বিবিধ

মিডিয়ার আচরণে বুঝা যায় উত্তরের মানুষ যেন ফিলিস্তিনি আর দক্ষিনের মানুষ ইউক্রেনীয়

  রাবি প্রতিনিধি: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৩:৪৪ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম অভি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তাঞ্চল খ্যাত উত্তরবঙ্গ যেখান থেকে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকেই ২৪ এর বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি ১৯৭১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা বৈষম্যের শিকার। আমাদের পরিকল্পিতভাবে হতদরিদ্র জেলা হিসেবে রাখা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারি লালমনিরহাটের মানুষ জানে বন্যার কি কষ্ট, তারা জানে বন্যার দুরূহ অবস্থা। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়া মানে নদীর পাড়ের মানুষ আর ঘুমাতে পারেনা। যেকোনো সময় আমাদের ভিটেমাটি ভেঙে যাবে, আমাদের নতুন ঠিকানায় যেতে হবে। আপনারা আমাদের হতদরিদ্র বলেন,নিম্নশ্রেণীর মানুষ বলেন আমরা মেনে নিচ্ছি কিন্তু আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। আপনারা মিডিয়া এমন আচরণ করছেন যেন আমরা উত্তরঅঞ্চলের মানুষ ফিলিস্তিনি আর দক্ষিনের মানুষ ইউক্রেনীয়।

সোমবার (৩০সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্যারিস রোডে রংপুর বিভাগের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে গজলডোভা বাধ খুলে রংপুর বিভাগে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা কখনোই মিডিয়ায় দেখিনা উত্তরবঙ্গের মানুষ কিভাবে জীবন কাটাচ্ছে, কিভাবে আছে কি খাদ্য গ্রহণ করছে । আপনারা বলেন উত্তরবঙ্গের মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। এই দায় রাষ্ট্রের, এই দায় সরকারের কেন তারা দরিদ্রের নিম্ন শ্রেনিতে বসবাস করছে। কুড়িগ্রামে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব পাশ থেকে যে বালু উত্তোলনের ফলে শত শত গ্রামের মানুষ তাদের ভিটেবাড়ি হাড়িয়েছে । অনেকের আবাদি জমি নদী ভাঙনে হাড়িয়ে গেছে। তাদের আর কোনো আশ্রয়স্থল নেই।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর আপনারা শুধু ত্রাণ দিয়ে উত্তরের মানুষদের ক্ষান্ত রাখতে চান। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এই বৈষম্য আর কতদিন। আপনাদের লজ্জা হওয়ার কথা। আমরা দেখেছি গত কিছুদিন আগে ভারতের বাধ খুলে দেওয়ায় দেশে যে বন্যার সৃষ্টি হয়েছিক সেখানে আমাদের উত্তরবঙ্গের টাকাও সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু কোথায় আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়? কোথায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়? উত্তরবঙ্গের মানুষ বাচতে চায়!ন্যার সৃষ্টি হয়েছিক সেখানে আমাদের উত্তরবঙ্গের টাকাও সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু কোথায় আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়? কোথায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়? উত্তরবঙ্গের মানুষ বাচতে চায়!

সমাবেশে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী সজীব বলেন,আপনারা লক্ষ্য করেছেন তথাকথিত বন্ধুপ্রতীম ভারত কতৃক গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে,এই বাঁধ খুলে দেওয়ার পরে তিস্তা সহ আশেপাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এটি শুধু আজকের ঘটনা নয় গজলডোবা বাধ দেওয়ার পর থেকেই তিস্তা পাড়ের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।তারা তাদের জীবনযাপন এর নুন্যতম যে অধিকার টুকু সেটিও ভোগ করতে পারছে না।সবকিছু হচ্ছে এখন ঢাকা কেন্দ্রীক,আমাদের সবকিছু দক্ষিণবঙ্গ কেন্দ্রীক।বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য উত্তরবঙ্গ কে বাদ দিয়ে চিন্তা করলে বাংলাদেশ উন্নয়নের শিখরে পৌঁছাতে পারবে না।আমি পূর্বেও বলছি উত্তরবঙ্গের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে,নিম্নসীমার নীচে তাদের আর্থিক অবস্থা,এগুলো কেন হচ্ছে, এখন সময় এসেছে এগুলো নিয়ে কথা বলার যেহেতু আমরা একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া যাচ্ছি।উত্তরবঙ্গের মানুষ সাহায্য অনুদানে বিশ্বাসী নয় , আমরা এর একটা যৌক্তিক সমাধান চাই।ভারতের জনগন এর সাথে আমাদের শত্রুতা নেই,কিন্তু তাদের যে রাষ্ট্রীয় পলিসি, এই রাষ্ট্রীয় পলিসির সাথে শত্রুতা নয় বলবো আমরা এর ন্যায্য হিস্যা দাবি করছি।আন্তর্জাতিক যে নদীগুলো আছে ভারত এগুলোর ন্যায্য হিস্যা না দিলে প্রয়োজনে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে যাব।


গণিত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতিবছর ২-৩ বার করে বন্যা দেখা দেয়। যাতে করে কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয়। স্কুল কলেজ মসজিদ পর্যন্ত এ থেকে রক্ষা পায়না। আমাদেরকে বারবার আশ্বস্ত করলেও কোনো রকম সমাধানের ব্যবস্থা করা হয় না। বাংলাদেশের সকল জেলা যেন সমভাবে বাজেট দেওয়া হয় বিশেষ করে কুড়িগ্রামের মতো সীমান্তবর্তী জেলা গুলো যেন একটু নজর দেওয়া হয় সেই দাবি জানাচ্ছি। এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।

সমাবেশে বিভিন্ন বিভাগের প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। তাদের হাতে বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।