বিবিধ

ফুলবাড়ীতে মাদ্রাসা শিশুকে নির্যাতন, অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবি মায়ের

  এস এম রাফি ৫ মে ২০২৩ , ৪:৪৩ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

মোঃ হারুন-উর-রশীদ,ফুলবাড়ী(দিনাজপুর):

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর গত (৩ মে) বুধবার ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি বাজারস্থ রাঙ্গামাটি হাফিজিয়া মাদ্রসার শিক্ষক মোঃ হাফেজ বেলাল(৫০) তুচ্ছ বিষষকে কেন্দ্র করে শিশু শিক্ষার্থী মোঃ রনি মিয়া(৯)কে শারীরীক নির্যাতন করে আহত করে। প্রতিবাদে তার পিতা আব্দুল সালাম থানায় অভিযোগ করলেও বিশেষ সুবিধায় পাওয়ায় পিতা আব্দুস সালাম থানায় করা অভিযোগ প্রত্যাহার করলে নেন। কিন্তু শিশু রনির মা মোছাঃ নাসরিন বেগম অভিযুক্ত মাদ্রসার শিক্ষককে বহিস্কার ও দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবি করেন।
মোঃ আব্দুস সালাম এর প্রত্যাহারকৃত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, রনি মিয়া, রাঙ্গামাটি বাজারস্থ রাঙ্গামাটি হাফিজিয়া মাদ্রসার নূরানী বিভাগে পড়াশোনা করেন। হঠাৎ দেখি রনি কান্নাকাটি করতে করতে বাড়ীতে আসে। তার কান্নার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে সে জানায় সে দুই দিন মাদ্রাসায় না যাওয়া তাকে পাচায় ও উরুতে ক্রিকেট স্ট্রাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট করেন। আমি বিষয়টি নিয়ে মাদ্রসায় গেলে অহেতুক দাঙ্গা হাঙ্গামা হতে পারে ভেবে পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে ফুলবাড়ী থানায় অভিযোগ করি।
এদিকে এই দিন বিকেল ৫টায় বিষয়টিকে নিয়ে তার পিতা (ভ্যান চালক) মোঃ আব্দুস সালাম ফুলবাড়ী থানায় অভিযোগ করতে আসলে মাদ্রাসার সভাপতি মোঃ শাহাদত হোসেন ও ফুলবাড়ী গোলাম মোস্তফা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ তোজাম্মেল হক অভিযোগের বিষয় জানতে পেরে রাঙ্গামাটি হাফিজিয়া মাদ্রসার শিক্ষক মোঃ হাফেজ বেলালকে শিশু নির্যাতন আইনী জটিলতা থেকে বাঁচানো স্বার্থে তার মাদ্রসা সভাপতি মোঃ সাহাদত হোসেন ও গোলাম মোস্তফা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হক স্থানীয় অনৈতিক সুবিধাভোগীদের সাথে নিয়ে শিশু রনির বাবাকে অর্থসহ বিভিন্ন প্রকার প্রলভোন দেখিয়ে ও মাদ্রাসার সুপার হাফেজ বেলালকে বহিস্কার করা হবে বলে মিথ্যা আশ^াস দিয়ে রনির পিতা আব্দুস সালামকে দিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করান।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষার্থী রনি মিয়া মাদ্রাসার সুপারের কাছ থেকে ১৫দিনের ছুটি নিয়ে তার বাড়ী শিবনগর ইউনিয়নের দাদপুর,মালিপাড়া গ্রামে যায়। ১৫দিন ছুটির সময় পার হয়ে আরোও দুই দিন অতিবাহিত হলে তার বড়ভাই তাকে মাদ্রাসায় রেখে আসে। মাদ্রসার সুপার হাফেজ বেলাল অতিরিক্ত দুই দিন ছুটি কাটার বিষয়ে শিশু রনিকে জিজ্ঞাসা করে, একপর্যায়ে তার দুই দিনের ২শত টাকা জরিমানা হয়েছে বলে নগদ ২শত টাকা চায়। শিশু রনি সেই টাকা দিতে না পারায়, সুপার হাফেজ বেলাল তিন শিক্ষার্থীকে রনির হাত চেপে ধরতে বলে, ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে সজরে রনির পাচায় ও উরুতে মারতে থাকে। পরে রনির চিৎকারে তাকে ছেড়ে দেয় সুপার। রনি ভয়ে সেই মাদ্রসা থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দৌড়িয়ে তার বাসায় আসে এবং তার মা ও বাবাকে বিষয়টি জানায়, তার মা ও বাবা তার চিকিৎসার জন্য ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী বিভাগে নিয়ে আসে। সেখানে ডাক্তার ব্যবস্থাপত্রের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করেন।
গত (৪ মে) বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় শিশু রনির বাড়ী শিবনগর ইউনিয়নের দাদপুর মালিপাড়া গিয়ে তার মা মোছাঃ নাসিরন বেগমের সাথে কথা বললে, তার মা নাসিরন বেগম অভিযোগ করে বলেন, মাদ্রাসায় দুই দিন না যাওয়ায় তার ছেলেকে ২শত টাকা জরিমানা করা হয়, সেই টাকা আমাকে ফোনে বললে আমি দিয়ে দিতাম। কিন্তু আমাদের কাউকে না জানিয়ে আমার ৯ বছরের শিশু ছেলেকে পাষন্ডের মত করে তিনজন ছেলেকে দিয়ে হাত চেপে ধরে ক্রিকেট খেলারা স্ট্রাম্প দিয়ে সজরে আঘাত করে আহত করে। আমার ছেলে মার খেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে বাড়ীতে আসে। আমরা সাথে সাথে তাকে ফুলবাড়ী হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে তার চিকিৎসা নিয়ে বাড়ীতে ফিরে আসি। ঐদিন তার খুব জ¦র হয়। আমরা গরীব মানুষ আমারা দিন আনি, দিন খাই। অনেক কষ্ট করে ছেলেদের মানুষ করছি। আর সেই ছেলেকে অকারনে কেউ মারবে তা আমি কেন, কেউ মেনে নিবে না। আমি ঐ শিক্ষকের বিচার চাই,আমি চাই তার যেন তার শাস্তি হয়। যাতে আমার ছেলের মতো আর কাউকে এমন মার খেতে না হয়। সমঝতার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি জানি না, ছেলের বাবা জানে।
শিশু রনিকে নির্যাতন করে আহত করার বিষয়ে শিশু রনির এলাকাবাসীরা বলেন,টাকা দিয়ে সমঝতা করলে হবে না । ঐ অভিযুক্ত শিক্ষককে মাদ্রাসা থেকে বহিস্কার করতে হবে। সে যেন আর কোন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা না করতে পারে, সেটা গ্রামবাসী হিসাবে আমাদের দাবি।
এবিষয়ে রাঙ্গামাটি হাফিজিয়া মাদ্রাসার সুপার মোঃ হাফেজ বেলাল নিজের দোষ স্বীকার করে বলেন, আমি ছেলেটাকে মেরেছি। তবে আমার সভাপতি সেই ছেলের বাবাকে আর্থিক সুবিধা দিলে শিশুটির বাবা আব্দুস সালাম থানায় করা তার অভিযোগ প্রত্যাহার করেন। কত পরিমান অর্থ দিতে হয়েছে শিশুটির বাবাকে সে বিষয়ে হাফেজ বেলালকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মাদ্রসার ফান্ড থেকে সভাপতি কত টাকা দিয়েছে তা আমার জানা নাই। তবে সমঝতা হয়েছে সে বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে। মাদ্রাসাটি সম্পূর্ণ স্থানীয় মানুষের দানে পরিচালিত হয়। সেই টাকা আপনার ব্যাক্তিগত বিষয়ে কেন খরচ করা হলো জানতে চাইলে হাফেজ বেলাল চুপ করে থাকেন।
মাদ্রাসার সাথে জড়িত, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, এই মাদ্রাসার একটা কমিটি আছে। সেই কমিটির কাউকে কিছু না জানিয়ে কোন প্রকার মিটিং না করে রাতে সভাপতি কিভাবে এতো টাকা খরচ করলো বুঝতে পারলাম না। শুনেছি সকালে না-কি খরচের বিষয়ে মাদ্রাসার সুপারকে সাথে নিয়ে রেজুলেশন করে খরচ বৈধ্য করেছেন।
আব্দুস সালাম এর অভিযোগ প্রত্যাহারের বিষয়ে ওসি মোঃ আশ্রাফুল ইসলামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, শিশুর পিতা আমার কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন। আবার ঘন্টাখানেক পরে সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। তবে যেভাবে শিশুটিকে নির্যাতন করা হয়েছে তা অত্যান্ত ন্যাক্কার জনক। তবে অভিযোগ না থাকায় আমাদের কিছু করার নাই।
উল্লেখ্য, রনির পিতা আব্দুস সালাম থানায় অভিযোগ করতে আসলে সইে সময় উপজেলার কিছু সংখ্যক গনমাধ্যমকর্মী একত্রিত হয়ে ঘন্টাব্যাপি জটলা করলেও শিশু নির্যাতনের অভিযোগ অথবা অভিযোগ প্রত্যাহার বিষয়ে কোন পত্রিকায় প্রকাশ অথবা টিভিতে দেখা যায় নাই। তবে ফেসবুকে কিছুসংখ্য আইডিতে এই বিষয়েটি নিয়ে লেখা-লেখি করতে ভাইরাল হতে দেখা যায়।