এস এম রাফি ৩ মে ২০২৩ , ২:৩৫ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
সদরুল আইনঃ
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে আগেও বারবার আলোচনা করেছি। তাদের সঙ্গে আর কথা বলার মতো কিছু নাই। ওদের সঙ্গে আর বসতে ইচ্ছা করে না।ওদের সঙ্গে বসলে যেন পোড়া মানুষের গন্ধ পাই।
যুক্তরাষ্ট্রে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা সার্ভিসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়।
বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াশিংটন সফরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।সোমবার সংস্থাটির সদর দফতরে আনুষ্ঠানিক আয়োজনে যোগ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একে তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তারপর আবার আমার বাবা-মা-ভাই-বোনদের খুনি… তারপরও দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য কিন্তু আমি অনেক অনেক উদারতা দেখিয়েছি। তবে এখন আর তাদের (বিএনপি) সঙ্গে কথা বলার মতো কিছু নাই।
সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপি আন্দোলন করছে, বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কোনো আলোচনার চিন্তাভাবনা কি আপনাদের আছে?
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কিন্তু বারবার বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেছি, ২০১৮ এর নির্বাচনেও।
আসলে বিএনপি এমন একটা রাজনৈতিক দল, এই দলটা সৃষ্টি করেছে একজন মিলিটারি ডিক্টেটর, যে ১৯৭৫ সালে আমার বাবা-মা-ভাই-বোনদের হত্যা করে।
একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে এবং ক্ষমতায় আসার আগে তিনি কিন্তু যখন আমার বাবাকে হত্যা করা হলো, তারপর যিনি ক্ষমতায়, তাকে সরাল, তার পরে আরেকজন চিফ জাস্টিস সায়েম, তাকে সরিয়ে অস্ত্র হাতে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসে।
তারপর তিনি একটা রাজনৈতিক দল করে। একজন সেনাপ্রধান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে চেয়ারে বসল, তারপর হ্যাঁ/না ভোটের নামে নাটক করা হলো…। এ কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতা দখল করে, ক্ষমতায় বসে থেকে যে রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করেছে, সেটাই হচ্ছে বিএনপি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮-এর নির্বাচন নিয়ে কিন্তু কারও কোনো অভিযোগ নেই। তখন আমাদের ছিল ১৪ দলীয় জোট, আর বিএনপির নেতৃত্বে ছিল ২০ দলীয় জোট। তাদের জোট ৩০০ সিটের মধ্যে পেয়েছিল ২৯টা, বাকি সিটগুলো কিন্তু আমরা পেলাম। সেটা থেকেই তো বিএনপির অবস্থানটা জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়।
যার ফলে তারা ২০১৪ সালে আর ইলেকশন করবে না, ইলেকশন ঠেকাবে। ইলেকশন ঠেকাতে গিয়ে শুরু করল অগ্নিসন্ত্রাস। এটা মনে হয় কোনো মানুষ ভাবতে পারবে না যে, জীবন্ত মানুষগুলো বাসে করে যাচ্ছে, সেখানে তারা আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে, ট্রাকে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে, লঞ্চে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে, গাড়ি, সিএনজি…।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ৩ হাজার ৮০০ গাড়িতে তারা আগুন দিয়েছে। ২৯টা ট্রেনে আগুন দিয়েছে। সিএনজি, প্রাইভেট কার, যাকে যেখানে পেত, গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারাই নাকি তাদের আন্দোলন!
৫০০টা স্কুল তারা জ্বালিয়ে দিয়েছিল আগুন দিয়ে এবং ৭০টা সরকারি অফিস, ৬টা ভূমি অফিস তারা আগুন দিয়ে জ্বালাল, এভাবে তারা ইলেকশন বন্ধ করার চেষ্টা করল। কিন্তু আসলে জনমতের শক্তিটাই সবচেয়ে বড়।
কাজেই ইলেকশন বন্ধ করতে পারেনি, আমরা ক্ষমতায় ফিরে আসলাম। বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মারা গেল যখন, লাশ এসেছে, মানবিক কারণে আমি প্রাইম মিনিস্টার, তার পরও আমি গেলাম, সন্তানহারা মাকে সহানুভূতি জানাব…।
আমি যখন রওনা হলাম, প্রথমে বলা হলো আমার গাড়ি ওই বাড়ির ভিতর ঢুকতে দেবে না। মেইন গেট বন্ধ, যেখানে আমি চলে আসছি কাঁচি গেটে। খবর এলো যে, ওই গেট দিয়ে ঢুকতে দেবে না। তখন আমি বললাম, যেহেতু এসেই গেছি, মেইন গেট না খুললেও পকেট গেট দিয়েই যাব। আমার গাড়িটা দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমার যে অন ডিউটি এসএসএফ ভিতরে ছিল, সে জাস্ট গেট থেকে একটু বের হয়ে এসেছে আমাকে নেওয়ার জন্য, পেছনে চট করে দরজাটা বন্ধ করে দিল। আমাকে ঢুকতে দিল না।
আমি তা-ও গাড়ি থেকে নামলাম। নেমে দেখি, তাদের লোকজন ভিতরে। আমাকে ঢুকতে না দিয়ে অপমান করা হলো। এখন আপনারা বলেন, এরপর কার সঙ্গে ডায়ালগ করব আমি? ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয় তা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার পর প্রত্যেকটা পরিবার যে কষ্ট পাচ্ছে… আর যারা পোড়ার পর বেঁচে আছে, তাদের সবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলাম। যে অবস্থায় তারা আছে, সেই অবস্থা যদি কেউ চোখে দেখে… তখন আর ওদের (বিএনপি) সঙ্গে বসতে ইচ্ছা হয় না। মনে হয় ওদের সঙ্গে বসলে যেন ওই পোড়া মানুষগুলোর পোড়া গন্ধ পাই।
র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ খুব বেশি শুরু হয়ে গেল, আমেরিকায় যখন টুইন টাওয়ারে আক্রমণ হলো, তখন আমেরিকার পরামর্শেই র্যাব সৃষ্টি হলো। র্যাবের ট্রেইনিংসহ সবকিছুই কিন্তু আমেরিকার করা।
যখন আওয়ামী লীগ সরকার আসল এবং একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আমরা অব্যাহত রাখলাম, তখন হঠাৎ করে র্যাবের ওপর এই স্যাংশনটা তারা কেন যে জারি করল, সেটা ঠিক আমার কাছে বোধগম্য না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর র্যাবের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে তাদের যেসব ভূমিকা ছিল, সেটা খুবই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
কিন্তু আওয়ামী লীগ আসার পরে কিন্তু র্যাবের কোনো অফিসারও যদি কোনো অপরাধ করে, তাদের কিন্তু বিচার হয়… এটা কিন্তু অন্য দেশে নেই। এমনকি আমি বলব, আমেরিকায়ও নেই। আমাদের দেশে তো এই আইনের শাসনটা বলবৎ আছে এবং যারা যখনই কোনো রকম অপরাধমূলক কাজ করেছে, আমরা কিন্তু তাদের শাস্তি দিয়েছি।