বিবিধ

রাবি শিক্ষার্থীর পরিচয়ে অনলাইনে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক;জিডি করেও পাননি সমাধান

  রাবি প্রতিনিধি: ২৯ এপ্রিল ২০২৫ , ৬:৫৮ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

জাতীয় পরিচয়পত্র,বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র,অনাবাসিক হল কার্ড ছবি ও ব্যক্তিগত ছবি চুরি করে ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় (ফেসবুক পেজ, গ্রুপ ও হোয়াটসঅ্যাপ) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর নামে ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ডলার কেনাবেচার নামে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন এক শিক্ষার্থী। একটি প্রতারক চক্র বেশ কয়েকজনের কাছে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন বলে জানান তিনি।

আজ মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান তিনি। ঐ শিক্ষার্থীর নাম মুশফিকুর রহমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর গ্রামের বাসা রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলা।

বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সহায়তায় মতিহার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেও কোন সমাধান পাননি তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, আজ আমি এক ভয়াবহ এবং চরম নিরাপত্তাহীনতার বাস্তবতাকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে এসেছি। গত কয়েক মাস ধরে আমি এবং আমার পরিবার এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমার । এই তারা বিভিন্ন প্রবাসীসহ দেশের ভেতরে থাকা সাধারণ মানুষকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।

এই প্রতারণার মাধ্যমে তারা ইতিমধ্যে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে-যার চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত আমি, কারণ তারা আমার পরিচয় ব্যবহার করছে। ভুক্তভোগীরা যখন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তখন তারা সরাসরি আমার ওপর ক্ষোভপ্রকাশ করছেন, আমাকে বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক মনে করছেন। ফলে আমি প্রতিনিয়ত হুমকি, গালাগালি, প্রাণনাশের ভয় এবং সামাজিক অপমানের শিকার হচ্ছি।

৮ই অক্টোবর ২০২৪ সালে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত অবস্থায় জানতে পারি, আমার পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারকচক্র এক প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ওই প্রবাসী ভাই আমার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং প্রথমবারের মতো আমি পুরো ঘটনাটি জানতে পারি।
বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার বিভাগের একজন সম্মানিত শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করি। তাঁর পরামর্শে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে যোগাযোগ করি এবং ৯ই অক্টোবর ২০২৪ ইং তারিখে মতিহার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি (জিডি নম্বর: ৩৯৯)। পরবর্তীতে এক সিনিয়র ভাইয়ের পরামর্শে রাজশাহী র‍্যাব-৫ অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করি।

প্রতারকচক্রের কারণে যাতে কেউ প্রতারিত না হন, সেজন্য আমি দ্রুত আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি সতর্কীকরণ পোস্ট দেই। সেখানে আমি স্পষ্টভাবে জানাই যে, আমার পরিচয় ব্যবহার করে কেউ যদি ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ডলার কেনাবেচা বা আর্থিক লেনদেনের প্রস্তাব দেয়, তা যেন বিশ্বাস না করেন এবং যে কোন প্রকার লেনদেন থেকে বিরত থাকেন।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে, দুই দিনের মধ্যেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গ্রুপে ‘সমাসুদ’ নামের আরো একজন ব্যক্তি আমার পরিচয় উল্লেখ করে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ করেন। তারপর, একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে এবং অনেকে আমার বাসায় এসেও হুমকি দিতে শুরু করে।

এই প্রতারণার মাধ্যমে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটি এখন পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এবং নিচ্ছে – যা শুধু রাজশাহী নয়, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা এমনকি বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী ভাইদেরও আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়েছে।

প্রতারিত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন- ফতে মাহমুদ রাফি (প্রবাসী), মাহমুদুল খান (ময়মনসিংহ),
রাকিব হাসান (সিরাজগঞ্জ), সুমন মিয়া (শেরপুর), মাসুদ (রাজশাহী), সাজিদ (রাজশাহী),
আরও অনেক অজানা ভুক্তভোগী।

তিনি আরো বলেন, ঘটনাটি শুধু আর্থিক প্রতারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি এখন আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, সামাজিক সম্মান, মানসিক স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক শান্তির ওপরও সরাসরি আঘাত করেছে। প্রতারিত ব্যক্তিরা আমাকে ফোনে হুমকি দিয়েছেন, মেসেজে গালাগালি করেছেন, এমনকি রাজশাহীতে আমার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন।

প্রতারিত বা ভুক্তভোগীরা তাকে বিভিন্নভাবে হুমকিও দেন বলে জানান তিনি। “রাস্তায় যেখানে পাব, সেখানেই মেরে টাকা আদায় করব,”
“তোকে বাঁচতে দেব না, দেখে নেব,”
“প্রতারক, তোর বিচার জনগণ করবে,”
“তুই প্রতারক, তোকে বিশ্বাস করি না,”
“তোকে কোর্টে মামলা দিয়ে জেলে পাঠাব।” ইত্যাদি বলে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।

নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি প্রায় প্রতিদিন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এই হুমকির কারণে আমি এবং আমার পরিবার চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি। ক্যাম্পাসে মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারছি না, এবং রাতের বেলায় বাড়ির সদস্যরাও আতঙ্কে থাকছেন। পড়াশোনা ও স্বাভাবিক জীবন ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতারকচক্রের কারণে আমার শিক্ষা জীবন, সামাজিক সম্মান ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইনের আশ্রয় নিয়েও এখন পর্যন্ত প্রকৃত প্রতারকচক্রকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। ফলে দুশ্চিন্তা, আতঙ্ক ও ঝুঁকি প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতির কারণে আমি বাধ্য হয়েছি সাইবার অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, রাজশাহী কোর্টের শরণাপন্ন হতে এবং মামলা রুজি করার সিদ্ধান্ত নিতে।

ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্য কোনো মাধ্যমে যদি আমার নামে ডলার কেনাবেচা বা লেনদেনের প্রস্তাবে বিশ্বাস না করে কোনো আর্থিক লেনদেন না করা এবং সরাসরি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবর রহমান বলেন, কিপ্টো কারেন্সি নিয়ে বেশ কয়েকটা অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এটা তো অনেকদিন আগের কাহিনী ছিলো। তবে এখনও যেহেতু সমাধান হয়নি, আমি এ বিষয়ে তার সাথে কথা বলে দেখি কী কিছু করা যায় কিনা।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, এ বিষয়ে পদক্ষেপ তো নেওয়ার কথা। সাইবারে বিষয়টা পাঠানোর কথা। তবে বিষয়টা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।