সারাদেশ

রংপুরের শিশু পরিবারে ঠাঁই হলো নবজাতকসহ লাবনীর

  হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ , ৮:৫৮ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

রংপুর নগরীতে নবজাতক বিক্রির ঘটনায় অভিভাবকহীন ও আশ্রয়হীন হয়ে পরা গৃহবধু লাবনী আক্তার ও তার নবজাতকের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। তাঁর ঠাই হয়েছে রংপুর সরকারি বারিকা শিশু পরিবারে। স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন তিনি।
গতকাল বুধবার সকালে সমাজসেবা অধিদপ্তর রংপুরের মাধ্যমে তাকে নগরীর বিনোদপুরে অবস্থিত সরকারি শিশু পরিবার বালিকায় স্থানান্তর করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর জেলা সমাজসেবার অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন। তিনি জানান, গত কয়েকদিন থেকে গণমাধ্যমে নবজাতক বিক্রির ঘটনায় অসহায় লাবনী আক্তারের খবর প্রকাশিত হলে, বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আসে। এ বিষয়ে রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরকে জানালে তাৎক্ষণিক বিষয়টি আমলে নেয়। পরবর্তিতে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে অসহায় নারী ও নবজাতককে আমরা সরকারি শিশু পরিবার বালিকায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়। বিষয়টির স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাকে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
রংপুর সরকারি শিশু পরিবার বালিকার তত্বাবধায়ক আলতাব হোসেন সরকার জানান, আমাদের এখানে সকালে নবজাতককে নিয়ে ওই নারী এখানে এসেছে। আমরা আমাদের সাধ্যমত সরকারি সহযোগিতা প্রদান করছি।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, অসহায় লাবনী আক্তার ও নবজাতকের বিষয়টি জানার পর আমরা দ্রুত সমাজসেবা অধিদপ্তরকে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। সেই মোতাবেক জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে নবজাতক ও ওই নারীকে সরকারি শিশু পরিবার বালিকায় রাখা হয়েছে।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি রংপুর নগরীর ভুরারঘাট এলাকার ওয়াসিম আকরামের স্ত্রী লাবনী প্রসব ব্যথা নিয়ে হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ওই রাতে সিজারের মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। তিন দিন পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ লাবনী ও তার স্বামী ওয়াসিমকে বিল পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকলে একপর্যায়ে ওয়াসিম ও লাবনী দম্পতির অসচ্ছলতাকে পুঁজি করে হাসপাতালের পরিচালক এমএস রহমান রনি তার পূর্বপরিচিত জেরিনা আক্তার বিথী ও তার স্বামী রুবেল হোসেন রতনের কাছে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে নবজাতককে বিক্রি করে দেন। এ ঘটনায় লাবনী আক্তার কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ রোববার নগরীর পীরজাবাদ এলাকা থেকে নবজাতককে উদ্ধারসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।## মোহা: ইনামুল হক মাজেদী, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি, রংপুর/০১৭১২৭৫৪৩৩৮

রংপুরে তীব্র শীতে বেড়েছে গরম কাপড়ের কদর
হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর॥
রংপুর মহানগরীসহ এ অঞ্চলে আট জেলায় তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠা-া অনুভূত হচ্ছে গত সপ্তাহখানেক ধরে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবি ও খেটে খাওয়া মানুষজন। তারা শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড় পড়ছেন। একই সাথে শীতের কারণে রংপুর নগরীসহ জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতে ফুটপাতে বেশ জমে উঠেছে পুরনো গরম কাপড়ের বিক্রি। অভিজাত কাপড়েরর দোকানগুলোতেও ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের। এতে যেমন গরম কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে, ঠিক তেমনি দোকানগুলোতে বিক্রি বেড়ে গেছে। তবে এই অঞ্চলে দত-দরিদ্র, শ্রমজীবি ও খেটে খাওয়া মানুষজনসহ চরাঞ্চলের বাসিন্দারা সরকারি-বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা চেয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সোয়েটার, জ্যাকেট, হুডি, ব্লেজার, শাল, মাফলার, কানটুপি ও হাত মোজার কদর প্রতিদিনই বাড়ছে।
রংপুর নগরীর ছালেক মার্কেট, জামাল মার্কেট ও হনুমানতলা এরশাদ হর্কাস মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণী বিতানে গিয়ে দেখা গেছে, সোয়েটার, জ্যাকেট, হুডি, ব্লেজার, শাল, মাফলার বেশি বিক্রি হচ্ছে। সাথে কানটুপি, হাত ও পা হাত মোজারও চাহিদা অনেক। ঠা-া থেকে সুরক্ষার জন্য গরম কাপড়ের পাশাপাশি হাত ওকান টুপির বিকল্প নেই। এছাড়াও মাঙ্কি টুপি, মাফলার টুপি, ক্যাপের মতো টুপি, ঝোলা টুপিসহ বিভিন্ন ধরনের টুপি বিক্রি হচ্ছে। ওলের তৈরি বিভিন্ন রঙ এবং সাইজের টুপিও বিক্রি হচ্ছে। অনেকে আবার পোশাকের সাথে মিল রেখে লাল, সাদা, সবুজ, কালো, খয়েরি ও নীল রঙের টুপি কিনছেন। ২০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত একটি টুপি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও চার থেকে এক হাজার টাকায় সোয়েটার ও জ্যাকেট বিক্রি হচ্ছে। ছাদরেরও চাহিদা রয়েছে যতেষ্ট।
এদিকে নগরীর স্টেশন বাজার, সাতমাথা ও কাচারী বাজার এলাকায় বিভিন্ন ফুটপাতে পুরাতন কাপড়ের দোকানেও ভিড় বেড়েছে। এসব বিক্রেতারা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুর থেকেই পুরাতন কাপড়ের বান্ডিল বা বস্তা ক্রয় করে রংপুর নগরীসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় এসব গরমের কাপড় বিক্রি করেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। পুরাতন কাপড়ের দাম কম, তাই নিম্ন আয়ের মানুষ কম দামে কাপড় কিনছেন।
শ্রমজীবি আশরাফুল আলম বলেন, পুরাতন গরম কাপড়ের দোকানে এসেছি, এই ঠা-ায় তেমনটা কাজ করতে পারছিনা তাই কম দামে একটি জ্যাকেট কিনলাম।
নগরীর স্টেশন এলাকার পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন থেকে এই এলাকায় কনকনে শীত নেমেছে। গরম কাপড়ও বিক্রি হচ্ছে বেশ।
টুপি ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে রংপুরে অনলাইন টুপির চাহিদা বেশি। আগে এই টুপি দেড়শ টাকায় বিক্রি হলেও এখন দুই থেকে আড়াই’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ফ্যাশনেবল টুপি ৫ থেকে ৬’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, শীত মোকাবিলায় সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জেলা প্রশাসনের। এরইমধ্যে নগরীর ৩৩ ওয়ার্ডসহ জেলার আট উপজেলা ও তিন পৌর এলাকায় সরকারিভাবে প্রথম পর্যায়ের ৪৬ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে ও দ্বিতীয় পর্যায় ১৩ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শীত মোকাবিলায় আরো ২৫ হাজার পিস কম্বলের চাহিদা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।