উত্তম কুমার মোহন্ত ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি:গ্রাম ২০ মার্চ ২০২৫ , ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের নারীরা ইউরোপের দেশ ওমানের জাতীয় টুপি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সেই সাথে এ শিল্পের সাথে জড়িত নারীরা হয়েছেন সাবলম্বী। সংসারের কাজের ফাঁকে ঘরে বসে সুঁই সুতার নিপুণ কারু কার্যে বিভিন্ন রকমের নকশাদার ওমানি টুপি তৈরি করছেন তাদের হাতের তৈরি বাহারি টুপি দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জায়গা করে নিয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপের দেশ ওমানে।
উপজেলার সদর ইউনিয়ন বালাটারী গ্রামে টুপি শিল্পের সাথে জড়িত মায়া বেগমের বাড়িতে গিয়ে নজরে আসে ওমানি টুপি তৈরির দৃশ্য বেশ কয়েক জন মহিলা এক সাথে বসে অত্যন্ত মনযোগের সহিত সুঁই সুতার সূ নিপুণ কারুকার্যে টুপি তৈরির কাজে ব্যস্ত। ঈদকে সামনে রেখে আরো বেশি কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এব্যাপারে মায়া বেগম জানান,আমাদের গ্রামের প্রায় ৪০ জন নারী এ শিল্পের প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করে দীর্ঘ দিন থেকে টুপি তৈরির কাজ করে আসছি। এক একটি ওমানি টুপি তৈরির মজুরি পাচ্ছি ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা। সংসারের কাজের ফাঁকে ঘরে বসে মাসে দুই তিনটি টুপি তৈরি করে দুই থেকে তিন হাজার টাকা ইনকাম করছি। সেই অর্থে সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি,তেমনি ভাবে নিজেরাও সাবলম্বী হয়েছি। আমাদের হাতে তৈরি বিভিন্ন নকশাদার বাহারি ওমানি টুপি দেশ থেকে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে এটা আমাদের বড় পাওয়া।
এ শিল্পের সাথে জড়িত রেশমা বেগম,শেফালী বেগম, আদুরী বেগম ও জান্নাতী বেগম একই ভাবে জানান,আমাদের অভাবী সংসারে স্বামীর একার রোজগারের টাকায় সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম ছিলো। বর্তমানে ওমানিয়া নকশাদার টুপি তৈরি করে যে মজুরি পাই তাতে করে নিজেদের সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের এ সফলতার পিছনে মুল কারিগর বাবলু খন্দকার ভাই। তিনি আমাদের এ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে দেয়। এবং নিজেই আমাদেরকে টুপি তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে পরবর্তীতে নিজ অর্থে ওমানি টুপি তৈরির কাপড় সুঁই সুতা সহ যাবতীয় কিছু প্রদান করেন। এখন আমরা নিজেদের সংসারের কাজের ফাঁকে ঘরে বসে বিভিন্ন নকশাদার ওমানিয়া টুপি তৈরি করে অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হচ্ছি। প্রতিটি টুপি তৈরিতে আটশো থেকে এক হাজার টাকা মজুরি পাচ্ছি। মাসে দুই তিনটি টুপি তৈরি করে দুই,তিন হাজার টাকা উপার্জন করছি। নিজের উপার্জিত অর্থে সাবলম্বী হতে পেরেছি তেমনি ভাবে সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম ও হয়েছি। এ শিল্পের মাধ্যমে আমাদের মতো আজো পাড়াগাঁয়ের অবহেলিত অনেক নারীরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজেদের জীবন মান কে উন্নত করেছেন। আমাদের কর্মসংস্থানের নাবিক বাবলু খন্দকার ভাইয়ের জন্য আমরা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দুহাত তুলে দোয়া করি আল্লাহ যেন তার মতো একজন ভালো মানুষ কে নেক হায়াত দান করেন।
উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল গুলোতে শত শত বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন কারী শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের ফকির পাড়া গ্রামের বাসিন্দা বাবলু খন্দকার জানান, আমি ওমানি টুপি তৈরির সব উপকরণ সরবরাহ করি, টুপি তৈরি শেষে নির্ধারিত মুজরি দিয়ে নিয়ে আসি। এক একটি টুপি তৈরির মুজরি হিসেবে আটশ থেকে এক হাজার টাকা পায়। মাসে দুই তিনটি টুপি তৈরি করলে দুই তিন হাজার টাকা পায় তাতে করে সংসারের ছোট খাটো অভাব গুলো পুরণ করতে সক্ষম হয়। উপজেলায় বর্তমানে আমার আওতায় ৮০০ জন নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে । ভবিষ্যতে এধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ললিত মোহন রায় জানান,গ্রামীণ নারীদের এমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করায় বাবলু খন্দকার কে স্বাগত জানাই, নারীদের এই সাফল্যের গল্প শুধু তাদের জীবন মান কে বদলাচ্ছে না পুরো সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। তাদের হাতে তৈরি টুপি আন্তর্জাতিক বাজারে জায়গা করে নিয়েছে যা স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তুলেছে।এ শিল্পের সফলতা অন্য নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে থাকবে। আমি এই উদ্যোগের সফলতা কামনা করছি।