বিবিধ

ফুলবাড়ীর নিভৃত পল্লীতে গড়ে উঠা মিনি তাঁত কারখানায় তৈরি হচ্ছে গামছা

  উত্তম কুমার মোহন্ত ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি:গ্রাম ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ , ৫:৪৬ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে,নিভৃত পল্লীতে অঞ্চলে গড়ে উঠেছে একটি মিনি তাঁত শিল্প কারখানা। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কারখানাটির খট খটানি শব্দে একেবারে মুখরিত পুরো গ্রাম। সেখানে নানান রংয়ের গ্রামীণ চেকের সুন্দর সুন্দর গামছা তৈরি করে রীতিমতো এলাকাবাসী সহ দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছেন। মিনি এই কারখানাটিতে উৎপাদন বাড়াতে যন্ত্রচালিত পাওয়ার লুম দিয়ে গামছা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান উদ্যোক্তা শহিদুল্লাহ।

উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের একেবারে সীমান্ত ঘেঁষা নিভৃত পল্লী অঞ্চলের গজের কুটি গ্রামে গড়ে উঠা মিনি তাঁত শিল্প কারখানাটি দেখতে গিয়ে জানাযায়,ওই গ্রামের কৃষক মোঃ আমির হোসেনের ছেলে, মোঃ শহীদুল্লাহ দীর্ঘদিন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় তাঁত শিল্প কারখানায় কাজ করতেন। তার স্বপ্ন ছিল একদিন গ্রামের বাড়িতে ফিরে গিয়ে ছোট করে হলেও তাঁতের কারখানা তৈরি করবো। সেই স্বপ্ন পুরণের লক্ষ্যে নিজ বাড়ির উঠানে ছোট একটি টিনসেটের ঘরে এই মিনি তাঁত শিল্প কারখানাটি গড়ে তুলেন, প্রথমত শুধু গামছা তৈরি করে এলাকায় ব্যাপক ভাবে সারা ফেলেছে।এই খবর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়লে, তাঁতের কারখানায় গামছা তৈরি দেখতে এলাকাসহ দূর দূরান্তের দর্শনার্থীদের প্রতিদিনই ঢল নামছে গজের কুটি গ্রামে। তাঁত সমৃদ্ধ উপজেলা হিসেবে তাঁত পল্লী গড়ে উঠার লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে শুধু গামছা তৈরি করেছেন। অল্প সময়ে এখানকার তৈরিকৃত গামছার কদর বেড়েছে গোটা উপজেলায়।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম,অতুল চন্দ্র রায়, এমদাদুল হক, হাসমত আলী বলেন, আমাদের জানামতে তাঁত কারখানার মালিক শহিদুল্লাহ একজন পরিশ্রমী ছেলে জীবিকার তাগিদে টানা ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত ঢাকা সিরাজগঞ্জ,নারায়ণগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কলকারখানায় নেবার হিসেবে কাজ করতেন বিশেষ করে তাঁত কারখানায় অনেক দিন কাজ করেছেন,কাজ করতে গিয়ে তার স্বপ্ন ছিল একদিন বাড়িতে ফিরে ছোট করে হলেও নিজেই তাঁত কারখানা দিবে এবং ভবিষ্যতে একজন সফল উদ্যোক্তা হবে। বাড়িতে ফেরার পর তার সেই অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন এই মিনি তাঁত শিল্প কারখানাটি। বর্তমানে তার এই মিনি তাঁত কারখানাটি তে সুন্দর সুন্দর গামছা তৈরি করে বাজার জাত করছেন। তার কারখানায় সুন্দর গামছা তৈরির খবর গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। স্বপ্ন পুরণের লক্ষ্যে গত এক মাস থেকে গামছা তৈরি করেছেন। এই অঞ্চলে কোন শিল্পকারখানা না থাকায়, প্রতিনিয়ত শত শত দর্শনার্থী তার মিনি তাঁত শিল্প কারখানাটি দেখতে আসছেন, কেউ কেউ সুন্দর গামছা দেখে ক্রয় ও করছেন।

আলোচিত মিনি তাঁত শিল্প কারখানার মালিক শহিদুল্লাহর সাথে কথা বললে,তিনি প্রতিবেদকে জানান, আমি প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় বাহিরে এইসব কারখানায় কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করি। দীর্ঘদিন পরে বাড়িতে ফিরে এসে অনেক স্বপ্ন নিয়ে মিনি তাঁত শিল্প কারখানাটি শুরু করেছি। এই কারণে আপনাদের সবার সহযোগিতা কামনা করছি,পরিতাপের বিষয় হলো আমার ব্যক্তিগত মুল ধন বলতে মাত্র ১ লাখ টাকা নিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে বিভিন্ন সংস্থা বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এ উদ্যোগ গ্রহণ করি। স্বল্প আকারে কারখানাটি শুরু করতে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে দুইটি পাওয়ার লুম (মেশিন) ও ৭০ হাজার টাকার সুতা ক্রয় করি।ঘর নির্মাণে ব্যয় হয় ৪০ হাজার আর এদিকে আনুষাঙ্গিক অন্যান্য খরচ বাবদ ব্যয় হয় ৩০ হাজার টাকা। সর্বসাকুল্যে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে আল্লাহর রহমতে আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্নের এই মিনি তাঁত শিল্প কারখানাটি চালু করতে সক্ষম হয়েছি। এখন কারখানায় আমি সহ দুইজন তাঁত শ্রমিক গত দুই-তিন মাস থেকে গামছা তৈরি করে আসছি।

সহিদুল্লাহ আরও জানান,তৈরিকৃত গামছা গুলি স্থানীয় হাট বাজার গুলোতে পাইকারি হিসেবে একথান (০৪ পিস) গামছা ৪২০ থেকে ৪৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, গতমাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা গামছা বিক্রি করেছি। শ্রমিক সহ সব খরচ মিটিয়ে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় থাকে বলে জানান।পরিশেষে তিনি বলেন, কারো সহযোগীতায় যদি ব্যাংক গুলো থেকে মোটাদাগে ঋণ পাওয়া যেতো তাহলে কারখানাটি বড় পরিসরে করা যেতো। এতে করে আয় ও বাড়তো।পাশাপাশি আমাদের এই অবহেলিত এলাকার কিছু বেকার লোকজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতো।

এব্যাপারে নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান,ছোট পরিসরে হলেও আমাদের এলাকায় এই প্রথম তাঁত শিল্প কারখানা তাও আবার একেবারে নিভৃত পল্লীতে গড়ে উঠেছে। সেখানে সুন্দর সুন্দর গামছা তৈরি করে বাজার জাত করছেন,আমি ব্যক্তিগত ভাবে কারখানার মালিক শহিদুল্লাহর এই উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানাই। এটি ব্যাপক পরিসরে করতে পারলে এই এলাকার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের দার উন্মোচন হবে বলে মনে করি। তিনি আরও জানান বিষয়টি আমাদের সামনের সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থাপন করে ,জেলা বিসিক শিল্প নগরী থেকে কি ভাবে প্রোনোদনার ব্যবস্থা করা যায় সেই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় কে অনুরোধ জানাবো বলে আশ্বাস প্রদান করেন