রংপুর ব্যুরো ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ , ১২:০৫ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
রংপুর মহানগরীসহ এ অঞ্চলে আট জেলায় তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে গত সপ্তাহখানেক ধরে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবি ও খেটে খাওয়া মানুষজন। তারা শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড় পড়ছেন। একই সাথে শীতের কারণে রংপুর নগরীসহ জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতে ফুটপাতে বেশ জমে উঠেছে পুরনো গরম কাপড়ের বিক্রি। অভিজাত কাপড়েরর দোকানগুলোতেও ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের। এতে যেমন গরম কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে, ঠিক তেমনি দোকানগুলোতে বিক্রি বেড়ে গেছে। তবে এই অঞ্চলে দত-দরিদ্র, শ্রমজীবি ও খেটে খাওয়া মানুষজনসহ চরাঞ্চলের বাসিন্দারা সরকারি-বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা চেয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সোয়েটার, জ্যাকেট, হুডি, বেøজার, শাল, মাফলার, কানটুপি ও হাত মোজার কদর প্রতিদিনই বাড়ছে।
রংপুর নগরীর ছালেক মার্কেট, জামাল মার্কেট ও হনুমানতলা এরশাদ হর্কাস মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণী বিতানে গিয়ে দেখা গেছে, সোয়েটার, জ্যাকেট, হুডি, বেøজার, শাল, মাফলার বেশি বিক্রি হচ্ছে। সাথে কানটুপি, হাত ও পা হাত মোজারও চাহিদা অনেক। ঠাÐা থেকে সুরক্ষার জন্য গরম কাপড়ের পাশাপাশি হাত ওকান টুপির বিকল্প নেই। এছাড়াও মাঙ্কি টুপি, মাফলার টুপি, ক্যাপের মতো টুপি, ঝোলা টুপিসহ বিভিন্ন ধরনের টুপি বিক্রি হচ্ছে। ওলের তৈরি বিভিন্ন রঙ এবং সাইজের টুপিও বিক্রি হচ্ছে। অনেকে আবার পোশাকের সাথে মিল রেখে লাল, সাদা, সবুজ, কালো, খয়েরি ও নীল রঙের টুপি কিনছেন। ২০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত একটি টুপি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও চার থেকে এক হাজার টাকায় সোয়েটার ও জ্যাকেট বিক্রি হচ্ছে। ছাদরেরও চাহিদা রয়েছে যতেষ্ট।
এদিকে নগরীর স্টেশন বাজার, সাতমাথা ও কাচারী বাজার এলাকায় বিভিন্ন ফুটপাতে পুরাতন কাপড়ের দোকানেও ভিড় বেড়েছে। এসব বিক্রেতারা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুর থেকেই পুরাতন কাপড়ের বান্ডিল বা বস্তা ক্রয় করে রংপুর নগরীসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় এসব গরমের কাপড় বিক্রি করেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। পুরাতন কাপড়ের দাম কম, তাই নিম্ন আয়ের মানুষ কম দামে কাপড় কিনছেন।
শ্রমজীবি আশরাফুল আলম বলেন, পুরাতন গরম কাপড়ের দোকানে এসেছি, এই ঠাÐায় তেমনটা কাজ করতে পারছিনা তাই কম দামে একটি জ্যাকেট কিনলাম।
নগরীর স্টেশন এলাকার পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন থেকে এই এলাকায় কনকনে শীত নেমেছে। গরম কাপড়ও বিক্রি হচ্ছে বেশ।
টুপি ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে রংপুরে অনলাইন টুপির চাহিদা বেশি। আগে এই টুপি দেড়শ টাকায় বিক্রি হলেও এখন দুই থেকে আড়াই’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ফ্যাশনেবল টুপি ৫ থেকে ৬’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, শীত মোকাবিলায় সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জেলা প্রশাসনের। এরইমধ্যে নগরীর ৩৩ ওয়ার্ডসহ জেলার আট উপজেলা ও তিন পৌর এলাকায় সরকারিভাবে প্রথম পর্যায়ের ৪৬ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে ও দ্বিতীয় পর্যায় ১৩ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শীত মোকাবিলায় আরো ২৫ হাজার পিস কম্বলের চাহিদা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।###
রংপুরে আলুর বাম্পার ফলন, লেট বøাইটে দুশ্চিন্তায় চাষিরা
রংপুর ব্যুরো\
রংপুর মহানগরীসহ এ অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় লেট বøাইটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। আলুর বাম্পার ফলনে উচ্ছ¡সিত চাষিরা। তবে লেট বøাইটের শঙ্কায় চাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তবে কৃষি বিভাগ, আলুর রোগ প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে চাষিদের পরিমিত স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছে।
এদিকে শীতের ধকল কাটিয়ে ন্যায্য দাম আর আলু সংরক্ষণে হিমাগার সংকট সৃষ্টি না হলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রংপুর নগরীর তামপাট, মাহিগঞ্জ, তপোধন, রাজেন্দ্রপুর, দর্শনা, মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ, লতিবপুর, রানীপুকুর ও পীরগাছার নাগদহ, দেউতি, পারুল, ছাওলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা আলুর খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কোথাও পানি দিচ্ছে, কেউ স্প্রে দিচ্ছে আবার কেউ আগাছা পরিস্কার করছে। তবে আলুর খেত দেখে মন ভালো হলেও অজানা শঙ্কায় চাষিরা। নিয়মিত কুয়াশা কাটাতে স্প্রে করায় তাদের খরচ বাড়ছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনও ভরা আলুর মাঠ রক্ষা করে চলেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অদিপদপ্তর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, রংপুর মহানগরী ও জেলা সহ রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এ বছর চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। তবে ৯৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে রংপুর জেলায় ৫৩ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে, যা রংপুর অঞ্চলের সর্বোচ্চ। এ ছাড়া নীলফামারী জেলায় ২১ হাজার ৯৯০ হেক্টর, গাইবান্ধা জেলায় ১১ হাজার ১৫২ হেক্টর, কুড়িগ্রাম জেলায় ৭ হাজার ৭৫ হেক্টর ও লালমনিরহাট জেলায় ৬ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।
এদিকে রংপুর অঞ্চলের আলুচাষিরা এবার আগে ভাগেই দ্রæত বর্ধনশীল জাতের গ্রানোলা, লরা, মিউজিকা, ক্যারেজ, রোমানা ও ফাটা পাকরি চাষ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু আবাদ হয়েছে রংপুরে এবং সবচেয়ে কম লালমনিরহাট জেলায়। আসছে মার্চ মাসের শেষের দিকে জমিতে আলু উত্তোলন শেষ হবে। এসব তথ্য জানিয়েছেন, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর রংপুরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন।
কৃষকরা জানিয়েছেন, গত বছরে আলুর ভালো দাম আর এবার আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় দিন দিন ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। এখন আলু খেতে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর এরই মধ্যে আগাম জাতের আলু ঘরে তোলার কাজ শুরু করেছেন অনেকেই। তবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় লেট বøাইটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রংপুর নগরীর তামপাট এলাকার নুর ইসলাম ও ইছার আলী বলেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছে। আগাম কিছু আলু বিক্রি করে দামও ভালো পেয়েছেন। তবে ডিসেম্বরের শেষের দিকে শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় আলু ক্ষেতে রোগ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত রয়েছেন।
পীরগাছা উপজেলার হাউদারপাড় এলাকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যেভাবে শীত বাড়ছে, তাতে চাষাবাদ করা মুশকিল। সার, বীজ, সেচ সব কিছুর দাম বাড়ছে। সেই সাথে দিনমজুরও পাওয়া যায় না। ধার দেনা করে আলু চাষ করছি। কিন্তু শীতের কারণে যদি আলুর পচারি রোগ হয় লোকসানের বোঝা বইছে।
পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের গাবুড়া চরে আলু চাষ করেছেন সোহাগ মিয়া ও আজগর আলী। তাদের বাড়ি নগরীর বড় রংপুর এলাকায়। তারা প্রতিবছর ওই এলাকায় জমি বর্গা নিয়ে আলু চাষ করেন। তারা জানান, এবার আলুর মৌসুমের শুরুতে বীজ আলু ও সার সংকটের কারণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে আলুর ফলন ভালো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আলু নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে না।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আলুর খেতের জন্য সবচেয়ে বেশির শঙ্কার কারণ হলো ঘন কুয়াশা। এই ঘন কুয়াশা দীর্ঘদিন থাকলে আলুর মধ্যে লেট বøাইট হতে পারে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে আলুচাষিদের নিয়মিত আগাম প্রস্তুতি হিসেবে কৃষকদের পরিমিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে তিনি জানান।