মো. এমদাদুল হক, বগুড়া ৩০ নভেম্বর ২০২৩ , ৩:২৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করা বিএনপির টানা চারবারের সাবেক সাংসদ ডা. জিয়াউল হক মোল্লার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে দলটির সাবেক আরেক সাংসদ মোশারফ হোসেনের কর্মী-সমর্থকরা।
গত বুধবার (২৯ নভেম্বর) রাতে নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলার আত্মগোপনে থাকা দলটির নেতাকর্মীরা জিয়াউলের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করায় বিএনপির ওই সাবেক সাংসদকে ‘জাতীয় বেইমান’ আখ্যা দিয়ে নানা স্লোগান দেয়ার পৃথক দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, জিয়াউলের ছবিতে জুতা ঝুলিয়ে এবং জাতীয় বেইমান লিখে স্লোগান দিচ্ছেন নন্দীগ্রাম উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুয়েল রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান, পৌর ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল হাসান পলিন, যুবদল নেতা আবুল কালাম, মজনু রহমানসহ গুটি কয়েকজন নেতাকর্মী কুশপুত্তলিকায় আগুন ধরিয়ে দেয়। জিয়াউল নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই তার ছবিতে নানা চিহ্ন এবং জুতা প্রতীকী এডিটিং করে ফেসবুকে ‘খালেদা জিয়া এবং দলের সাথে বেইমানি করা সংস্কারপন্থীরা আবারও খোলস ছেড়ে বেরিয়েছে’ লিখে লাগাতার স্টাটাস দিচ্ছেন উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান তারেকসহ কয়েকজন। তারা সবাই বিএনপির সাবেক সাংসদ মোশারফ হোসেনের কর্মী-সমর্থক বলে জানা গেছে।
বগুড়া-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করা ডা. জিয়াউল হক মোল্লা বলেন, আমার ছবি পুড়িয়েছে শুনেছি। এটা তো তারা করবেই। কারণ তারা কখনোই নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলার মানুষের উন্নতি চায়নি। ২০০৭ সালের পর থেকে আমাকে কোনো নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। বিএনপির নেতৃত্ব আমাকে রাজনৈতিকভাবে বারবার অপমান করেছে। এতে আমার হাজারো কর্মী-সমর্থকরা কষ্ট পেয়েছেন। বিএনপির কোনো পদেই আমি নেই। গ্রাম কমিটিতেও আমাকে রাখা হয়নি। আমি নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের সমস্যা কোথায়?
এ ব্যাপারে বিএনপির সাবেক সাংসদ মোশারফ হোসেনের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিএনপির সাবেক এক নেতা জানান, জিয়াউল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন জেনে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিএনপির সাবেক সাংসদ মোশারফ। কারণ দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের প্রচারণায় প্রকাশ্যে না গেলেও গোপনে জিয়াউলের পক্ষে কাজ করবে। বুড়ইল গ্রামে সাবেক এমপি মোশারফের বাড়ির সামনে তার সমর্থকরা জিয়াউলের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। দলের রাজনৈতিক কর্মসূচী চলাকালে নাশকতার মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে নিজেরাই আত্মগোপনে আছেন। তারাই কুশপুত্তলিকায় আগুন দিয়েছে। মোশারফ এমপি থাকাকালে দীর্ঘদিন নন্দীগ্রাম উপজেলায় রাজপথে দলের কোনো কর্মসূচী পালিত হয়নি।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, জিয়াউল বিএনপির কেউ নন। তিনি যদি নির্বাচনে অংশ নেন, তাহলে সরকারের সহযোগী হিসেবে জাতির কাছে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন।
১৭ বছর পর ভোটের মাঠে ফিরছেন বিএনপির টানা চারবারের সাবেক সংসদ জিয়াউল হক মোল্লা। বুধবার (২৯ নভেম্বর) তিনি কাহালু উপজেলা সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. মেরিনা আফরোজের নিকট মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে বিএনপিতে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত হলে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি পান জিয়াউল। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে এমপি হন ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আলী মুকুল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় মহাজোটের প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন এমপি হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোশারফ হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দলীয় সিদ্ধান্তে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন।