স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ , ৩:২৫ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে স্থানীয় বিরোধের জেরে ডাকা সালিসে দুই শিক্ষার্থীকে জুতাপেটা করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকালে উপজেলার সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
রাজিবপুর থানার ওসি তসলিম উদ্দিন এবং ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে সালিসে দুই শিক্ষার্থীকে জুতাপেটার ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করে এ ঘটনাকে ‘সমন্বয়কদের জুতাপেটা’ করা হচ্ছে বলে দাবি করছেন কেউ কেউ। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক সদস্যের সাথে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী গতবছর এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু। তারা দুজন সহপাঠী এবং রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তারা অংশ নিলেও বর্তমানে তারা সমন্বয়ক কিংবা অন্য কোনও পদে নেই। সালিসে এক শিক্ষার্থীর বড় ভাইকে কান ধরে উঠবস করানো হয় বলেও জানা গেছে।
সালিসে দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা ছাড়াও স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের একাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। তবে জনসম্মুখে দুই শিক্ষার্থীকে জুতাপেটা করার বিষয়ে তারা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন,’ আমার বন্ধুর বড় ভাই স্থানীয় দোকানদার। তার সাথে পাশ্ববর্তী ধুলাউড়ি গ্রামের ফরমান নামে এক সেনা সদস্যের ব্যবসায়ীক লেনদেন নিয়ে ঝামেলা হয়। বড় ভাইয়ের দোকান হওয়ায় তাতে আমার বন্ধুও জড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার ওই সেনা সদস্যের সাথে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। বন্ধুর সাথে বিরোধ হওয়ায় আমিও সেখানে জড়িয়ে পড়ি।’
তিনি আরও বলেন,’ আমরা জানতাম না ফরমান সেনা সদস্য। আঘাতে তিনি আহত হলে আইনি ব্যবস্থা নিতে চান। কিন্তু আমাদের অভিভাবকরা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার উদ্যোগ নেন। আজ (বুধবার) স্কুল মাঠে সালিস হয়। সেখানে আমার বড় ভাই আমাকে ও আমার বন্ধুকে জুতা দিয়ে মারেন। এটা অনেকটা পারিবারিক শাসনের মতো করে হয়েছে। এতে আমার কোনও অভিযোগ নেই।’
‘ আমি মনে করি, আমি অপরাধ করেছি। অভিভাবকরা আমাকে শাস্তি দিয়েছেন। এটা আমার প্রাপ্ত ছিল।’ শাস্তির বিষয়ে অনাপত্তি জানিয়ে বলেন সদ্য কলেজ পার করা এই শিক্ষার্থী।
সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ফেসবুকে ভিডিও ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলাম। তবে গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে আমি ও আমার বন্ধু কেউই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত নেই। কিন্তু একটি মহল পারিবারিক এই সালিসের ঘটনাকে রাজনৈতিক রঙ দিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগের ছেলেরা সমন্বয়ক ট্যাগ দিয়ে ফেসবুকে ভিডিও শেয়ার করছে। কিন্তু এই ঘটনার সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনও সম্পর্ক নেই।’
এ ব্যাপারে জানতে সেনাসদস্য ফরমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সংগঠক ও রাজিবপুরের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ দুই শিক্ষার্থীকে পারিবারিক সালিসে শাসন করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এটা দুই পক্ষের পারিবারিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু একটি মহল তাদেরকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে গুজব ছাড়াচ্ছে। ওই দুই শিক্ষার্থী আমাদের সাথে কোনও পর্যায়ে যুক্ত নেই।’
রাজিবপুর থানার ওসি তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দা এক সেনা সদস্যের সাথে বিবাদের কারণে পারিবারিকভাবে দুই শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। এ নিয়ে কোনও পক্ষ থানায় অভিযোগ দেয়নি।’