এস এম রাফি ৯ মার্চ ২০২৩ , ১১:৫৫ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগের ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে থাকছে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার হবেন প্রবাসীরা। দূতাবাসে নিযুক্ত জনবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে ইসির দায়িত্ব।
প্রবাসীদের ভোটার করার যে নীতিমালা রয়েছে, তা এই প্রক্রিয়ায় আর থাকছে না। নতুন সিদ্ধান্তের সঙ্গে পুরাতন নীতিমালা সাংঘর্ষিক বলে বলে মনে করছেন ভোটার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্তরা।
বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী, প্রবাসীদের ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অর্থ লাগত না। নতুন উদ্যোগের ফলে জনপ্রতি গুনতে হবে ৫০ দিরহাম। এই অর্থ নেওয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। প্রবাসীদের ভোটার করার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে বিভিন্ন সংগঠনের সহায়তা নেওয়ার কথা ভাবছে দূতাবাসগুলো। ভোটার করার ক্ষেত্রে নিবন্ধন কর্মকর্তা বা রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইসির থানা বা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। প্রবাসীদের ভোটার করার ক্ষেত্রে দূতাবাসের মনোনীত ডাটা অ্যান্ট্রি অপারেটরই সব দায়িত্ব পালন করবেন।
শিগগির এই কার্যক্রম শুরু করতে তৎপর ইসি। ইসি সূত্র বলছে, চলতি মাসের শেষদিকে এ কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে। ডাটা অ্যান্ট্রি অপারেটরদের প্রশিক্ষণ দিতে কমিশন থেকে একটি দল সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) যাবে। এই দলে কারা থাকবেন তা চূড়ান্ত হয়নি। এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত মুলতবি সভা গত ২ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা ২০১৯-এ বলা আছে, প্রবাসীর নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ভোটার তালিকা আইন- ২০০৯ ও ভোটার তালিকা বিধিমালা-২০১২ এবং প্রবাসী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০১০ ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন বিধিমালা-২০১৪ এতদসংক্রান্ত কার্যক্রমে প্রযোজ্য হবে। আর বৈদেশিক অফিস স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি দূতাবাস-মিশনের অফিস-স্পেস ব্যবহারের বিষয়টি অগ্রাধিকারে রাখতে হবে। স্থানসংকুলান না হলে নিকটবর্তী স্থানে অফিস ভাড়া করে অস্থায়ী অফিস স্থাপনপূর্বক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। অফিস স্থাপনের ক্ষেত্রে দূতাবাস বা মিশনের সহযোগিতা নেওয়া যাবে। আর জনবলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভোটার রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (বিভিআরএস) জ্ঞানসম্পন্ন উপসচিব-সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার-সিনিয়র সহকারী সচিব-উপপরিচালক-জেলা নির্বাচন অফিসার-মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার-সহকারী সচিব-সহকারী পরিচালক-সহকারী রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী-সহকারী প্রোগ্রামার-উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসার ১ জন। লিয়াজোঁ অফিসার ইসি সচিবালয় ও মাঠ কার্যালয়-ইটিআই-এনআইডি অনুবিভাগের ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেলের ১০ গ্রেডের কর্মকর্তা ১ জন, টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ১ জন এবং ডাটা অ্যান্ট্রি অপারেটর অভিজ্ঞ ৪ জন। আগের নীতিমালায় এসব শর্ত থাকলেও নতুন সিদ্ধান্তে এর ধারেকাছে নেই কমিশন।
ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ইচ্ছায় সবকিছু ঠিক করা হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবে দেখা গেছে, দূতাবাস থেকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্ডপ্রতি ৫০ দিরহাম সার্ভিস চার্জ আদায়, নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি স্থাপন, স্থানীয়ভাবে ২ জন অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগদান এবং প্রত্যেক মিশনে দুজন কর্মচারীকে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
এ ছাড়া প্রবাসীদের ভোটার করার বিষয়ে ডাটা আদান-প্রদানে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) কার্যকর না থাকায় ডাটা পোর্টেবল ডিভাইস (হার্ড ডিস্ক)-এর মাধ্যমে তথ্য দেশে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন প্রস্তাবনার ঙ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সরকারের বর্তমান কৃচ্ছ্রসাধন নীতির আলোকে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস কর্তৃক ইসির নিজস্ব টিম পাঠানোর বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তাই দূতাবাস থেকে নিয়োগ করা অপারেটরের মাধ্যমে ডাটা এন্ট্রির কাজটি সম্পন্ন করা হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান সংক্রান্ত কার্যক্রমের সময়কাল ও অভিজ্ঞতা নিয়ে পরে রেমিট্যান্স প্রবাহের আধিক্য বিবেচনায় বাংলাদেশি শ্রমিক অধ্যুষিত দেশগুলোর এতদসংক্রান্ত কার্যক্রম ব্যাপক আকারে শুরু করা যেতে পারে।
এর আগে প্রবাসীদের ভোটার করতে ১/১১ সময়কার ড. শামসুল হুদা কমিশনের দুজন কমিশনার অভিজ্ঞতা নিতে যুক্তরাজ্য সফর করেছিলেন। সাবেক সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমদও কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হন। পরে দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা পেরিয়ে কে এম নূরুল হুদা কমিশন ২০১৯ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ায় অনলাইন নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু করে; কিন্তু এরপর করোনা মহামারিতে সেই উদ্যোগ থমকে যায়। কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন আবার সেই কাজে গতি আনার উদ্যোগ নেয়। প্রাথমিকভাবে প্রবাসীরা দেশে এলে তাদের দ্রুত ভোটার করার পাশাপাশি দুর্ভোগ লাঘবের পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করার উদ্যোগ নেয় বর্তমান কমিশন।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ছয় দেশ থেকে সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির ভোটার নিবন্ধনের আবেদন পাওয়া যায়। তার মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রায় ৪০০, সৌদি আরবে ১ হাজার ৩০০, সিঙ্গাপুরে ২৬৬, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১ হাজার ৪০, যুক্তরাজ্যে ৭৭৪ ও মালদ্বীপের ৩৬ জনের আবেদন রয়েছে। তবে মহামারির মধ্যে এনআইডি দেওয়ার কাজটি আর এগোয়নি।
এর আগে প্রবাসীদের ভোটার করতে কয়েক দফা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। ফের নতুন করে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে এই সাংবিধানিক সংস্থাটি। এবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় (স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যাণ, শ্রম ও কর্মসংস্থান), শ্রমিক পাঠানো সংগঠন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজটি সমাধান করতে চাইছে তারা।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ প্রসঙ্গে বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় অনেক প্রবাসী জমির নিবন্ধন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না। এ জন্য আমরা প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগ নিয়েছি। এর প্রথম ধাপ হিসেবে দুবাইকে বেছে নেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে এ কার্যক্রম শুরু হতে পারে।