বিবিধ

ফুলবাড়ীতে চরাঞ্চল গুলোতে বিলুপ্ত হত্তয়া কাউনের চাষ নতুন শুরু হয়েছে

  উত্তম কুমার মোহন্ত, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি:: ১৬ মে ২০২৫ , ৫:১১ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী শস্য (ফসল )কাউন চাষাবাদের জন্য উৎকৃষ্টতম ভূমি ছিল চরাঞ্চল গুলো। যতদুর দৃষ্টি যেত শুধু কাউনের সবুজ গাছে সোনালী শীষে চকচকে বিস্তীর্ণ চরের পর চর যেন ঢেকে গেছে। কিন্তূ কালের পরিক্রমায় কাউনের চাষাবাদ এখন প্রায় বিলুপ্ত।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর চরাঞ্চল গুলোতে হারিয়ে যাওয়া অতীতের ঐতিহ্য রক্ষার্থে নতুন করে ঐতিহ্যবাহী কাউনের চাষাবাদ শুরু করেছেন ধরলার পাড়ের কৃষকরা। উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের ধরলার শাখা বারোমাসিয়া নদীর পাড়ের চরাঞ্চলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সারাতুন বেগম (৫৫) স্বামী পরিত্যক্তা এক কৃষাণি চরাঞ্চলে কাউন ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান,কি আর কমো বাহে এমন একদিন সময় গেছিল দুবেলা দুমুঠো ভাত জোটেনি তখন ভাতের বদলে এই কাউনের ভাত,পান্তা জাউ,নাস্তা খায়য়া দিনের পর দিন কাটিয়েছি এইসব খাবার খেয়ে দুই সন্তান কে মানুষ করেছি। সেই কষ্টের দিন গুলার কথা কয়া শ্যাষ করা যাবার নয় বাহে। সেই সময়ে ধরলা ও বারোমাসিয়া চরাঞ্চলের মানুষজন কাউন চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। তবে এই সব খাবারে যেমন পুষ্টি ছিল তেমন দমও ছিল অনেক বাহে, অতীতের দিন গুলোকে মনে রাখতে শখের বসবতে এই চরাঞ্চলে দীর্ঘ ষোল-সতেরো বছর পরে মানুষের জমি বর্গা নিয়ে আমার ভাগিনা শুক্কুর আলী সহ প্রায় দেড় বিঘা জমিতে এবারে কাউন চাষাবাদ করেছি। জমির মালিক কে অর্ধেক ফসল দিয়ে বাকি গুলো আমরা ভাত পান্তা জাউ নাস্তা বিভিন্ন প্রকার নায় নাস্তা মোয়া মুরকি তৈরি করে খাবো। তাদের কাছে চাউলের ভাতের চেয়ে কাউনের ভাত পান্তা অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বলে জানান।
এছাড়া চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার চাষিরা যেমন অন্যদা রঞ্জন, সুলতান মিয়া,শহিদুল ইসলাম,গৌরাঙ্গ সহ আরো অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে প্রায় দেড় যুগ আগে চরাঞ্চলে কাউনের আবাদ ছাড়া অন্য কোন আবাদ ছিল না। সেই সময়ে অভাবের তাড়নায় ধনী গরীব সবাই কাউন কে ভাতের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতেন চরবাসী রা। এখন আর মানুষের ওই রকম অভাব ও নাই চরে আর কাউনের আবাদ ও নাই বললেই চলে।
পশ্চিম ফুলমতি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, আমার বাপ-দাদারা বারোমাসিয়া নদীর তীরবর্তী এলাকায় শত শত বিঘা জমিতে কাউনের চাষাবাদ করতো। সে সময় মঙ্গা ছিল তখনকার আমলে ধনী গরীব বলতে গেলে সবাই কাউনের ভাত পান্তা নাস্তা জাউ খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। আস্তে আস্তে মানুষের অভাব দুর হতে থাকলে প্রায় দেড় দুই যুগেরও বেশি হবে আমাদের এলাকার কৃষকরা কাউনের চাষাবাদ আর করেন না। শহিদুল ইসলাম আরও জানান, এই অঞ্চলের এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদ ছিল কাউন সেটি এখন সময়ের পরিবর্তনে বিলুপ্তির পথে। তাই ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার করতে কাউনের চাষাবাদ এলাকায় ফেরাতে আমাদের পাশের জেলা লালমনিরহাট থেকে কাউন বীজ সংগ্রহ করে পাঁচ শতাংশ জমিতে আমিও কাউন চাষাবাদ করেছি। বেশ সুন্দর ফলন ও হয়েছে। আগে মানুষ ধান চাষাবাদ কম করতো তাই অধিকাংশ পরিবারে কাউনের ভাত রান্না হতো। বর্তমানে দেড়-দুইযুগ ধরে চরাঞ্চলে ধান ও ভুট্টার আবাদ বেড়ে যাওয়ায় কাউনের আবাদের প্রতি ঝোঁক নেই বলেই চলে। তবে কাউনের ভাত পান্তা ,নাস্তা, মোয়া, মুরকির খেতে খুব সুস্বাদু কারণে কাউনের চাষাবাদ করছি,এখন থেকে প্রতি বছরই এই চাষাবাদ করবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, চরাঞ্চল গুলো অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি কাউন চাষাবাদের জন্য বেশ উপযোগী। একেবারে কম খরচে কাউনের চাষাবাদ করা সম্ভব। কৃষি বিভাগ প্রায় সময়ই চরাঞ্চলের কৃষকদের কাউন চাষের জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছি,তারপরও এ উপজেলায় কাউনের চাষাবাদ প্রায় বিলুপ্ত। যেহেতু এই দুই কৃষক বিলুপ্ত হত্তয়া কাউনের চাষাবাদ নতুন করে করছেন। আশাকরি এই দুই কৃষককে দেখে অন্যান্য কৃষকরা কাউন চাষের জন্য আগ্রহী হবে। এব্যাপারে কৃষি বিভাগ থেকে সমস্ত প্রকার পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে প্রদান করা হবে।