এস এম রাফি ১৭ অক্টোবর ২০২৩ , ১০:৫৮ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
আতাউর রহমান বিল্পব, কুড়িগ্রাম: পিতা-পুত্রের অবৈধ সম্পর্কের ফসল কাজের মেয়ের গর্ভে। প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে সাড়ে সাত লাখ টাকায় রফাদফা। তবে এই গর্ভবতী কিশোরীর হদিস মিলছে না। তাঁর জীবন সংকটাপন্ন। আত্মগোপনে রেখে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার চেষ্টা করছে এই চক্রটি।
প্রায় বছর চার আগে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দিনমজুরের ১১ বছর বয়সী শিশু কন্যাকে কাজের মেয়ে হিসেবে বাড়িতে নিয়ে আসেন প্রভাবশালী হারুন মোল্লা নামের এক ব্যক্তি। শিশুটি যখন কৈশরে পা রাখে ঠিক তখনই বাড়ির মালিক ও তার কিশোর পুত্র মোল্লা সাফি(১৬)র কু-নজর পরে মেয়েটির উপর। পিতা-পুত্রের লালসার স্বীকার হতে হয় মেয়েটিকে। মালিক পক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় পাশবিক যৌন নির্যাতন সহ্য করে অসহায় মেয়েটি।পিতা-পুত্রের যৌন নিপীড়নের স্বীকার হয়ে কাজের মেয়ে এখন ৯ মাসের অন্তঃসত্তা।
এমন নেক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে। অভিযুক্ত হারুন মোল্লার বাড়ি বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের মন্ডলের হাট মোল্লাপাড়ায় হলেও তিনি বসাবাস করেন কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার সরদার পাড়া। ভুক্তভোগী কিশোরীর (১৫) বাড়ি একই ইউনিয়নের আঠারপাইকা গ্রামে।
সরেজমিনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নারী-পুরুষ জানায়, প্রায় চার বছর আগে ওই কিশোরীকে কাজের মেয়ে হিসেবে হারুন মোল্লা শহরের বাড়িতে নিয়ে যায়। সে সময় মেয়েটির বয়স ছিল প্রায় ১১ বছর। কিন্তু প্রতিনিয়ত হারুন মোল্লা কাজের মেয়েকে দিয়ে তার শরীর টিপে নিতো। মেয়েটির শরীরে পরিবর্তন ঘটলে নজর পরে হারুন মোল্লার। প্রায় সময় পাশবিক নির্যাতন চালাতেন তিনি। শুধু তাই নয় হারুন মোল্লার কিশোর ছেলেও মেয়েটির উপর যৌন নিপীড়ন চালাতো। এক পর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্তা হয়ে পড়লে এমন নেক্কারজনক ঘটনা প্রকাশ পায়। পরে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে বেশ কিছু দিন আগে হারুন মোল্লার ছেলেকে দিয়ে ভুয়া কাবিন নামা করে বিয়ের নাটক সাজানো হয়। এর কয়েক দিনের মাথায় সেই বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটান প্রভাবশালী চৌকষ হারুন মোল্লা। এজন্য তাকে গুণতে হয়েছে সাড়ে সাত লাখ টাকা।
সূত্রটি আরও জানায়, গত এক সপ্তাহ আগে দুর্গাপুরের এক জনৈক কাজীর মাধ্যমে এই অপকর্ম সংঘটিত হয়। আর এর পেছনে মদদ দাতা হিসেবে রয়েছেন পার্শ্ববর্তী ধরণীবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এরশাদুল হক। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সাড়ে ৭ লাখ টাকা রফাদফা হলেও ভুক্তভোগী পরিবারে দেয়া পাঁচ লাখ টাকা। এরশাদুল হক প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়নি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মেয়েটিকে অজ্ঞাত স্থানে লুকিয়ে রাখায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে মেয়ের বাবার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে ধরণীবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান এরশাদুল তাকে নিয়ে সটকে পড়েন।
অভিযোগ রয়েছে এই পিতা ও পুত্র দুজনে কথিত সাংবাদিক পরিচয়ে মানুষকে হয়রানি, ব্র্যাকমেইল করে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় এবং আর প্রভাব খাটানোর কারনে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
অভিযুক্ত হারুন মোল্লা বলেন, মেয়েটি আমার ছেলের বউ পারিবারিকভাবে বিষয়টি ফয়সালা হয়েছে। মেয়েটি গরীব বিধায় দেনমোহর সাড়ে ৭ লাখ টাকা করা হয়েছিল। তবে অনাগত সন্তান পিতৃ পরিচয় পাবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
এ বিষয়ে ধরণীবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান এরশাদুল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বুড়াবুুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান এরশাদ বলেন, ডিভোর্সের ঘটনাটি লোক মুখে শুনেছি। উভয় পরিবারের কেউ আমাকে জানায়নি। কিভাবে কি হয়েছে এসবের কিছুই জানা নেই।