সারাদেশ

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি বিদ্ধ সৌরভের চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাবা 

  জহির রায়হান কাউনিয়া (রংপুর)প্রতিনিধি ২৮ অক্টোবর ২০২৪ , ১:৫৪ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি বিদ্ধ সৌরভের চিকিৎসার ব্যয়ভার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তার কৃষক  বাবা। পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছতার কারণে তার সুচিকিৎসা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকারি বেসরকারি  সহযোগিতা না পেলে হয়তো তাকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে।  বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) মিরপুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের রাজীব শটিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা কৃষক  মোঃ ওসমান গনির পুত্র সৌরভ ইসলাম (২৭) বর্তমানে সে ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  ব্যাথা যন্ত্রণায় ছটফট করে দিন কাটাচ্ছে। সে সরকার ও বিত্তবান মানুষের কাছে সুচিকিৎসার জন্য  আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেছে।
গুলি বিদ্ধ শিক্ষার্থী সৌরভ ইসলাম বলেন ১৯ জুলাই শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে আমি  হেমায়তপুরের ছাত্রবাস থেকে বের হয়ে  বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য বিইউবিটি বিশ্ববিদ্যালয় মিরপুর  ক্যাম্পাসের দিকে যাই সেখানে গিয়ে জোট হয়ে মিরপুর গোল চত্বরের দিকে আসি তখন পুলিশ ও সশস্ত্র ছাত্র লীগ বাহিনীর সাথে আমাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে ওই দিন বিকাল বেলা  মিরপুর -১০ এর সামনে  আমরা মিছিল করে আসতে থাকলে  পুলিশ ও ছাত্র লীগের সশস্ত্র বাহিনী গুলি ছোঁড়ে আমরাও আত্মরক্ষার জন্য  তাদের উপর ইটপাটকেল ছুঁড়ি। তারা চতুর দিক আমাদের ঘিরে ফেলে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকলে অনেকের সাথে আমিও গুলি বিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। আমার ডান পায়ের হাটুর সাইড দিয়ে গুলি ঢুকে বের হয়ে যায়। এতে পায়ের হাড় ফেটে গিয়ে গভীর ক্ষত হয় ।  প্রচুর রক্তক্ষণ হতে  থাকে পরে  অচেনা এক ছাত্র ভাই ও রিকশা ওয়ালা এক মামা আমাকে মুমূর্ষু অবস্থায় রিকশায় তুলে মিরপুর শেওড়া পাড়া আল হেলাল হাসপাতালে পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় । সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে  ইবনে সিনা হাসপাতালে আমাকে ভর্তি করে । সেখানে আমার ডান পায়ের ভিতরে পাইপ ও লোহার খাঁচা( রিং) পড়ানো হয়। আমি লেখা পড়ার পাশাপাশি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতাম। কিন্তু আমার এ অবস্থার পর  নিমিষেই আমার চাকরি চলে যায়।  আমার মায়ের সোনার গহনা বানানোর জমা টাকা ব্যয় করে  আমার চিকিৎসা করান বাবা। ৫ আগষ্টের পর হাসপাতালের বেড ভাড়া আর কিছু ঔষধ পত্র ফ্রি পেলেও চিকিৎসার অধিকাংশ খরচ তাদের নিজেদের করতে হচ্ছে। ডাক্তার যে খাবার তালিকা দিয়েছে সে খাবার আমি অর্থের অভাবে খেতে পাচ্ছিনা। তাই আমার হাড়ের ফাটল জোড়াও লাগছে না। বর্তমানে আমার পায়ে প্লেট বসিয়ে দুই টি স্ক্রু লাগানো আছে যা পরে সার্জারী করে বের করতে হবে। 
ডাক্তার বলেছেন আমার পায়ের চিকিৎসা অনেক দীর্ঘ মেয়াদি ও ব্যয় বহুল।  স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে আমার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। সম্ভব হলে বাইরের দেশে নিয়ে গিয়ে  উন্নত চিকিৎসা করাতে হবে। এজন্য অনেক টাকা  প্রয়োজন। আমার বাবা সামান্য একজন কৃষক ।  আমরা ৪ ভাই ৩ বোন মোট ৭ ভাই বোন। আমি সবার ছোট। আমাকে অনেক কষ্টে বড় স্বপ্ন নিয়ে বিইউবিটি  বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান আমার বাবা । কিন্তু মাঝ পথে এসে  আমার জীবনে  এ করুণ পরিনতি ঘটবে তা আমার জানা ছিলনা। তবুও মনে প্রশান্তি পাই যে স্বপ্ন নিয়ে আন্দোলনে গিয়েছিলাম সেই স্বপ্ন পূরুণ হয়েছে  এ দেশে স্বৈরশাসকের পতন ঘটেছে বাক স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি,নতুন প্রজন্ম সুস্থ সুন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার পাবে। 
আমার বাবা ধার দেনা করে টাকা জোগার করে  এবং কয়েক জনের আর্থিক সহায়তায় আমি বর্তমানে ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কল্যাণপুরে ভর্তি হয়ে  চিকিৎসাধীন আছি । সেখানে দুই বেলা ফিজিওথেরাপি দিতে হয় এবং দীর্ঘ মেয়াদি এ থেরাপি দিতে হবে যা অত্যান্ত ব্যয়বহুল। এখন অর্থের অভাবে ঔষধ পত্র কিনতে পারছি না। তাছাড়াও  একটি অপারেশন বাকি আছে তার জন্য বিপুল পরিমাণ টাকার দরকার কিন্তু কে দেবে এ টাকা। 
সৌরভের বাবা কৃষক  ওসমান গনি বলেন  আমার ছেলে  গনতন্ত্র ও ছাত্রদের অধিকার আদায়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলি বিদ্ধ হয়ে ব্যথা যন্ত্রণায় হাসপাতালের বেডে ছটফট করছে। এখন তার উন্নত চিকিৎসা ও অপারেশন করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন কিন্তু আমি এ টাকা পাবো কোথায়। শুনেছি সরকার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করছেন। কিন্তু আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য কেউই খোঁজ খবর নিচ্ছে না। তিনি তার ছেলেকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে  উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার ও বিত্তবান মানুষের কাছে আর্থিক সহায়তা কামনা করছি।