ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ , ৩:৪৭ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের জেঁকে বসেছে শীত। রাতে বৃষ্টির মতই ঝরছে কুয়াশা। দিনেও দেখা মিলছে না সূর্যের। ঘন কুয়াশা আর হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। পৌষের শেষে এসে শীতের এমন তীব্রতায় কাবু মানুষ সহ গবাদি পশুরাও। এছাড়া বীজতলার ধানের চারা ও খেতের অন্যান্য ফসল নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকের কপালে উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, তিনি এবারে তিন বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। শীতের তীব্রতায় তার সরিষা খেতে দানা ভালো হয়নি।
আশানুরূপ ফলন পাবেন না। এছাড়া বোরোধান চাষাবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, বোরোর বীজতলার অবস্থা তো একেবারেই ভালো না। ধান গাছের চারা সব সাদা হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত বীজতলায় ধানের চারা থাকবে কিনা শঙ্কিত আছি। একই গ্রামের ছকিয়ত আলী বলেন, ঠান্ডার কারণে ধানের চারা সাদা হয়ে গেছে। ঔষধ দিচ্ছি কিন্তু কাজ তো হচ্ছে না। এত ঠান্ডা আর শীতের তীব্রতা আগে দেখিনি।উপজেলার সদর ইউনিয়নের পানিমাছকুটি গ্রামের কৃষক মোজাফফর হোসেন বলেন, তিনি এবারে দুই বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছেন। এতদিন আলু খেতের অবস্থা ভালোই ছিল। শীতের তীব্রতা বাড়ায় আলু খেতে পচন ধরেছে। আলু চাষাবাদ করে এখন লোকসানের আশঙ্কা করছেন
তিনি। একই ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের কৃষক বাদশা সরকার বলেন, আমি গত কয়েক বছর ধরে ফুলকপি আবাদ করি। অন্যান্য বছর খুব কম খরচে ফুলকপির আবাদ হলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। ফসল বাঁচাতে প্রতিদিনই ঔষধ প্রয়োগ করতে হচ্ছে। শীতের তীব্রতায় এত খরচ করে আবাদ করে লাভ হবে কিনা চিন্তায় আছি। ভুট্টা চাষী ফরিদ উদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা পাইনি। কনকনে ঠান্ডায় আমার ভুট্টা খেতে নানান রোগ দেখা দিয়েছে।
ঔষধ প্রয়োগ করেও কাজ হচ্ছে না। আবহাওয়া এমন থাকলে খেতের অবস্থা যে কি হবে তা উপরওয়ালা ভালো জানেন। আলমগীর হোসেন নামের আরেক কৃষক বলেন, আমি প্রতিবছর বিভিন্ন শাকসবজি চাষাবাদ করি। এবারে চাষাবাদ করতে গিয়ে আমি লোকসানের শঙ্কায় আছি। আমার মরিচ খেতে শীতজনিত বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে।
শিম খেতের অধিকাংশ শিমগাছ মরে গেছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি খেতের অবস্থাও ভালো না। এবারে আবাদ নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, উপজেলায় ৮২৫ হেক্টর আমনের বীজতলা, ২ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা, ৯ শ’ হেক্টর জমিতে আলু, ১ হাজার ৯৯৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা এবং ১ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন শাক সবজির আবাদ রয়েছে।
শীতের তীব্রতা থেকে ফসল রক্ষার জন্য কৃষকদের ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বীজতলার বাড়তি পরিচর্যা নিতেও কৃষকদের বলা হচ্ছে।