ইউসুফ হোসের,রাবি ৭ মার্চ ২০২৪ , ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তিযুদ্ধ চলছে। হাজারো শিক্ষার্থী লালিত স্বপ্নকে জয় করতে এই যুদ্ধ। অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোর সামনে ভর্তিচ্ছুদের পাশাপাশি অভিভাবকদের উপচে পড়া ভিড়। তাদের চোখে মুখে চিন্তার ভাজ। এরই মধ্যে এক বয়স্ক লোককে দেখা যায়। পাশেই জামা-কাপড়ের ব্যাগ। খুব চিন্তিত ও আনমনা হয়ে বসে আছেন। দূর থেকে বোঝা না গেলেও কাছে গিয়ে জানা যায়, মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি।
বলা হচ্ছে নিলফামারীর কৃষক ঘন শ্যাম রায়ের কথা। সৈয়দ ড. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ অ্যাকাডেমিক ভবনে মানবিক ইউনিটের দ্বিতীয় শিফটে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন মেয়ে। আর তার জন্য প্যারিস রোডের পাশে অপেক্ষা করছিলেন ঘন শ্যাম।
নিলফামারীর ছোট একটি গ্রামে কৃষি কাজ করে সংসার চালায় ঘন শ্যামের। বয়স ষাটের আশেপাশে হবে। তার নেই কোনো ছেলে। আছে দুটি মেয়ে। একজন নিলফামারী ডিগ্রি কলেজে ইন্টারে পড়ালেখা করেন। অন্যজন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যোদ্ধা। দুই মেয়েকে ঘিরেই তার স্বপ্ন। মেয়েদের ভালো পর্যায়ে দেখতে চান। নিজের জীবনের সর্বোচ্চ দিয়ে তিনি তাদের পড়াশোনা করাতে চান।
ঘন শ্যাম বলেন, আমার কোনো ছেলে নেই। থাকার মধ্যে আছে দুটি মেয়ে। তাদেরকে ঘিরেই আমার স্বপ্ন। আমি চাই, তারা ভালো পর্যায়ে যাক। আমি দিন আনি দিন খাই। যদি একদিনের তিন বেলার বদলে একবেলা খেতে হয়, তবুও মেয়েদের পড়াতে চাই।
তিনি আরো বলেন, মেয়েদের প্রতি সমাজ চিরকাল অবহেলা করে আসছে। কিন্তু মেয়েদের অবহেলা করলে সভ্য সমাজ হয়ে উঠবে না। আগের মানুষ ভুল জানত, ভুল বুঝত। মেয়েদের প্রতি কোনো নির্ভরশীলতা ছিল না। সমাজ এখন বদলেছে। ছেলে-মেয়ে সবার সমান অধিকার। সেই হিসেবে মেয়েদের পড়ালেখায় অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করিয়েছি। সেই নীলফামারী থেকে এতদূর নিয়ে এসেছি, যাতে সে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। আমার স্বপ্ন, আমার মেয়ে সমাজের ভালো পর্যায় যাবে। এজন্য আমি আমার জীবনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে প্রস্তুত।
তিনি সব মেয়েদের বাবা-মার প্রতি বলেন, মেয়েদের অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। আমি তাদের অনুরোধ করব, তারা যেন মেয়েদের প্রতি সচেষ্ট হয়ে। আগামী পৃথিবীর জন্য মেয়েদের এগিয়ে নিয়ে যায়।