সম্পাদকীয়

ন্যায্যতাভিত্তিক পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধির বাজেট চাই

  এস এম রাফি ২ আগস্ট ২০২৩ , ১০:৩১ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

সারাবছরই বাজেট নিয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা ও দিক-নির্দেশনা হয়ে থাকে। কিন্তু নতুন অর্থবছরের প্রাক্কালে জুন মাস হচ্ছে সংসদে বাজেট প্রাক্কলন, উপস্থাপন ও প্রাক্কলিত সম্পূরক বাজেটের প্রামাণীকরণের সময়। এ মাসে রাজস্ব বাজেট সহ পুরো বাজেট সংসদে উত্থাপিত হয়। গত ১ জুন সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৭লক্ষ একষট্টি হাজার সাতশ পচাঁশি কোটি টাকার বাজেট পেশ হয়।

বাজেট পেশ হওয়ার পর থেকেই বাজেট সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠন মিলে সবাই নানা বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরছেন, তাদের সুবিধা-অসুবিধাসহ নানা চাওয়া-পাওয়ার কথা বলছেন। এরই ধারাবাহিকতায় পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন নিয়ে যারা কাজ করেন তারাও এ বিষয়ে বিভিন্নভাবে যেমন, বাজেট প্রতিক্রিয়া সভা, টেলিভিশনে, রেডিও তে আলোচনায় উপস্থিত থেকে কথা বলাসহ পত্রিকায় কলাম লেখা ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের মতামত তুলে ধরছেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও নানা আলোচনা চলমান রয়েছে বাজেটে পানীয়জল সহ স্যানিটেশনে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য।

সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে:
১. পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন সংক্রান্ত মেগা প্রকল্প নেওয়ার জন্য।
২. মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারি ভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া।
৩. জনপ্রতি পানি, স্যানিটেশনের বাজেট বাড়ানো। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণে দেখা গেছে জনপ্রতি পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন বাজেট মাত্র ৫৭৮ টাকা। অথচ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা: ৬ অর্জন করতে হলে জনপ্রতি বাজেট হওয়া উচিত প্রায় ১২০০ টাকা।
৪. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূল অঞ্চলের একটি বৃহৎ অংশ প্রায়ই দূর্যোগের শিকার হয় এবং অবকাঠামোগত ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই ক্ষতি মোকাবেলায় উপকূল অঞ্চলে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন খাতে বাজেট বৃদ্ধি করাসহ টেকসই ও লাগসই ব্যবস্থাপনা দরকার। বাজেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
৫. গ্রামীন, চর, হাওড় ও পাহাড়ি অঞ্চলে টেকসই পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থা উন্নয়নে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দেওয়া।
৬. নিরাপদ পানির জন্য পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে পয়োনিষ্কাশন ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনাকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। নিরাপদ স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, শহরের চেয়ে গ্রামপর্যায়ে অগ্রগতি তুলনামূলক ভালো। গ্রামে ৪২ শতাংশ ও শহরে ৩৪ শতাংশ মানুষ নিরাপদ স্যানিটেশনের সুবিধায় এসেছে।
৭. বাজেট বরাদ্দের বৈষম্য ঘোচানো। এডিপি বাজেটে আধা শহর ও নগরায়ণের প্রক্রিয়ায় থাকা গ্রামগুলোতে ওয়াশ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া।
৮. জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা সমাধানে ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা: ৬ অর্জনের বাধাগুলোকে চিনহিত করার জন্য বাজেট ট্র্যাকিং গ্রহণ করা।

সরকার দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত, অবহেলিত, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও এতিমদের কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্থানিক বৈষম্য চিহ্নিত করে এবারের বাজেটে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে; তবে, কিছু খাতে বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। সর্বজনীন পানি ও স্যানিটেশন সেবার মূল ধারনা হচ্ছে- যারা পানি ও স্যানিটেশন সেবা থেকে বঞ্চিত তাদের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং সকলকে সেবার আওতায় আনা।

দেশের শতভাগ মানুষের জন্য সুপেয় পানি ও নিরাপদ টয়লেটের ব্যবস্থা না করতে পারলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য- ৬ অর্জন বলা যাবে না। মূল্যস্ফিতির নিয়ন্ত্রণের দোহাই দিয়ে এই খাতকে অবহেলায় রেখে অন্যান্য সূচকের উন্নয়ন দেখালে হবে না। নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি হচ্ছে স্বাস্থ্য ঠিক রাখা বা থাকার পূর্ব শর্ত। আর স্বাস্থ্যই ঠিক না থাকলে উপার্জন, প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঠিক হবে না।

বাজেট আলোচনায় খাত ভিত্তিক গরিবের পক্ষে দাবি তোলার কেউ না থাকায় প্রনোদনা বা বিভিন্ন ভাতা বিতরনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের উপসংহার টানা হয়। সুপেয় পানি ও প্রয়োজনীয় টয়লেটের মত জনগুরুত্বপূর্ণ খাতকে পাশ কাটিয়ে পুঁজিবাজার, ব্যংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসেবটাই কষা হচ্ছে।

সুতরাং বৈশ্বিক মন্দা এবং সাম্প্রতিক মহামারীর সময়ে এই বাজেটে উৎপাদন ও জীবনমান ঠিক করার উপর জোর দিয়ে ন্যায্যতাভিত্তিক পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধির বাজেট চাই। লেখক: উপ-নির্বাহী পরিচালক, ডরপ্

সূত্র: ব্রেকিং নিউজ।