মারুফ হাসান, রাবি প্রতিনিধি: ২৫ মে ২০২৪ , ৬:১৬ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি: বাস্তবতা ও করণীয় বিষয়ক সেমিনারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম তার বক্তব্যে এ কথা বলেন। শনিবার (২৫ মে) সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে ‘যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ’ বিষয় অভিযোগ কমিটি’র আয়োজনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় অতিথির বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, বাংলাদেশে অনেক ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে যৌন হয়রানি হচ্ছে। জাতীয় মহিলা পরিষদের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২২ সালে ৭১৫ জন নারীর ধর্ষণের শিকার হয়েছে ও ২২৬ জন নারীর রেপের শিকার হয়েছে। তারা নির্যাতিত হওয়ার পর সমাজে তাদেরকে হেয় করা হয়েছে। শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রে নয় ছেলেরাও হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। বিভিন্ন তথ্যে উঠে এসেছে যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলছে তা নিয়ে তারা কোথাও কোনো অভিযোগ করতে পারছে না। শিক্ষক কর্তৃক অনেক শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির শিকার হলেও তারা অভিযোগ করতে পারেনা। এই পৃথিবীটা অনেক খারাপ জায়গা বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। যতই আপনজন হোক না কেন মেয়েদেরকে যৌন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। নারীদেরকে একটা প্লাটফর্ম নিশ্চিত করতেই হবে যেখানে নারীরা তাদের কথা বলতে পারবে ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে।
বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য(প্রশাসন)অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, একজন মানুষ যখন তার শুভ চিন্তা গুলো হারিয়ে ফেলে তখন তার মানসিক রোগ হয়, মানসিক সমস্যা হয়। তখন সে তার যৌক্তিক কারণে এ অপরাধগুলো করে। তবে এটা ঘটে যেতে থাকলে ভবিষ্যতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা দেখি সমাজ যদি কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে তা আইনের আওতায় আনা হয়। কিন্তু তাকে সচেতন করার যে প্রবণতা তা হয় না। আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তির আওতায় আসুক তবে তাকে সচেতনতা করার পর। তার পরেও যদি তারা অপরাধ করে তাকে সুষ্ঠুভাবে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা উচিৎ। এমনকি সে হতে পারে পুরুষ, নারী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী অথবা কর্মচারী সহ যে কেউ।
নির্যাতিতদের উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, তবে আমরা যেন তা গোপন না করি। কারণ সত্য গোপন করলে এগুলো বিচারহীনতার আওতায় চলে যায়। সকলের দায়িত্ব থাকবে অপরাদিকে শাস্তির আওতায় আনা এবং কিভাবে এ অপরাধ থেকে দূরে থাকবে তাকে সেদিকে পরিচালিত করা।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. তানজিম জোহরা হাবিব বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষক দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে আবার তাদের সহপাঠী দ্বারাও হতে পারে।আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যৌন হয়রানির ঘটনার তুলনায় অভিযোগ কম আসে।এই বিষয়ে আমাদের বিচার চাওয়ার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। যার ফলে অনেক ঘটনা আমাদের আড়ালেই থেকে যায়। তিনি তার বক্তব্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের কার্যক্রম তুলে ধরেন। এই বিষয়ে একটি অভিযোগ বক্স করা হয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের নাম পরিচয় ছাড়া অভিযোগপত্র জমা দিতে পারবে এবং আমরা কিছুদিন পর পর খুলে দেখি কোনো অভিযোগপত্র জমা পড়েছে কিনা।আমরা হল গুলোতে এধরণের সেমিনার আয়োজন করার পরিকল্পনা করেছি। যদি সেখানে এমন সেমিনার আয়োজন করা যায় তাহলে যৌন হয়রানির অপরাধের মাত্র আরও কমিয়ে আনা সম্ভব। আমরা ইতিমধ্যে সাতটি হলে আয়োজন করার পরিকল্পনা করেছি।
সদস্য সচিব সহযোগী অধ্যাপক ড. রনক জাহান (ফার্মেসি) এর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে আরও বক্তব্য দেন জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রণব কুমার পান্ডে, সাবেক সদস্য ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারী সহ দেড় শতাধিক মানুষ এ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।