এস এম রাফি ৮ অক্টোবর ২০২৩ , ১০:৩৫ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
বর্তমানে মন্ত্রী আছেন, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিগত নির্বাচনে। কিন্তু এবার নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না নানা বাস্তবতার কারণে। তার হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
কারণ নির্বাচনকালীন যে সরকার হতে যাচ্ছে সেই সরকারে তাকে মন্ত্রী রাখা হতে পারে। আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বদ্ধপরিকর। আর এ কারণেই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যেন কোন প্রশ্ন না ওঠে সেই জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা ভাবছে।
এরকম একটি প্রস্তাবনাও এখন আওয়ামী লীগ সভাপতির টেবিল আছে যেখানে আগামী নির্বাচনে যারা মনোনয়ন পাবেন না তাদেরকে দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন।
এই সমস্ত মন্ত্রীরা যদি নির্বাচনকালীন সরকারে থাকেন তাহলে একদিকে যেমন সরকার নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছেন—এমন অভিযোগ আসবে না অন্যদিকে তাদেরও ভোট চাওয়ার জন্য নির্বাচনী এলাকায় যেতে হবে না।
ফলে মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা প্রভাব বিস্তার করছে—এমন অভিযোগ থেকেও মুক্ত হতে পারে সরকার।
বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। তারা বলছে যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোনো নির্বাচনে তারা যাবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ এই ব্যাপারে কঠোর এবং অনড় অবস্থান গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়েছেন দেওয়া হয়েছে যে শেখ হাসিনাই থাকবেন নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকলেও নির্বাচনকালীন সরকারের বাকি মন্ত্রিসভা কেমন হবে তা নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে, চলছে নানামুখী পরিকল্পনা এবং পরামর্শ।
এর মধ্যে একটি পরামর্শ আওয়ামী লীগের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যেই ৩০০ আসনে তাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে ফেলেছে। যদিও আওয়ামী লীগ সভাপতি এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে সবুজ সংকেত দেননি।
তবে কিছু কিছু প্রার্থী ইতিমধ্যেই জানেন যে আগামী নির্বাচনে তারা প্রার্থী হচ্ছেন। বাকিরা এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, প্রায় অর্ধেক আসনে আওয়ামী লীগ তার প্রার্থী পরিবর্তন করতে পারে এমনই বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আর সেটি যদি হয় তাহলে মন্ত্রিসভারও বেশ কিছু সদস্য থাকবেন যারা আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন না। শুধু মন্ত্রিসভা নয়, সংসদ সদস্য অনেকে থাকবেন যারা মন্ত্রিসভার সদস্য নন কিন্তু আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না।
এইরকম ব্যক্তিদেরকে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠনের একটি পরিকল্পনার কথা ভাবা হচ্ছে। এতে নির্বাচনের একটি নিরপেক্ষ অবয়ব তৈরি হতে পারে বলে কেউ কেউ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদেরকে পরামর্শ দিয়েছেন।
কারণ ওই ব্যক্তিরা তখন দলের স্বার্থের চেয়ে সরকার পরিচালনায় মনোযোগ দিবেন। তারা কোন নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করবেন না এবং সরকারের ক্ষমতা প্রয়োগ করে কোন ব্যক্তি বা দলের পক্ষেও কাজ করবেন না।
মনোনয়ন বঞ্চিতরা একরকম নিরপেক্ষ অবস্থান থেকেই নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করবেন। এই ভাবনাটি এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে ব্যাপক ভাবে আলোচিত হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, সরকার আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর। এই জন্য তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ঘোষণা করেছেন যে এবারের নির্বাচনে কোনো রকম কারচুপি পক্ষপাতকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।
প্রশাসনকে ইতিমধ্যে বার্তা দেওয়া হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পক্ষপাতহীন ভাবে যেন কাজ করে সেই প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
সরকার সারা বিশ্বকে দেখাতে চায় যে উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশও তেমন নির্বাচন করতে পারে। আর সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভারও একটি নিরপেক্ষ অবস্থান দেখাতে চাচ্ছে সরকার।
তবে এই মন্ত্রিসভায় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সদস্যরা থাকবেন কি থাকবেন না তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, সংসদে থাকা রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হতে পারে।
তবে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হোক না কেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা যদি মন্ত্রিসভায় স্থান পায় তাহলে নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা আন্তর্জাতিক ভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ মনে করছেন।