চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ২৩ নভেম্বর ২০২৩ , ১০:০০ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রতারণা করে এক মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে। নিজের শেষ সম্বল পৈত্রিক জমি বিক্রি করে চাকুরীর জন্য দেয়া অসহায় ওই যুবক নিরুপায় হয়ে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে গার্মেন্টস শ্রমিকের কাজ করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
চাকুরী কিংবা প্রদত্ত অর্থ আদায়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করে কোন প্রতিকার না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানববেতর জীবন যাপন করছেন তিনি।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের পাঁচ গ্রাম এম হক বালিকা দাখিল মাদ্রাসায়।
ভূক্তভোগীর দেয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা গেছে, পাঁচগ্রাম এম হক বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপারইনটেনডেন্ট মো. আব্দুল মোনায়েম (বাতেন) খারুয়ারপাড় এলাকার নুর ইসলামের ছেলে আব্দুস সালামকে মাদ্রাসায় চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার নিকট থেকে বিভিন্ন সময়ে ১১লক্ষ ৩০হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে পত্রিকায় দেয়া ভুয়া বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে নিয়োগ ও যোগদান সম্পন্ন করে দীর্ঘদিন ধরে তালবাহানা করে আসছে। দীর্ঘ ৪বছর হয়রানির শিকার হয়ে বিভিন্ন জায়গায় চাকুরী কিংবা অর্থ উদ্ধারের জন্য অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে নিরুপায় হয়ে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে পরিবার পরিজন নিয়ে সামান্য বেতনে ঢাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকের কাজ করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন আব্দুস সালাম।
এ বিষয়ে ভূক্তভোগী আব্দুস সালাম জানান, সুপার আব্দুল মোনায়েম বাতেন ২০১৯সালের ২৪ মার্চ তারিখে একটি পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখিয়ে প্রথমে অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী ও পরবর্তীতে সহকারী শিক্ষক (ব্যবসায় শিক্ষা) পদে নিয়োগের জন্য আবেদন নেন। সে সময়ে আমার এবং আমার বাবার নিকট থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে মোট ১১লক্ষ ৩০হাজার টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। পরবর্তীতে পূর্বের তারিখ (ব্যাক ডেট) দেখিয়ে ২০১৫ সালের ২২এপ্রিল তারিখে আমাকে সহকারী শিক্ষক (ব্যবসা)পদে নিয়োগ পত্র প্রদান করেন তিনি। নিয়োগ পত্র মোতাবেক একই মাসের ৩০তারিখে অত্র মাদ্রাসায় স্বপদে যোগদান করি। যোগদান পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানে শ্রেণী পাঠদান করাতে গেলে এমপিওতে নাম না আসা পর্যন্ত মাদ্রাসায় আসতে নিষেধ করেন ওই সুপার। তার কথা মতো ব্যাংক হিসাব খোলাসহ অন্যান্য কার্যাদী সম্পন্ন করে এমপিও ভূক্তির জন্য ব্যানবেইজে কাগজ পত্র প্রেরনের কথা বললে সুপার আমাকে জানান, অনলাইনে সব কাজ হবে, তোমাকে কিছুই করতে হবে না। এমপিও ভুক্তির প্রত্যাশায় দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরও এমপিও ভুক্তি না হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে জানতে পারি ওই সুপার ভূয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে সান্তনা স্বরুপ নিয়োগ পত্র দিয়েছিলেন। বিষয়টি সুপারকে জানানো হলে এবং প্রদত্ত টাকা ফেরত চাইলে দেই-দিচ্ছি বলে তিনি তালবাহানা করতে থাকেন। পরে আমার প্রদত্ত অর্থ আদায়ের জন্য রাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
ভুক্তভোগী আব্দুস সালামের বাবা মো.নুর ইসলাম সরকার কান্না জড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের বলেন,আমি গরীব মানুষ বাবা। আমার শেষ সম্বল হিসাবে থাকা ফসলী জমিটুকু বিক্রি করে ছেলের চাকুরীর জন্য দিয়েছিলাম।এক মাত্র কৃষি জমিটুকু হাতছাড়া যাওয়ায় বর্তমানে আমি পরিবার পরিজন নেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি।
চাকুরী দেয়ার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পাঁচগ্রাম এম হক বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপারইনটেনডেন্ট মো. আব্দুল মোনায়েম বাতেন জানান, যার বিষয় তার সাথে কথা হবে। আমিতো চাকুরী দিতে চেয়েছিলাম, সে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করছে। সে আমার কি করতে পারে করুক।
এ বিষয়ে রাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ভূক্তভোগী আব্দুস সালামকে ভূয়া নিয়োগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সুপার আব্দুল মোনায়েম। বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেও টাকা আদায় করতে না পারায় সালাম গ্রাম আদালতে অভিযোগ দেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে সালিশের জন্য সুপাইনটেনডেন্টকে বার বার (তিন বার) নোটিশ জারি করেও তাকে গ্রাম আদালতে পাওয়া যায়নি। আদালত অবমাননা করায় আমরা প্রয়োজনীয় প্রতিবেদন প্রদান করেছি।