সারাদেশ

বানিজ্যিকভাবে সবজি চাষ করে স্বাবলম্বি হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা

  এস এম রাফি ৫ অক্টোবর ২০২৩ , ১:৩৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

‘আধুনিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি উৎপাদন এবং কেঁচো সার তৈরীর প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর বসতবাড়ীতে সবজি উৎপাদন করে এ বছর ২৫ হাজার টাকার সবজি এবং প্রতিমাসে ২ হাজার টাকার কেঁচো সার বিক্রি করবো বলে আশা করছি; যা আমার সাংসারিক ব্যয়ভার বহন করে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পারছি। স্বামীর একার আয়ের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না।’ এসব কথা বলছিলেন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ারহাটের গয়নারপটল এলাকার রিনা বেগম।
রিনা বেগম বলেন, ‘প্রথমের দিকে বেসরকারী এনজিও ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্প থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে একটি ভেড়া দিয়েছে এবং সেটি থেকে ৩টি বাচ্চা হয়েছে। এখন তার চারটি ভেড়া; যার বাজার মূল্য ৩০ হাজার টাকা। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পরামশ নিয়ে বর্তমানে তিনি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হয়েছেন।’ ‘রিনার মতো আরো অনেকেই বস্তায় আদা চাষ, সবজি ও পেঁপে উৎপাদন এবং ভেড়া পালন করে পরিবারের আয়বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।’
শুধু রিনা বেগমই বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তিতে বানিজ্যিকভাবে শাকসবজি আবাদ করে ওই এলাকায় কয়েকশ পরিবার আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হয়েছেন। প্রান্তিক পর্যায়ে সবজি চাষের পাশাপাশি গবাদি পশু পালন করেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে অনেকেই।
উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় গয়নার পটল গ্রামে শতাধিক কৃষক পরিবার এসব আধুনিক প্রযুক্তিতে বানিজ্যিভাবে সবজি চাষ করছেন।
ফিরোজা বেগম জানান, ‘আমাদেরকে সুশাসন সম্পর্কে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে। আমরা পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, তালাকপ্রাপ্ত, বহুবিবাহ, পারিবারিক দ্বন্দ, সংবিধান, সংসদ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখন কোনো আইনি পরামর্শ প্রযোজন হলে আমরা ফ্রেন্ডশিপের সহায়তা নিই এবং তারা আমাদেরকে বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ প্রদান করেন।’ একই গ্রামের আনিছুর রহমান ও রেজিয়া বেগম বলেন, ‘আগে হাট থেকে রাসায়নিক সার কিনে আনতাম, এখন আমরা জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করি, ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে পোকা মারছি, সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করছি। ’
উপজেলার ১২টি চরের ৩৬০টি দরিদ্র পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে উন্নয়নমুখী হতে সরকারের পাশাপাশি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ, বাংলাদেশ সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। প্রশিক্ষণসহ পরিবারগুলোকে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে শাকসব্জির বীজ দেওয়া ছাড়াও ভেড়া বিতরন করা হয়েছে। এছাড়াও পাশে দাঁড়ান তারা বিভিন্ন দুর্যোগে। বন্যাকালীন সময়েও যাতে সবজি উৎপাদন অব্যাহত থাকে সেজন্য কমিউনিটি ভিত্তিক সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে সংস্থাটি। বস্তায় আদা চাষে উৎসাহিত করায় গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে। সবজি উৎপাদনে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদন এবং ব্যবহারে সহায়তা প্রদান করছে। পরিবারগুলোর বন্ধন অটুট রাখার জন্য পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইনগত বিষয় নিয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়।
“ফ্রেন্ডশিপ” এর ট্রান্সজিশনাল ফান্ড (এএসডি) প্রজেক্টের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার কৃষিবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, ‘ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গ এর সহায়তায় সদস্যদের আয় রোজগার নিয়মিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্ন্য়ন, সুশাসন এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী উপজেলার মোট ২৪টি চরে ৭২০ জন সদস্যকে উক্ত প্রকল্প সহায়তা প্রদান করে আসছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কুমার প্রণয় বিষাণ দাস জানান, ‘উক্ত প্রকল্পের পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক উপকারভোগীদের পূর্বের ন্যায় প্রশিক্ষণ প্রদানসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে সর্বাত্নক সহযোগিতা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিলমারী উপজেলায় ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৬০টি পরিবারকে ভেড়া প্রদান করেছে এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে; ফলে পরিবারগুলোর ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকটি ভেড়াকে টিকা এবং কৃমিনাশক বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। চর এলাকা ভেড়া পালনের জন্য উপযুক্ত তাই ভেড়া পালনের মাধ্যমে চরাঞ্চলের মানুষ স্বাবলম্বী হবে বলে তিনি আশাবাদী।’