শিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাড়ুদার নুরজাহানের প্রানীপ্রেমের কাছে হার মেনেছে দারিদ্র্য

  তাজনিন নিশাত ঋতু, রাবি ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৬:১৫ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ করছেন প্রায় ৩০ বছর। অভাবের সংসারে নিত্য করাঘাত নাড়ে দারিদ্র্য। ঝাড়ুদারের আয় থেকে নিজের সংসার চালাতেই যেখানে হিমসিম খেতে হয় সেখানে নিজের পেশাকে পাশ কাটিয়ে আরেকটি পরিচয় বড় করে তুলেছে তাকে। পাখি, বিড়াল, কুকুরদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় সিক্ত করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাড়ুদার নুরজাহান বেগম।

প্রতিদিন ভোরবেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে লেবুবাগান এলাকায় নিজ বাসস্থানের পাশে বিস্কুট ছিটিয়ে পাখিদের খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে দিনের শুরু করেন তিনি। দুপুরে বিড়াল-কুকুরের রান্না করে খাওয়ান, আবার রাতে আশ্রয়হীন কিছু প্রাণীর সঙ্গেই কাটে তার সময়। সংসারে অভাব থাকলেও প্রাণীদের জন্য তার হাত কখনো ফাঁকা থাকে না। বিড়ালদের খাওয়াতে প্রতি মাসে ৭০০-৮০০ টাকা শুধু মাছ কেনার পেছনে খরচ করেন তিনি। নিজের জন্য যা থাকে, তা-ই খান; কিন্তু বিড়াল-কুকুরদের জন্য ভাতের সাথে মাছ দিতে কখনো কার্পণ্য করেন না। শালিক, বুলবুলি, মাছরাঙা—প্রতিদিন সকালে তাদের জন্য ছিটিয়ে দেন মুড়ি-বিস্কুট। তার কথায়, ওরা যখন খেতে আসে, মনে হয় আমার সংসারটাই যেন বড় হয়ে গেছে।

পথের অসুস্থ কুকুরদের জন্যও তার মায়ার কমতি নেই। পাড়ার দুটি কুকুর, যাদের শরীরে ঘা হয়েছিল, তারা নিয়মিত তার দেওয়া পাউরুটির অপেক্ষায় থাকে। তবে তার এই প্রাণীপ্রেমের জন্য অনেকসময়ই কটু কথা শুনতে হয় প্রতিবেশীদের কাছে।

তবে এতে থেমে নেই নুরজাহান। পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে বলেন, নিজে কষ্টে থাকলেও কুকুর-বিড়ালদের ফেলে দিতে পারি না। ওরা তো অবলা, না খেলে বাঁচবে কীভাবে?এ পাড়ার সব কুকুর বিড়াল আমার হাতে বড় হয়েছে। ভালোবাসা পেলেই ওরা কাছে আসে। ওদের তো আমি মারতে পারি না, তাড়াতেও পারি না।

তার এই ভালোবাসা কেবল তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, ছড়িয়ে পড়েছে পরিবারেও। দুই ছেলেমেয়ের দুজনই হয়েছেন তার মতোই। ভ্যান চালক বড় ছেলে কুকুর পোষেন ৪-৫টি, পাশাপাশি বিড়াল রয়েছে ৭-৮টি। ছোট মেয়েটিও মায়ের মতোই কুকুর বিড়ালদের নিবিড় ভালোবাসেন।

এভাবেই অভাবের সংসারে সামান্য বেতনে জীবন কাটে নুরজাহানের। কিন্তু সেই সামান্য আয়ের মধ্যেও তিনি প্রাণীদের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখেন। বিশ্বাস করেন এতে আল্লাহ বরকত দেন। প্রতিদিন এভাবেই বিশ্বাস রেখে নতুন করে শুরু করেন পশুপাখি প্রেমী নুরজাহান।