অনলাইন ডেস্ক : ২৪ নভেম্বর ২০২৪ , ৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরা আজমপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, মুগ্ধ আন্দোলনের সময় ক্লান্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে পানি বিতরণ করছিলেন। সেই সময় হঠাৎ সংঘর্ষ বাধে, এবং গুলিবিদ্ধ হন তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার কয়েকদিন পর মুগ্ধর বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ার করেন। ভিডিওটিতে দেখা যায়, মুগ্ধ আন্দোলনকারীদের হাতে পানি তুলে দিচ্ছেন। এই ভিডিওটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় বং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মৃত্যু নিয়ে নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
এই আন্দোলনের পটভূমিতে গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন। পরবর্তীতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। আন্দোলনের সময় শহিদ হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে প্রতিষ্ঠিত হয় “জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন”। বর্তমানে এই ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মুগ্ধর জমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।
কিন্তু সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুগ্ধর মৃত্যু নিয়ে একটি বিতর্কিত দাবি ছড়িয়ে পড়ে। দাবি অনুযায়ী, মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ আসলে একই ব্যক্তি এবং মুগ্ধ নামে কেউ ছিল না।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মুগ্ধ এবং স্নিগ্ধ দুজন পৃথক ব্যক্তি। তারা দুইজন জমজ ভাই।
ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত মুগ্ধ ও স্নিগ্ধের একসঙ্গে তোলা অসংখ্য ছবি ও ভিডিও রিউমর স্ক্যানারের হাতে এসেছে।
মুগ্ধ ও স্নিগ্ধকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সংশ্লিষ্ট দাবিকে গুজব বলে চিহ্নিত করে ‘Kholilur Rahman Saikat’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে আজ ২১ নভেম্বর একটি পোস্ট প্রচারিত হয়। উক্ত পোস্টে যুক্ত একটি ভিডিওতে মুগ্ধ ও স্নিগ্ধকে একই ফ্রেমে একসঙ্গে দেখা যায়।
গত ২৬ জুলাই ‘সাদিয়া ইসলাম মৌ’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে মুগ্ধকে স্মরণ করে একটি ছবি পোস্ট করা হয়। ছবিটিতে মুগ্ধ ও তার জমজ ভাই স্নিগ্ধকে একসঙ্গে দেখা যায়।
গত ২৯ জুলাই মীর মুগ্ধের মৃত্যুর বিষয়ে প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দুই জমজ ভাই মুগ্ধ ও স্নিগ্ধের একসঙ্গে ঘোরার সময় তোলা একটি ছবি পাওয়া যায়।
সাম্প্রতিক সময় ছাড়াও ২০১৮, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে ফেসবুকে প্রচারিত মুগ্ধ ও তার জমজ ভাই স্নিগ্ধের একত্রে তোলা বিভিন্ন ছবি পাওয়া যায়।
Collage: Rumor Scanner.
গত ১৮ নভেম্বর মুগ্ধের বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিন ভাইয়ের ছোটবেলার একটি ছবি শেয়ার করেন। এর আগে, ২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর ‘MD Reazul Islam’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মুগ্ধ ও স্নিগ্ধের কিশোর বয়সের ছবি প্রকাশিত হয়।
গত ৫ আগস্ট মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্তর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে রিকশায় করে রক্তাক্ত অবস্থায় মুগ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়কার দৃশ্য দেখা যায়।
এর আগে, গত ১৮ জুলাই ‘Jahidul Islam Shawon’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মুগ্ধকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও স্কাউটের পতাকা দিয়ে আচ্ছাদিত অবস্থায় শায়িত করার সময়কার একটি ছবি পোস্ট করা হয়।
গত ১৯ আগস্ট ‘Heroes of 24’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ‘মীর মাহফুজুর রহমান (মুগ্ধ)’ নামফলকযুক্ত কবরের একটি ছবি প্রকাশিত হয়। একই দিনে ভিন্ন একটি ফেসবুক পেজে মুগ্ধের কবর জিয়ারতের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। এর পর, ১৮ অক্টোবর মুগ্ধের বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একই কবরের আরেকটি ভিডিও পোস্ট করেন। এসব পোস্ট থেকে জানা যায়, মীর মুগ্ধ রাজধানীর উত্তরার কামারপাড়া কবরস্থানে শায়িত আছেন।
এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আওয়ামী লীগপন্থি অ্যাক্টিভিস্ট ডাক্তার আইজুদ্দিন স্বীকার করেন যে, এই গুজবটি তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়িয়েছেন।
উল্লিখিত তথ্যসমূহ বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয় যে, মীর মুগ্ধ ও মীর স্নিগ্ধ দুজন সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি এবং তারা জমজ ভাই।
সুতরাং, “মুগ্ধ এবং স্নিগ্ধ আসলে একই ব্যক্তি এবং মুগ্ধ নামে কেউ ছিল না” শীর্ষক দাবিটি ভিত্তিহীন ও সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
Rumor Scanner’s analysis.
Kholilur Rahman Saikat – Facebook Post
সাদিয়া ইসলাম মৌ – Facebook Post
Prothom Alo – ‘চোখেমুখে হাসত ছেলেটা, নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে সে আন্দোলনে গিয়েছিল’
আফরিন নেহা – Facebook Post
Ishan Uz Zaman – Facebook Post
Rhafiqul Islam Pranto – Facebook Post
Mir Mahmudur Rahman – Facebook Post
MD Reazul Islam – Facebook Post
Jahidul Islam Shawon – Facebook Post
Heroes of 24 – Facebook Post
Thoughts Behind The KU – Facebook Post
Mir Mahmudur Rahman – Facebook Post