বিবিধ

মিথ্যে আশ্বাস,মিথ্যে শ্লোগান,মিথ্যে জয়োল্লাস -সুমন নূর

  এস এম রাফি ২৬ মে ২০২৩ , ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের নোংরা শহরগুলোর তালিকায় গাজীপুরের অবস্থান কত সেটা জানা নেই। তবে এতো বাজে শহর দ্বিতীয়টি দেখিনি। সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। বুক সমান পানিতে ঘরে ফিরতে হয় গার্মেন্টস কর্মীসহ খেটে খাওয়া মানুষদের। শুধু বৃষ্টির পানি না। ড্রেনের পানি, টয়লেটের মলমূত্র ভেসে থাকা পানি, আর খালখন্দে নাকানিচুবানি খাওয়া যেনো গাজীপুরবাসীর নিত্যদিনকার ঘটনা! সরেজমিনে যারা চিনেন তাদের কাছে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই!

বিশ্ব ইস্তেমা, ঈদ, রোজা, পূজাসহ বেশীরভাগ উৎসবে ভোগান্তির শেষ থাকে না! মাদক, চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমও পরিলক্ষিত হয়। আবাসিক, অনাবাসিক এলাকাগুলোতে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিগত মেয়রগুলো গাজীপুরের উন্নয়নে কী করেছে সেটা গাজীপুরবাসী বলতে পারবেন! অন্যান্য শহরগুলোর তুলনায় গাজীপুর কেন পিছিয়ে সেটাও গাজীপুরবাসী বলতে পারবেন।

যেকোনো নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা যতটা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকেন। নির্বাচনের পর ঠিক ততটাই ঝিঁমিয়ে পড়েন। কেন পড়েন সেটা অজ্ঞাত। যে উচ্ছ্বাস নিয়ে ভোটাররা ভোট দেন বা দেশের মানুষ তাকিয়ে থাকেন। সত্যিকার অর্থে তার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়? দিন গড়ানোর সাথে সাথে আবেগটা গড়িয়ে যায় অদূরে। পরিবর্তন বলতে দৃশ্যমান হয় না কিছুই।

আমার কাছে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়ন বাতিল, আজমত উল্লাহর হেরে যাওয়া বা জায়েদা খাতুনের মতো এক গৃহিণীর মেয়র হয়ে ওঠার গল্প কোনোটাই আনন্দিত বা ব্যথিত করে না! আমার কাছে বারবার মনে হয় এই অভাগা গাজীপুরবাসীর দূর্দশা দূর হবে কবে? কবে বলতে পারবো, ‘ধন্যবাদ মেয়র মহোদয়’।

জাতীয় নির্বাচনের আগে বাগেরহাটের তরুণ এমপি প্রার্থী জাতিকে যতটা আকৃষ্ট করেছিলো, কর্মযজ্ঞে উনি নিজেকে কতটা প্রমাণ করতে পেরেছেন জানি না। জানি না জোড়হাত করে ভোট ভিক্ষা নেয়া ঢাকার মেয়রদ্বয় জনগণের ঋণ পরিশোধ করতে পেরেছে কি না!

সরকার যেখানে রুপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ মেগা প্রকল্প আর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত সেখানে এখনো অনেক জনপ্রতিনিধি ব্যস্ত কাকে কোন প্রজেক্ট পাইয়ে দেয়া যায়, কে ভোট দিয়েছে, কে দেয়নি এই বিভাজনে।

এক মেয়র গাছ কাটে
আরেক মেয়র কাটে রাস্তা
হবু মেয়র পয়সা ছিটায়
জিতলেই পাবে টাকার বস্তা-
এই হলো সামগ্রিক অবস্থা!

সিলেট সিটিতে ভূগর্ভে বৈদ্যুতিক তার স্থাপন করা হয়েছে। এদিকে বাবুইপাখির মতো জটলাবাঁধা ইলেক্ট্রিসিটি, ডিস, এন্টেনার তার রেখে টাইলস বসিয়ে রাস্তার সৌন্দর্য্য বর্ধন করছে ঢাকার মেয়রদ্বয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই মনে হবে উন্নত বিশ্বের মতো আমরাও মাটির নিচ দিয়ে তার স্থাপন করি। আবার টাইলস ভাঙ্গা হবে, রাস্তা কাটা হবে। সমস্যা নেই, পয়সা তো আছেই।

দুই ধাপের ইস্তেমা ভেঙ্গে দশ ধাপে হতে পারে। যততত্র কলকারখানা স্থাপন, ফুটপাত দখলের এই ছোঁয়াচে রোগ শুধু গাজীপুর, ঢাকা নয়। সমগ্র দেশেই ছড়িয়ে পড়বে! এই রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন প্রদানের উদ্যোগ মেয়র তথা জনপ্রতিনিধিদেরকেই নিতে হবে। যতদিন না পর্যন্ত রোগমুক্ত করতে পারবেন ততদিন পর্যন্ত শুধু মিথ্যে আশ্বাস, মিথ্যে শ্লোগান আর মিথ্যে জয়োল্লাসেই কাটবে।

নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন এবং উনার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে, জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে বিজয়ী হলেন দেখা যাক তার কতটা পূরণ করতে পারেন।

আগামী পাঁচ বছর তথা পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাক।

(সুমন নূর, লেখক ও সমাজকর্মী)