এস এম রাফি ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১২:২২ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
আগামী নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ আরও বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে, নানা রকম ব্যক্তির নাম নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আসতে পারে—এরকম চিন্তা মাথায় রেখেই সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে এবং এই নিষেধাজ্ঞা যেন জনজীবনে বিশেষ করে অর্থনীতির ওপর প্রভাব না ফেলে সেজন্য আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা শুরু করেছে ক্ষমতাসীন সরকার।
আর এই লক্ষ্যেই আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেই জানা গেছে। ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক কর্মকান্ড শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী আসলে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেওয়া হবে এবং এই প্রস্তুতি গুলো চূড়ান্ত করা হবে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের যে পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে-
নির্বাচনের আগে পরে যারা বিভিন্নভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থাৎ সন্তান, আত্মীয় স্বজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আছে, যাদের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারিবারিক বা অন্যরকম সম্পর্ক হচ্ছে তাদেরকে সরকার কাঠামো থেকে এবং নির্বাচন বিষয়ে দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সরকার এবং এই পদক্ষেপ দ্রুত সময়ের মধ্যেই কার্যকর শুরু হবে।
এমন সব ব্যক্তিদের নিয়ে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাজানো হবে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কোনোভাবেই সম্পর্কিত না, ভিসা নিষেধাজ্ঞা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শর্তও যাদের ওপর প্রভাব ফেলবে না।
যেমন- বর্তমানে যিনি মন্ত্রীপরিষদ সচিব আছেন বা প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব আছেন বা পুলিশের প্রধান এবং ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার হিসেবে সদ্য যিনি দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের কারোরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিতা নেই।
কাজেই তারা নির্ভারভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। কোনরকম হুমকি বা নিষেধাজ্ঞায় তারা চিন্তিত হবেন না। এরকম ব্যক্তিদেরকে সরকারের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বের কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে।
সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পোশাক রপ্তানির বাজার। এছাড়াও বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের একটি বড় বাজার মার্কিন। কাজেই এই অর্থনৈতিক সম্পর্ক যেন কোনভাবে ক্ষুণ্ণ না হয় সে ব্যাপারে সরকার সজাগ থাকবে এবং এ ব্যাপারে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করা হবে।
এ ব্যাপারে প্রয়োজন হলে সরকার একাধিক লবিস্ট ফার্মও নিয়োগ করতে পারে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষা করবে এবং অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে দেখভাল করবে।
আগামী নির্বাচন এবং তার পরবর্তী সময় পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অব্যাহত কূটনৈতিক তৎপরতা রাখা হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে ভ্রান্তি গুলো আছে সেই প্রান্তিগুলো দূর করার জন্য সরকার চেষ্টা করবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কংগ্রেসম্যান এবং সিনেটরদের বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করা হবে। তারা যেন বাংলাদেশ ব্যাপারে ভুল তথ্য গুলোর প্রতিবাদ করেন।
এই বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসা হবে। ফলে একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হবে যে পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের টানাপোড়ন গুলো দূর হয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ধারণা পায়।
এই নির্বাচনে বাংলাদেশের বেশ কিছু মিত্র পক্ষ রয়েছে। যারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সুরক্ষা চায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বিদেশের কেউ হস্তক্ষেপ করুক সেটি চায় না।
তাদেরকে আরও সক্রিয় করা এবং বিশ্ব ফোরামে যেন তারা কথা বলতে সোচ্চার হয় সেটি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই সব কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলার একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই একটি টিম তৈরি করা হবে বলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।