তাজনিন নিশাত ঋতু, রাবি ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ , ৩:১০ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ নামে খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভিক্ষুকদের আনাগোনা একটি চিরচেনা দৃশ্য। ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি কোণেই তাদের বিচরণ চোখে পড়ে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এবং রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার এসব ছিন্নমূল মানুষ রাবি ক্যাম্পাসে আসে কিছু উপার্জনের আশায়। শিক্ষার্থীদের হাজারো অভিযোগ পাওয়া যায় ক্যাম্পাসে ভিক্ষাবৃত্তি করতে আসা এসব মানুষদের দিয়ে। তবে সত্যিকার অর্থেই এমন কিছু ছিন্নমূল মানুষ রয়েছেন, যাদের নেই কোনো মাথা গোজার ঠাঁই।
রাবি ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি জায়গা, বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের পরিত্যক্ত রুমে কিংবা ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে এমনই ছিন্নমূল কিছু মানুষকে রাত কাটাতে হচ্ছে, যা সমাজের এক কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরে।
উত্তরের বরফগলা হীমবায়ু উত্তরাঞ্চলের এই ক্যাম্পাসটিতেও রাখে নিষ্ঠুরতার ছাপ। শীতকাল গড় তাপমাত্রা নেমে যায় ৮ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে। শৈত্য প্রবাহের করাল গ্রাস, পর্যাপ্ত পোশাকের অভাব, খোলামেলা পরিবেশে বসবাস সহ নানা প্রতিকূলতা তাদের জীবনে ডেকে আনে অসহনীয় দুর্ভোগ। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাদের নিয়ে কাজ করছে তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান ক্যাম্পাসের ছিন্নমূল এবং বাস্তুহারা এসব মানুষ।
প্রতিদিনকার মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র ভবনের সামনে দেখা হয় ভিক্ষুক লাল মোহাম্মাদের সাথে। তিনি জানান, তার বাড়ি রাজশাহীতেই। পূর্বে মাছের ব্যবসা করতেন ,বর্তমানে বার্ধক্যের কারণে তা আর করতে পারেন না। তার দুইটা ছেলে আর্থিকভাবে সচ্ছল হলেও তার কোনো দায়িত্ব নেয়নি। কথা বলার এক পর্যায়ে অশ্রুসজল চোখে আক্ষেপ নিয়ে বলেন, বাবা, শীতের এই একটা জামা ছাড়া আমার আর কোনো জামা নাই। শীতে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু কিছু করারও তো নাই। আগে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ছেলেমেয়েদের থেকে কিছু সাহায্য পেতাম, এ বছর সেটাও পাইনি।
কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাতের সাথে। তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে তাদের অনেকেই শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য নামমাত্র শীতবস্ত্র প্রদান করে থাকে, যা তাদের প্রয়োজনীয় তুলনায় খুবই নগণ্য। শুধুমাত্র একটা কম্বল দিয়ে কি বা হয় !আমাদের উচিত তাদের টেকসই উন্নয়নের ব্যবস্থা করে দেয়া ।এক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য থাকতে হবে আমরা যেন প্রকৃতপক্ষে যারা সুবিধা বঞ্চিত বা ভিক্ষুক রয়েছে তাদেরকেই সাহায্য করি, কারন অনেক সময় দেখা যায় এমন কিছু ভিক্ষুক রয়েছে যাদের ভিক্ষাবৃত্তি করার প্রয়োজন নেই তবুও তারা করে যাচ্ছে। তাদের এই কাজের ফলে যারা সত্যিকার অর্থে অসহায় এবং সাহায্যের জন্য নির্ভরশীল, তারা প্রয়োজনীয় সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তবে প্রশাসনের কাছে ভিক্ষুকদের কোনো তথ্য সংগ্রহ করা নেই বলে জানান প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান। তিনি বলেন, ভিক্ষুকদের সাহায্য করা বা তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা এই বিষয়গুলো প্রশাসনের এখতিয়ারের মধ্যে নেই। তাই আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করতে পারছি না। যেহেতু বিষয়টা তোমাদের নজরে এসেছে ,তাই আমরা তোমাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে ভিক্ষুকদের সাহায্য সহযোগিতা করার বিষয়টি সমাজসেবা অধিদপ্তরকে অবগত করতে পারি। তারা বিষয়টি বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিবে।