধী দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলাম।

দলটির সর্বশেষ মজলিশে সূরা (উচ্চপর্যায়ের বৈঠক) থেকে সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং এরই মধ্যে সারাদেশের সকল সাংগঠনিক পর্যায়ে দলের এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য যে, চলতি বছরের ১০ জুন দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর প্রকাশ্যে আসে জামায়াত। ওই দিন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বড় ধরনের জমায়েতের মাধ্যমে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির জানান দেয় দলটি।

এরপর থেকেই রাজনীতিতে জামায়াতকে নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জামায়াতের এই সক্রিয়তার পিছনে সরকারের ইন্ধনের কথাও কোনো কোনো মহল মনে করছে।

যদিও ওই দিন সমাবেশে জামায়াত সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছিল এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করেছিল। এরপর জামায়াত নানারকম কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামছে।

তবে আন্দোলনের মাঠে থাকলেও কৌশলগত কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট করে জামায়াত নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণের কাজ করছে বলে জানা গেছে।

জামায়াতের একাধিক সূত্র বলছে, অন্তত একশটি নির্বাচনী এলাকায় তারা প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এই চূড়ান্ত প্রার্থীরা ইতিমধ্যে মাঠে বিভিন্ন রকমভাবে প্রচারণা করছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে জামায়াতকে কি সরকার ছাড় দিবে এমন একটি প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘোরপাক খাচ্ছে।

বিশেষ করে বিএনপির যেখানে চূড়ান্ত আন্দোলনের হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে তখন জামায়াতের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত একটি বড় ধরনের ইঙ্গিত বহন করে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

জামায়াতের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেছেন, তাদের রাজনৈতিক নিবন্ধন না থাকলেও তারা স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচনে প্রার্থী দেবে।

এদিকে জামায়াত যদি বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচনে যায় তাহলে অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের দ্বার উন্মোচন হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তবে জামায়াতের এই সিদ্ধান্তকে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হিসেবে দেখছেন কোনো কোনো মহল। যদিও সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জামায়াতের সাথে তাদের সমঝোতার বিষয়টি অস্বীকার করছেন।

তারা বলছেন, জামায়াতের সাথে সরকারের সমঝোতার কোনো প্রশ্নই আসে না। জামায়াত নির্বাচনে আসবে কি আসবে না সেটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত।

জামায়াত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয়। তারা নির্বাচন করল কি করল না এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নাই।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা রকম কারণে হয়তো জামায়াত নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা হয়তো জামায়াতকে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছে।

এছাড়া গত ডিসেম্বর প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টে জামায়াতের প্রতি এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন দেখা গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।

এছাড়াও বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছে সেখানে জামায়াত হয়তো সুযোগ নিতে চাইবে। আর এ রকম পরিস্থিতিতে, জামায়াত যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তাহলে সরকার হয়তো তাদেরকে নির্বাচনের মাঠে নামার একটা সুযোগ দিবে।

আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সংগঠনকে নতুন করে পুনর্বিন্যাস করা এবং নতুন করে সংগঠিত করার একটি সুযোগ পাবে জামায়াতে ইসলামী।

আর এই পরিকল্পনা থেকেই জামায়াত হয়তো আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সবাইকে একটি চমক দেখাতে চায়।