স্টাফ রিপোর্টার: ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৮:৩৪ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের প্রস্তাবিত কচাকাটা উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়নের জালিরচর গ্রামের আজিজুল হক ও শেফালী বেগম এর বড় মেয়ে রাজিয়া সুলতানা। পরিবারে রয়েছে আরো এক ভাই এক বোন। বাবা পেশায় কাঠ মিস্ত্রি, মা গৃহিনী। আর্থিক সমস্যার কারনে তাদের পরিবারের নেমে আসে অভাব অনটন। তার মা-বাবা অনেক কষ্ট করে তিন ভাই বোনের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালিয়ে যায়।
২০২০ সালে দশম শ্রেনীতে থাকা অবস্থায় কয়েক দফায় বিয়ের প্রস্তাব আসার পর, নিজের বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে সফল হয়েছেন কিশোরী রাজিয়া সুলতানা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে বাড়িতে গিয়ে রাজিয়া সুলতানা দেখতে পায় তার বাড়িতে লোকজন এসেছেন। সেদিন সে বুঝতে পারেনি যে, তার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলার জন্য এসেছে বর পক্ষের পরিবার। পরে বুঝতে পারে তার মা-বাবা তার বিয়ের জন্য কথা বলছে। রাজিয়া বাবা মায়ের কথা ভালো বর পাওয়া গেছে, তোমাকে বিয়ে করতেই হবে। তোমার পড়ালেখা করে লাভ কি অন্যের ঘড়ে বিয়ে দিলেই ঝামেলা শেষ আমাদের।
কিন্তু রাজিয়া তার বাবা মাকে জানিয়ে দেয় আমি পড়ালেখা শেষ করে আমার ইচ্ছে পূরনে শিক্ষকতা করে নিজের পায়ে দাড়াবো তারপর বিয়ের কথা চিন্তা করবো। এছাড়াও রাজিয়া বাল্য বিয়ের বিভিন্ন কুসংস্কারের কথা বলে এবং তার মা-বাবাকে বুঝিয়ে বলে অল্প বয়সে বিয়ে করে স্বামীর পরিবারের বোঝা হয়ে পড়াশোনার ক্ষতি করতে পারবো না। অবশেষে মা-বাবাকে বাল্য বিয়ের কুফল ও পরিণতি সম্পর্কে বোঝাতে সক্ষম হোন। কিশোরী রাজিয়া সুলতানার বাবা প্রতিবেদককে বলেন হাজার কষ্ট হলেও মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করবো। তারপর থেকে নিজের বিয়ে ঠেকিয়ে পড়াশুনা অব্যাহত রেখেছে রাজিয়া সুলতানা। বর্তমানে সে কচাকাটা কলেজের ডিগ্রী প্রথম বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী। রাজিয়া সুলতানার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি টিটিসি থেকে সেলাই মেশিন এর প্রশিক্ষন নিয়ে নিজ বাড়ীতে দর্জি কাজ করে এখন আমি স্বাবলম্বী। কচাকাটা যুব সংগঠনের ৩৬ জনের কমিটির মর্ধ্যে আমি সহ: সভাপতি হবার পর থেকে ১০/১২ টি বাল্য বিবাহ বন্ধ করা সহ সচেতনা মূলক প্রচারনা অব্যাহত রেখেছি এবং আমার বাড়ীর পাশে দক্ষিন জালির চরে (ঝইক) মহিদেব শিশু বিকাশ কেন্দ্রে পরিচালনা করে আসছি।
আমি ধন্যবাদ জানাই, চাইল্ড নট ব্রাইড প্রজেক্ট ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর কারণে আজ আমি বিবাহ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছি। আমি নিজেই এখন স্বাবলম্বী এবং আমার লেখাপড়ার খরচ আমি নিজেই উপার্জন করি।