রাজনীতি

শর্ত সাপেক্ষে নির্বাচনে যাওয়ার নাটকীয় ঘোষণা দিতে পারে বিএনপি

  এস এম রাফি ১১ নভেম্বর ২০২৩ , ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

সদরুল আইনঃ বিএনপি এখন এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। দুই দিনের আন্দোলনের বিরতি চলছে।

রোববার থেকে আবার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডাকা হয়েছে। বিএনপির বিভিন্ন নেতারা বলছেন, এই অবরোধের ধারা অব্যাহত থাকবে।

কিন্তু গত রাতে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতার সঙ্গে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে এবং গভীর রাত পর্যন্ত এই বৈঠকে নির্বাচনের ব্যাপারে অনেকগুলো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, শর্তসাপেক্ষে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যেতে পারে। আজ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান অন্তত তিনটি দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিএনপির মনোভাবের কথা জানিয়েছেন।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বাদ রেখে আন্দোলনের স্বার্থে নির্বাচনে যাওয়ার একটি নাটকীয় সিদ্ধান্ত বিএনপি নিতে যাচ্ছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

অবশ্য বিভিন্ন সূত্র বলছে, এর আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিএনপির একাধিক নেতাকে নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং নির্বাচনে যেয়ে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে কি না সেটি নিশ্চিত করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই বার্তাটি ড. মঈন খান লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার কাছে জানিয়েছেন।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছেন, ড. মঈন খান, রুমিন ফারহানা এবং শামা ওবায়েদ তিনজন তারেক জিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে কথা বলেছেন এবং তারা নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।

এখানে সবচেয়ে বেশি যেটি প্রাধান্য পেয়েছে তা হল আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তা। এই তিন নেতাই তারেক জিয়াকে বলেছেন, যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না যায় তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য একতরফা নির্বাচন করা অত্যন্ত সহজ হয়ে পড়বে।

আওয়ামী লীগ বিনা বাধায় নির্বাচন করবে এবং টানা চতুর্থ বারের মতো ক্ষমতায় আসবে। ওই নির্বাচনকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি করতে পারবে না।

কারণ বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন করা যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যবাধকতা। আর যদি বিএনপি নির্বাচনে আসবে তাহলে একাধিক লাভ হবে বলেও এই তিন নেতা তারেককে বুঝিয়েছেন। তাদের মতে, বিএনপি যদি নির্বাচনে যায় তাহলে পরে আন্তর্জাতিক মহলের নজরদারি তৈরি হবে।

সরকার যখনই হস্তক্ষেপ করবে, যখনই নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে তখনই বিএনপি অভিযোগ করার সুযোগ পাবে এবং এর ফলে এই নির্বাচন নিয়ে সরকার একটা বেকায়দা অবস্থা পড়বে।

এই ধরনের নির্বাচনে যদি বিএনপি যায় সেক্ষেত্রে সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করছে না, কারচুপি করছে এই অজুহাত দেখিয়ে যেকোনো মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে আসারও সুযোগ তৈরি হবে এবং সেটি যদি হয় তাহলে আন্তর্জাতিক মহল বিএনপির পক্ষে থাকবে।

এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনার প্রেক্ষিতে বিএনপি শর্ত সাপেক্ষে নির্বাচনে যেতে পারে এমন সিদ্ধান্তের কথা শোনা যাচ্ছে।

যে শর্তগুলো বিএনপির দিতে পারে। তার মধ্যেঃ

১. বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া।

২. বিএনপি আটক নেতাকর্মীদেরকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়রানি ইত্যাদি বন্ধ করা।

৩. বিএনপির যে সমস্ত নেতা দণ্ডিত হয়েছেন সেই দণ্ডপ্রাপ্ত নেতাদের দণ্ড স্থগিত করা।

৪. নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজানো। নির্বাচন অন্তত ১৫ দিন পিছিয়ে দেওয়া, নির্বাচনে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন নিরপেক্ষ থাকে সেটি নিশ্চিত করা।

৫. নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা সহ আরও বেশ কিছু দাবি।

এই দাবিগুলো নিয়ে ড. মঈন খান বিভিন্ন পশ্চিমা দূতাবাসের সঙ্গে আলাপ করবেন বলে জানা গেছে এবং তারা তাদের মনোভাব জানিয়ে দেবেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা বিএনপির একটি কৌশলগত অবস্থান হতে পারে।

নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং নির্বাচন বানচাল করার জন্য তারা এই ধরনের ঘোষণা দিতে পারেন। এরকমই একটি শঙ্কার কথা গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বলেছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলছেন যে, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা নির্বাচনে আসতে পারে।